পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর সরকার গঠন করা নিয়ে তীব্র রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। এর মাঝেই দেশটিতে একের পর এক নেতা রাজনীতি ও দলীয় প্রধানের পদ ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। সোমবার দেশটির অন্তত তিনটি রাজনৈতিক দলের প্রধানের পদের পাশাপাশি রাজনীতিও ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিন নেতা।

দেশটির সংবাদমাধ্যম ডনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের রাজনীতিতে তুমুল নাটকীয়তার মাঝে দলের চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন ইস্তেহকাম-ই-পাকিস্তান পার্টির (আইপিপি) প্রধান পৃষ্ঠপোষক জাহাঙ্গীর তারিন। এমনকি তিনি আর রাজনীতি করবেন না বলেও ঘোষণা দিয়েছেন।

এআরওয়াই নিউজ বলছে, ইস্তেহকাম-ই-পাকিস্তান পার্টির (আইপিপি) প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারপারসন জাহাঙ্গীর খান তারিন রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। দেশের সবচেয়ে ধনী শিল্পপতিদের একজন তারিন ২০১১ সালে পিটিআইতে যোগ দেন এবং দলটির সাধারণ সম্পাদক হন। পিটিআইয়ের ২০১৮ সালের নির্বাচনী সাফল্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন তিনি।

তারিনকে পিটিআই নেতা ইমরান খানের নিকটতম সহযোগীদের অন্যতম হিসেবে বিবেচনা করা হতো। ২০২৩ সালে ইমরান খান দল থেকে বেরিয়ে যান তিনি। পরে ওই বছরের জুনে নিজের রাজনৈতিক দল আইপিপি গঠন করেন তিনি। গত বছরের ৯ মের সহিংসতার পর পিটিআই থেকে সরে আসা অনেক রাজনীতিবিদ আইপিপিতে যোগ দেন।

ইস্তেহকাম-ই-পাকিস্তান পার্টির এবারের জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে মাত্র দুটি আসনে জয় পেয়েছে; যার মধ্যে একটি আসনের ফল নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক চলছে। পিটিআই ওই আসনের ফলাফল পুনরায় গণনা এবং পর্যালোচনার আবেদন করেছে।

এদিকে, নির্বাচনে প্রত্যাশা অনুযায়ী ফল না পাওয়ায় দলীয় প্রধানের পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন পাকিস্তানের ধর্ম-ভিত্তিক রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামির (জেআই) নেতা সিরাজুল হক। দেশটির এবারের জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে একটি আসনেও জয় পায়নি দলটির প্রার্থীরা। তবে প্রাদেশিক পরিষদের পাঁচটি আসনে জয় পেয়েছে জামায়াত।

জামায়াতে ইসলামির কেন্দ্রীয় তথ্য সম্পাদক কায়সার শরিফ দলটির প্রধানের পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। নির্বাচনে হতাশাজনক ফলের কারণে তিনি পদত্যাগ করেছেন বলে জানিয়েছেন।

এ ছাড়া পাকিস্তানের আরেক রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ পার্লামেন্টারিয়ানসের (পিটিআই-পি) প্রধান পারভেজ খাত্তাকও রাজনীতি ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি দলের নতুন চেয়ারম্যান নির্বাচিত করার জন্য পিটিআই-পির কার্যনির্বাহী কমিটির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

এক বিবৃতিতে খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের সাবেক এই মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, তিনি নির্বাচনী পরাজয় মেনে নিয়েছেন এবং তার দল শিগগিরই ভবিষ্যৎ নেতা নির্বাচনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠক ডাকবে।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনের পর পাকিস্তানে সরকার গঠন করা নিয়ে ব্যাপক রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। নির্বাচনে কোনও দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় দেশটিতে জোট সরকার গঠনে দলগুলোর মাঝে ব্যাপক দর কষাকষি চলছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের রাজনৈতিক দল পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) ও পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) মাঝে জোট সরকার গঠনের আলোচনা হলেও এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি দল দুটি।

নির্বাচনের তিনদিন পর পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচন কমিশন চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করেছে রোববার। নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী, বৃহস্পতিবারের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ১০১টি আসন জিতেছেন। যার মধ্যে ৯৬টি আসনে জিতেছেন ইমরান খানের পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। অন্যদিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) ৭৫টি আসনে জয় পেয়েছে।

এ ছাড়া প্রয়াত সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর ছেলে বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির পাকিস্তান পিপলস পার্টি ৫৪টি আসনে জয় পেয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। করাচি-ভিত্তিক দল মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট (এমকিউএম) ১৭টি আসন জিতেছে।

পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের ২৬৬টি আসনে গত ৮ ফেব্রুয়ারি ভোট অনুষ্ঠিত হয় এবং সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের জন্য কোনও দল বা জোটকে ১৩৪টি আসন পেতে হবে। একজন প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে খাইবার-পাখতুনখাওয়া প্রদেশের একটি আসনের ভোট বাতিল করা হয়েছে এবং পাঞ্জাবের অন্য একটি আসনের ফলাফল স্থগিত করা হয়েছে।

কোনও দলই সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় দেশটিতে সরকার গঠনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলো জোট গঠনে মরিয়া প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির সাথে জোট করাই পিএমএল-এনের প্রথম বিকল্প। কিন্তু পিপিপি জোট সরকার গঠনের ক্ষেত্রে পিএমএল-এনের কাছে প্রধানমন্ত্রীর পদ দাবি করেছে।

এসএস