ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে বছর সাতেক আগে বিয়ে হয় রিন্টু শেখ ও বিলুয়ারা বিবির। চার বছর আগে তাদের প্রথম সন্তান জন্মায়, মেয়ে। পরের সন্তানটিও মেয়েই। তিন মাস আগে তৃতীয় বার কন্যার জন্ম দেন বেলুয়ারা। 

এরপর থেকে সংসারে অশান্তি লেগেই ছিল। এরই মধ্যে গতকাল তিন মাসের শিশুটির দেহ রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। 

রিন্টুর বাবার অভিযোগ, তার ছেলেই আছড়ে খুন করেছে ছোট নাতনিকে। এর  সাথে জড়িত পুত্রবধূও। দু’জনের বিরুদ্ধেই থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন তিনি। পুলিশ রিন্টু এবং তার স্ত্রীকে গ্রেপ্তারও করেছে। 

পুলিশ বলছে, প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে জিজ্ঞাসাবাদের মুখে ভেঙে পড়ে সন্তানকে খুনের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন রিন্টু-বেলুয়ারা।  

রিন্টুর প্রতিবেশীদের কেউ কেউ বলছেন, দুই মেয়েকে নানা অজুহাতে মারধর করতেন রিন্টু। কিছু দিন আগে বড় মেয়ের হাত ভেঙে দিয়েছিলেন তিনি। বাবার হাতে মার খেয়ে দীর্ঘদিন শয্যাশায়ী ছিল মেজ মেয়েও। 

গতকালের ঘটনা যেভাবে সামনে এলো 
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকা বলছে, তিন মাসের শিশুটিকে গতকাল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে বাড়ির লোকজন দেখেন, ঘরে লেপের তলায় রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে সে। 

বেলুয়ারা তখন সবাইকে বলতে থাকেন, মেয়েকে খাটে শুইয়ে আমি রান্না করছিলাম। কী হয়েছে, জানি না। 

তবে রিন্টুর বাবা বারবারই বলে আসছিলেন, তৃতীয় বার মেয়ে হওয়ার পর থেকে ছেলে-বৌমার ঝামেলা লেগেই থাকত। ছেলে নিয়মিত নেশা করে। ছেলেই ছোট নাতনিকে খুন করেছে। পুত্রবধূ সব জেনেও ওকে আড়াল করছে। 

কন্যাসন্তান নিয়ে সচেতনতা তৈরি হয়েছে? 
ভারতে নারীর ক্ষমতায়নে কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদির সরকার এবং পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার একগুচ্ছ প্রকল্প নিয়েছে। 

মেয়েদের সার্বিক অগ্রগতির লক্ষ্যে কেন্দ্রের ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’ প্রকল্প রয়েছে। সংসদে এক-তৃতীয়াংশ আসন নারীদের জন্য সংরক্ষণের লক্ষ্যে সংসদে বিল পাস করা হয়েছে সম্প্রতি। নারী উন্নয়নে ‘কন্যাশ্রী’ , ‘রূপশ্রী’ ও ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্প রয়েছে রাজ্য সরকারের। 

বহু নারী স্বনির্ভর গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। সেই গোষ্ঠীগুলোকে কাছে টানতে কেন্দ্রও সক্রিয় হয়েছে সম্প্রতি। কিন্তু এই সব প্রচারের সঙ্গে কন্যাসন্তান নিয়ে সচেতনতা কি সমাজের নিচুতলা পর্যন্ত পৌঁছেছে? 

মুর্শিদাবাদের এ ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখাচ্ছে, বাস্তবতা তা বলছে না।  

এনএফ