পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় ফলাফলে এগিয়ে থাকা দলগুলোর জোট সরকার গঠনের বিষয়ে তুমুল দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের রাজনৈতিক দল পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) জোট সরকার গঠনের দৌড়ে পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) সাথে ব্যাপক দর কষাকষি শুরু করেছে। পিপিপির পক্ষ থেকে নওয়াজের দলের সাথে জোট সরকার গঠনের বিনিময়ে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়াও আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় দেওয়ার শর্ত দেওয়া হয়েছে।

রোববার নওয়াজের দলের একাধিক সূত্র দেশটির সংবাদমাধ্যম দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনালকে এই তথ্য জানিয়েছে। কিন্তু দেশটির আরেক সংবাদমাধ্যম এআরওয়াই নিউজ পিপিপি ও পিএমএল-এনের সূত্রের বরাত দিয়ে বলেছে, দুই দলের নেতাদের বৈঠকে পিপিপিকে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট, জাতীয় পরিষদের স্পিকার ও সিনেটের চেয়ারম্যান পদ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে পিএমএল-এন।

কিন্তু পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) চেয়ারম্যান ও ছেলে বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারিকে প্রধানমন্ত্রী বানানোর শর্তে পিএমএল-এনের সাথে পিপিপি সমঝোতায় রাজি আছে বলে জানিয়েছেন দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি। তিনি বলেছেন, পিপিপির এই প্রস্তাব মেনে নেওয়া হলে পিএমএল-এনকে কেন্দ্রীয় ও পাঞ্জাবের প্রাদেশিক সরকার গঠনে পিপিপি সমর্থন জানানো হবে। 

পাকিস্তানের গত ৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে কোনও দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় জোট সরকার গঠনের বিষয়ে পাকিস্তান পিপলস পার্টি ও পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজের নেতাদের মাঝে বৈঠকে এসব প্রস্তাব উঠেছে। বৈঠকের সূত্র এআরওয়াই নিউজকে বলেছে, কেন্দ্র ও পাঞ্জাবে সরকার গঠনে সমর্থন পেতে পিপিপিকে তিনটি সাংবিধানিক পদের প্রস্তাব দিয়েছে পিএমএল-এন। পিপিপিকে প্রেসিডেন্ট, জাতীয় পরিষদের স্পিকার ও সিনেট চেয়ারম্যান পদের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

এর বিনিময়ে পিএমএল-এনও বিলাওয়ালের নেতৃত্বাধীন দলকে বেলুচিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী পদে সমর্থন জানানোর বিষয়ে রাজি হয়েছে। পিএমএল-এন পিপিপিকে পাঞ্জাবের উপমুখ্যমন্ত্রী ও কয়েকটি জ্যেষ্ঠ মন্ত্রীর পদ দেওয়ার প্রস্তাবও করেছে বলে বৈঠকের সূত্র জানিয়েছে। উভয় দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যদের বৈঠকের পর উভয়পক্ষই এই বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে রাজি হয়েছে।

এর আগে, সিন্ধুর সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মুরাদ আলি শাহ জোর দিয়ে বলেছিলেন, পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি (সিইসি) কেন্দ্রে সরকার গঠনে একটি রাজনৈতিক দলের সাথে জোটবদ্ধ হওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।

নির্বাচনের তিনদিন পর পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচন কমিশন চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করেছে রোববার। নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী, বৃহস্পতিবারের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ১০১টি আসন জিতেছেন। যার মধ্যে ৯৬টি আসনে জিতেছেন ইমরান খানের পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। অন্যদিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) ৭৫টি আসনে জয় পেয়েছে।

এ ছাড়া প্রয়াত সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর ছেলে বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির পাকিস্তান পিপলস পার্টি ৫৪টি আসনে জয় পেয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। করাচি-ভিত্তিক দল মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট (এমকিউএম) ১৭টি আসন জিতেছে।

পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের ২৬৬টি আসনে গত ৮ ফেব্রুয়ারি ভোট অনুষ্ঠিত হয় এবং সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের জন্য কোনও দল বা জোটকে ১৩৪টি আসন পেতে হবে। একজন প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে খাইবার-পাখতুনখাওয়া প্রদেশের একটি আসনের ভোট বাতিল করা হয়েছে এবং পাঞ্জাবের অন্য একটি আসনের ফলাফল স্থগিত করা হয়েছে।

কোনও দলই সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় দেশটিতে সরকার গঠনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলো জোট গঠনে মরিয়া প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির সাথে জোট করাই পিএমএল-এনের প্রথম বিকল্প। কিন্তু পিপিপি জোট সরকার গঠনের ক্ষেত্রে পিএমএল-এনের কাছে প্রধানমন্ত্রীর পদ দাবি করেছে।

এসএস