বাইডেনের সঙ্গে জর্ডানের বাদশাহের বৈঠক, স্থায়ী যুদ্ধবিরতির দাবি
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আব্দুল্লাহ বিন আল-হুসাইন। স্থানীয় সময় সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউসে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
এই বৈঠকে গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়েছেন তিনি। একইসঙ্গে গাজার রাফাহ শহরে ইসরায়েলের সামরিক অভিযান আরেকটি মানবিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি করবে বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে আলোচনার পর চলমান গাজা যুদ্ধের অবসান ঘটানোর জন্য পূর্ণ যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আব্দুল্লাহ। যদিও হামাসকে পরাজিত করতে ইসরায়েলকে সময় দেওয়ার জন্য ছয় সপ্তাহের বিরতি চাইছেন জো বাইডেন।
হোয়াইট হাউসে বক্তৃতাকালে এই দুই নেতার উভয়েই গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফাহতে ইসরায়েলি স্থল অভিযানের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। মূলত ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে এই শহরটিতে দশ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি আটকা পড়েছেন।
জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আমরা রাফাহতে ইসরায়েলি আক্রমণ সহ্য করতে পারি না। এটি যে আরেকটি মানবিক বিপর্যয় তৈরি করবে, তা নিশ্চিত।’
গত বছরের ৭ অক্টোবর শুরু হওয়া ইসরায়েলি আগ্রাসনের অবসান ঘটাতে পূর্ণ যুদ্ধবিরতির জন্যও চাপ দেন বাদশাহ আব্দুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘আমরা কেবল পাশে দাঁড়িয়ে থেকে এটি চলতে দিতে পারি না। আমাদের এখন একটি দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধবিরতি দরকার -- এই যুদ্ধ অবশ্যই শেষ হওয়া উচিত।’
গত অক্টোবর থেকে গাজা ভূখণ্ডে অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। টানা চার মাসেরও বেশি সময় ধরে চালানো এই হামলায় এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ২৮ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। বর্বর এই আগ্রাসনের জেরে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে বাড়ছে ক্ষোভ। একইসঙ্গে বাড়ছে যুদ্ধবিরতি কার্যকরের দাবিও।
এএফপি বলছে, গাজায় পূর্ণ যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাতে ক্রমাগতভাবে অস্বীকার করে যুক্তরাষ্ট্র তার মধ্যপ্রাচ্যের কিছু মিত্র দেশকে ক্ষুব্ধ করেছে। ওয়াশিংটন বলেছে, হামাসকে পরাজিত করার জন্য ইসরায়েলের অভিযানকে তারা সমর্থন করে। এছাড়া যুদ্ধবিরতির পরিবর্তে বন্দি মুক্তির চুক্তির সাথে কেবল সংক্ষিপ্ত সংঘাত-বিরতির আহ্বান জানিয়ে চলেছে যুক্তরাষ্ট্র।
চলতি বছরের নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদে পুনর্নির্বাচিত হতে চাইছেন জো বাইডেন। আর এই কারণে সম্প্রতি তিনি গাজায় বেসামরিক হতাহতের বিষয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে শুরু করেছেন। গত সপ্তাহে তিনি বলেন, গাজায় ইসরায়েলের আক্রমণ ‘অতিরিক্ত’ হয়েছে।
আর এবার এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট স্বীকার করে নিয়েছেন যে, গাজায় নিহতদের মধ্যে ফিলিস্তিনি নিরীহ বেসামরিক নাগরিকের সংখ্যা ‘অনেক বেশি’ রয়েছে।
হোয়াইট হাউসে জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আব্দুল্লাহর সাথে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে সোমবার প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, ‘এই সংঘাতে নিহত ২৭ হাজার ফিলিস্তিনির মধ্যে অনেক নিরপরাধ বেসামরিক নাগরিক রয়েছেন, যাদের মধ্যে হাজার হাজার শিশুও রয়েছে।’
তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, লাখ লাখ মানুষ খাদ্য, পানীয় বা অন্যান্য মৌলিক প্রয়োজনগুলো পূরণ করতে পারছে না এবং অনেক পরিবার কেবল একজনকে নয়, অনেক আত্মীয়কে হারিয়েছে। এটি হৃদয়বিদারক।’
আরও পড়ুন
বাইডেন আরও বলেন, ‘গাজায় হারিয়ে যাওয়া প্রতিটি নিরপরাধ জীবন এক একটি ট্র্যাজেডি। ইসরায়েলে হারিয়ে যাওয়া প্রতিটি নিরপরাধ জীবনও এক একটি ট্র্যাজেডি। ইসরায়েলি এবং ফিলিস্তিনিদের যারা নিহত হয়েছেন, আমরা তাদের উভয়ের জন্য এবং শোকার্ত পরিবারের সবার জন্য আমরা প্রার্থনা করি।’
তিনি বলেন, ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাসের মধ্যে বন্দি বিনিময় চুক্তির বিষয়ে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র। এই চুক্তি ‘অন্তত ছয় সপ্তাহ সময়ের জন্য গাজায় টেকসই ও সবার জন্য ভালো সময় নিয়ে আসবে। পরে এটি হয়তো আমরা আরও কিছু সময় স্থায়ী করতে পারি।’
পূর্ববর্তী মার্কিন আহ্বানের পুনর্ব্যক্ত করে বাইডেন বলেন, ‘রাফাহতে আশ্রয় নেওয়া ১০ লাখেরও বেশি লোকের নিরাপত্তা ও সহায়তা নিশ্চিত করার জন্য বিশ্বাসযোগ্য কোনও পরিকল্পনা ছাড়া সেখানে বড় সামরিক অভিযান চালানো উচিত নয়।’
টিএম