গাজায় যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত হামাসের সর্বশেষ প্রস্তাব বাতিল করে দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। বুধবার তেল আবিবে এক সংবাদ সম্মেলনে এই প্রস্তাবকে ‘বাস্তবতা বিবর্জিত’ বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে নেতানিয়াহু বলেন, ‘হামাসের প্রস্তাব উদ্ভট, বাস্তবতা বিবর্জিত। এই প্রস্তাব মেনে নেওয়ার অর্থ হলো হামাসকে পরবর্তী হামলার প্রস্তুতির জন্য সময় দেওয়া। এই মুহূর্তে (হামাসের বিরুদ্ধে) সম্পূর্ণ ও চুড়ান্ত বিজয় ছাড়া আমাদের সামনে আর কোনো কার্যকর সমাধান নেই।’

নেতানিয়াহুর এই বক্তব্যের পর হামাসের অন্যতম মুখপাত্র সামি আবু জুহরি বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘এটা আসলে তার (নেতানিয়াহু) একপ্রকার রাজনৈতিক স্টান্টবাজি। নিজের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের স্বার্থে তিনি সংঘাত জিইয়ে রাখতে চান।’

গত সপ্তাহে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে যুক্তরাষ্ট্র, মিসর, ইসরায়েলের গোয়েন্দা প্রধান এবং কাতারের প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে বসেন। সেখানে গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা করেন তারা। ওই আলোচনায় গাজায় ইসরায়েলের হামলা বন্ধ এবং জিম্মিদের মুক্তির একটি প্রস্তাবের কাঠামো তৈরি হয়। পরে সেটি পাঠানো হয় হামাসের কাছে।

সেই কাঠামো পর্যালোচনা করে গতকাল মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) একটি পাল্টা প্রস্তাব দিয়েছে হামাস। যদিও এই প্রস্তাবটি গোপন রাখার কথা ছিল, কিন্তু এটি ফাঁস হয়ে গেছে।

ফাঁস হওয়া সেই প্রস্তাবটি বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, গাজায় তিন স্তরের যুদ্ধ বিরতি চায় হামাস। প্রথম স্তরে সব ইসরায়েলি নারী জিম্মি, ১৯ এবং তার চেয়ে কম বয়সী পুরুষ, দুর্বল-অসুস্থ জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হবে; তার বিনিময়ে ইসরায়েলের কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনি নারী ও শিশুদের মুক্তি দিতে হবে।

দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্তরে বাকি জিম্মি ও বন্দিদের বিনিময় হবে এবং এর মধ্যেই গাজার বিভিন্ন এলাকা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া শুরু হবে; সেই সঙ্গে গাজার হাসপাতাল ও জরুরি পরিষেবা কেন্দ্রগুলোর পুনঃনির্মাণের কাজও এগিয়ে চলবে।

গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা গাজার উত্তরাঞ্চলীয় ইরেজ সীমান্তে অতর্কিত হামলা চালিয়ে ১ হাজার ২০০ জন মানুষকে হত্যার পাশাপাশি ২৪০ জন ইসরায়েলি ও বিদেশি নাগরিককে ধরেও নিয়ে যায়। অভূতপূর্ব সেই হামলার পর সেদিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী।

চার মাস ধরে চলমান সেই অভিযানের শুরু থেকে এ পর্যন্ত গাজায় নিহত হয়েছেন ২৭ হাজারেরও বেশি মানুষ, আহত হয়েছেন আরও প্রায় ৬৮ হাজার। এছাড়া ইসরায়েলি বাহিনীর গোলায় বাড়িঘর হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন আরও লাখ লাখ ফিলিস্তিনি।

যুক্তরাষ্ট্র, কাতার, ও মিসরের নিরলস চেষ্টায় গত ২৫ নভেম্বর থেকে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৭ দিনের অস্থায়ী বিরতি চুক্তি হয়েছিল হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে। সেই ৭ দিনে নিজেদের কব্জায় থাকায় জিম্মিদের মধ্যে ১০৮ জনকে মুক্তি দিয়েছিল হামাস। পাল্টায় ইসরায়েলের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনিদের মধ্যে দেড়শ’রও বেশি মানুষকে মুক্তি দিয়েছিল ইসরায়েলও।

হিসেব অনুযায়ী, হামাসের কব্জায় এখনও ১৩২ জন জিম্মি রয়েছে। তাদের ফিরে পেতে ইসরায়েলে ব্যাপক বিক্ষোভ-আন্দোলন শুরু করেছেন জিম্মিদের স্বজনরা। ইসরায়েলের সাধারণ জনগণের একাংশও যোগ দিয়েছেন আন্দোলন কর্মসূচীতে।

সূত্র : বিবিসি

এসএমডব্লিউ