ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফাহর সব বাসিন্দাকে সরাতে চান ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীকে (আইডিএফ) শিগগিরই এ সংক্রান্ত একটি পরিকল্পনা করার নির্দেশও দিয়েছেন তিনি।

শুক্রবার এক বিবৃতিতে আইডিএফ নিশ্চিত করেছে এ তথ্য। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা শিগগিরই গাজায় বড় আকারের অভিযান পরিচালনা করতে যাচ্ছি এবং সেই অভিযানে বেসামরিক লোকজন হতাহতের ঘটনা এড়াতে চাইছি। এ কারণেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী (বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু) এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় রাফাহ থেকে বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের সরাতে চাইছে এবং আইডিএফকে এ সংক্রান্ত একটি পরিকল্পনা প্রণয়নের নির্দেশ দিয়েছে।’

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফায় বসবাস করেন ১৩ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি। তবে ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় অভিযান শুরুর পর তাদের একটি বড় অংশই নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন।

যে অল্পসংখ্যক ফিলিস্তিনি রাফায় এখন রয়েছেন, এবার তাদেরও সরানোর পরিকল্পনা করছে ইসরায়েল।

গত বৃহস্পতিবার অবশ্য এক ভাষণে নেতানিয়াহু বলেছিলেন, ‘হামাসের সর্বশেষ ঘাঁটি হলো রাফাহ। শিগগিরই সেখানে ইসরায়েলি অভিযান শুরু করবে।’

আইডিএফের এক কর্মকর্তা মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে জানিয়েছেন, হামাসের অন্তত ৪টি ব্যাটেলিয়ান আত্মগোপন করে আছে।

ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের এই অভিযানের মিশন হামাসকে সম্পূর্ণ নির্মূল করা। রাফায় (হামাসের) ৪টি ব্যাটেলিয়ানের সঙ্গে মোকাবিলা না করে এই মিশন শেষ করা সম্ভব নয়।’

গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা গাজার উত্তরাঞ্চলীয় ইরেজ সীমান্তে অতর্কিত হামলা চালিয়ে ১ হাজার ২০০ জন মানুষকে হত্যার পাশাপাশি ২৪০ জন ইসরায়েলি ও বিদেশি নাগরিককে ধরেও নিয়ে যায়। অভূতপূর্ব সেই হামলার পর সেদিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী।

চার মাস ধরে চলমান সেই অভিযানের শুরু থেকে এ পর্যন্ত গাজায় নিহত হয়েছেন ২৭ হাজারেরও বেশি মানুষ, আহত হয়েছেন আরও প্রায় ৬৮ হাজার। এছাড়া ইসরায়েলি বাহিনীর গোলায় বাড়িঘর হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন আরও লাখ লাখ ফিলিস্তিনি।

যুক্তরাষ্ট্র, কাতার, ও মিসরের নিরলস চেষ্টায় গত ২৫ নভেম্বর থেকে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৭ দিনের অস্থায়ী বিরতি চুক্তি হয়েছিল হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে। সেই ৭ দিনে নিজেদের কব্জায় থাকায় জিম্মিদের মধ্যে ১০৮ জনকে মুক্তি দিয়েছিল হামাস। পাল্টায় ইসরায়েলের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনিদের মধ্যে দেড়শ’রও বেশি মানুষকে মুক্তি দিয়েছিল ইসরায়েলও।

হিসেব অনুযায়ী, হামাসের কব্জায় এখনও ১৩২ জন জিম্মি রয়েছে।

প্রসঙ্গত, এই রাফাহ শহরের কাছেই অবস্থিত গাজা ও মিসরের সিনাই অঞ্চলের সীমান্তপথ রাফাহ ক্রসিং। এই সীমান্তপথটি গাজার বাসিন্দাদের ‘লাইফ লাইন’ নামেও পরিচিত। কারণ গাজা উপত্যকায় বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের জন্য জাতিসংঘ্য ও অন্যান্য দাতাগোষ্ঠীগুলোর ত্রাণ ও সহায়তা পণ্য গাজায় পৌঁছায় এই সীমান্তপথ দিয়েই।

সূত্র : সিএনএন

এসএমডব্লিউ