মিয়ানমারে ২ বিদ্রোহী যোদ্ধাকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মিয়ানমারে জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সামরিক বাহিনীর সংঘর্ষ ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। সংঘর্ষ প্রকট আকার ধারণ করার পাশাপাশি ঘটছে প্রাণহানির ঘটনাও।
এমন অবস্থায় দেশটিতে ২ বিদ্রোহী যোদ্ধাকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগ সামনে এসেছে। যদিও এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা প্রায় তিন মাস আগে ঘটেছে এবং চলতি সপ্তাহে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর এটি সামনে আসে।
বিজ্ঞাপন
বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম দ্য ইরাবতী।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ম্যাগওয়ে অঞ্চলের একটি গ্রামে জান্তাবিরোধী ২ যোদ্ধাকে আগুনে পুড়িয়ে জনসমক্ষে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। নিহত ওই দুই যোদ্ধার বয়স ২০ বছরের বেশি এবং প্রায় তিন মাস আগে ঘটে যাওয়া অপরাধের একটি ভিডিও গত মঙ্গলবার সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করা হয়।
এরপরই সেখানে ছড়িয়ে পড়েছে ভিডিওটি। মূলত মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের নামে গাছে ঝুলিয়ে তাদের জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়।
ইরাবতী বলছে, জান্তাবিরোধী দুই যোদ্ধাকে হত্যার ভিডিওটি প্রথমে স্থানীয় দুটি মিডিয়া আউটলেট সামনে আনে। রেজিস্ট্যান্স গ্রুপ ইয়াও ডিফেন্স ফোর্স (ওয়াইডিএফ) বলেছে, জান্তা সৈন্য এবং পিউ স এইচটি নামের একটি মিত্র মিলিশিয়া বাহিনীর সদস্যরা গাঙ্গাও শহরের মায়াউক খিন ইয়ান গ্রামে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, দুই ব্যক্তিকে স্বীকার করতে বাধ্য করা হচ্ছে যে- তারা স্থানীয় জনপ্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্য। জান্তা সৈন্যরা ওই দুই ব্যক্তিকে নিজেদেরকে ‘কুকুর’ হিসাবে উল্লেখ করতেও বাধ্য করে। এসময় কয়েকজনকে ইউনিফর্ম পরিহিত অবস্থায় এবং অন্যদের বেসামরিক পোশাকে তাদের চারপাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
মূলত জান্তা সৈন্যদের বোঝাতে অনেক বেসামরিক ব্যক্তি ‘সামরিক কুকুর’ শব্দটি ব্যবহার করে থাকেন।
এছাড়া জীবন্ত পুড়িয়ে মারার আগে ওই দুই ব্যক্তিকে নির্যাতন করা হয়েছে বলে দেখা গেছে ভিডিওটিতে। হত্যার আগে তাদের গুরুতর জখম অবস্থায় দেখা যায়। একপর্যায়ে হাত-পা লোহার শিকল দিয়ে বাঁধা অবস্থায় তাদের গাছের দিকে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়।
এরপর নিজেদেরকে ‘কুকুর’ বলতে বাধ্য হওয়ার পর তাদের একটি গাছে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। এরপর তাদের ওপর জ্বালানি তেল ঢেলে দেওয়া হয় এবং তারপর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। সামনে উপস্থিত সকলের সামনেই তাদের জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়।
এই এই হত্যাকাণ্ড সরাসরি দেখার জন্য গ্রামের প্রতিটি পরিবারের একজন করে সদস্যকে সেখানে পাঠানোর জন্য বলা হয়েছিল বলে ওয়াইডিএফ জানিয়েছে। তবে ইরাবতী এই দাবিটি স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি।
এদিকে নিহত ওই দুই ব্যক্তিকে ফয়ে টে এবং থার হতাং নামে চিহ্নিত করেছে ওয়াইডিএফ। তারা বলেছে, তারা ওয়াইডিএফের সদস্য এবং গত বছরের ৭ নভেম্বর মায়াউক খিন ইয়ান গ্রামে অভিযানের সময় জান্তা বাহিনী এবং পিউ স এইচটি সদস্যরা তাদের গ্রেপ্তার করে।
ওয়াইডিএফ বলেছে, ওই দুই ব্যক্তিকে ‘জনসমক্ষে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছে। এর আগে, তাদের দফায় দফায় নির্যাতন করা হয়েছিল’।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলে নেয় মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। এরপর থেকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবিতে ব্যাপকভাবে সহিংস বিক্ষোভের সাক্ষী হয়ে আসছে মিয়ানমার।
আর রাখাইন প্রদেশসহ দেশটির অন্যান্য অনেক অঞ্চলে গত বছরের অক্টোবর থেকে সশস্ত্র জাতিগোষ্ঠী এবং মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর মধ্যে তীব্র লড়াই দেখা গেছে। এছাড়া মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর জোট ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের সদস্য আরাকান আর্মি গত বছরের ২৭ অক্টোবর দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় শান রাজ্যে জান্তাবিরোধী অভিযান অপারেশন-১০২৭ শুরু করে। জোটটি ইতিমধ্যে শান রাজ্যের বেশিরভাগ এলাকা দখল নিয়েছে; যার মধ্যে প্রায় ২০টি শহর এবং চীন লাগোয়া গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য পথও রয়েছে।
আর গত বছরের ১৩ নভেম্বর থেকে উত্তর রাখাইন ও প্রতিবেশী দক্ষিণ চিন রাজ্যের পালেতওয়া শহরজুড়েও জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে হামলা চালিয়ে আসছে দেশটির এই বিদ্রোহী গোষ্ঠী। আরাকান আর্মি বলেছে, রাখাইনের রাজধানী সিত্তের কাছের পাউকতাও শহর এবং পুরো পালেতওয়াসহ অন্যান্য এলাকায় মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর অন্তত ১৭০টি অবস্থান দখল করেছে তাদের যোদ্ধারা।
টিএম