ভারতের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা মাছ ধরার তিনটি নৌকায় চড়ে কেন মালদ্বীপের বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চলে (ইইজেড) ঢুকে পড়েছে, সেই বিষয়ে ভারতের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।

ভারতের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা মাছ ধরার তিনটি নৌকায় চড়ে কেন মালদ্বীপের বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চলে (ইইজেড) ঢুকে পড়েছে, সেই বিষয়ে ভারতের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। মালদ্বীপের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের কাছে এই বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে বলে দেশটির সংবাদমাধ্যমের খবরে জানানো হয়েছে।

গত বছরের নভেম্বরে চীনপন্থী নেতা হিসেবে পরিচিত মালদ্বীপের ক্ষমতায় প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু আসার পর দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কে ব্যাপক টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে। এর মাঝেই সর্বশেষ এই ঘটনা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে নতুন উত্তেজনা তৈরি করেছে।

তবে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের মালদ্বীপের ইইজেডে ঢুকে পড়ার অভিযোগের বিষয়ে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

শুক্রবার মালদ্বীপের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে দাবি করা হয়, গত ৩১ জানুয়ারি ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্যরা মালদ্বীপের বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চলের (ইইজেড) ভেতরে মাছ ধরার কাজে নিয়োজিত মালদ্বীপের একটি মাছ ধরার নৌকা আটক করে। মালদ্বীপের হা আলিফু অ্যাটল থেকে ৭২ নটিক্যাল মাইল উত্তর-পূর্বের ধিধধু এলাকায় নৌকা আটকের এই ঘটনা ঘটে।

এতে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি ছাড়াই ভারতীয় সৈন্যরা আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক আইন ও বিধি লঙ্ঘন করে মালদ্বীপের ইইজেডের তিনটি মাছ ধরার নৌকায় চড়ে। এই বিষয়ে মালদ্বীপের সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিকভাবে ভারত সরকারের কাছ থেকে ঘটনার বিস্তারিত ব্যাখ্যা চেয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভারতীয় উপকূলরক্ষী বাহিনীর জাহাজ-২৪৬ ও জাহাজ-২৫৩ এর সদস্যরা মাছ ধরার নৌকাগুলোকে আটক করেছে।

গত বছর মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভারতপন্থি নেতা হিসেবে পরিচিত দেশটির তৎকালীন ক্ষমতাসীন ইব্রাহিম মোহাম্মদ সোলিহকে পরাজিত করে ক্ষমতায় আসেন মুইজ্জু (৪৫)। দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই আনুষ্ঠানিকভাবে আগামী ১৫ মার্চের মধ্যে দেশ থেকে ভারতীয় সামরিক বাহিনীর সদস্যদের প্রত্যাহারের আল্টিমেটাম দেন তিনি। মুইজ্জু বলেছেন, মালদ্বীপের জনগণ তাকে নয়াদিল্লির কাছে এই অনুরোধ করার জন্য ‘‘শক্তিশালী ম্যান্ডেট’’ দিয়েছে।

কিছু দিন আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মালদ্বীপের তিন মন্ত্রীর অবমাননাকর পোস্টের পর থেকে মুইজ্জুর সরকারের সাথে ভারতের কূটনৈতিক সংকটের শুরু হয়।

ভারত মহাসাগরের এই দ্বীপ দেশটিতে বর্তমানে ভারতীয় সামরিক বাহিনীর ৭৭ জন সদস্য রয়েছে। সৈন্যদের পাশাপাশি ভারতের সশস্ত্র বাহিনীর ১২ জন মেডিক্যাল কর্মকর্তাও মালদ্বীপে মোতায়েন রয়েছেন।

নয়াদিল্লি বলছে, মালদ্বীপের প্রত্যন্ত দ্বীপের বাসিন্দাদের মানবিক এবং চিকিৎসা সহায়তা দেওয়ার জন্য সৈন্যরা দেশটিতে অবস্থান করছেন। মালদ্বীপকে ভারত দুটি উড়োজাহাজ ও একটি ডর্নিয়ার বিমান দিয়েছে; যেগুলো বেশিরভাগ সময় সামুদ্রিক নজরদারি, তল্লাশি ও উদ্ধার অভিযান এবং চিকিৎসার কাজে ব্যবহার করা হয়। আর এসব কাজ পুরোপুরি বাস্তবায়ন করেন ভারতীয় সৈন্যরা।

ভারতের প্রথম উড়োজাহাজ এবং ক্রুরা মালদ্বীপে প্রথমবারের মতো কাজ শুরু করে ২০১০ সালে; যখন দেশটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন মোহামেদ নাশিদ।

নয়াদিল্লিতে উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠকের পর মালদ্বীপের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ভারত আগামী ১০ মের মধ্যে মালদ্বীপে তিনটি বিমান চলাচল প্ল্যাটফর্ম পরিচালনাকারী সামরিক কর্মীদের সরিয়ে নিয়ে নতুন বেসামরিক কর্মকর্তা পাঠাবে। আর এই প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ ১০ ​​মার্চের মধ্যে সম্পন্ন হবে। এছাড়া বাকি দুুটি প্ল্যাটফর্মেও আগামী ১০ মের মধ্যে সৈন্যদের ফিরিয়ে নতুন করে নিয়োগ দেওয়া হবে। এই বিষয়ে উভয় দেশ রাজি হয়েছে।

সূত্র: আধাধু, এনডিটিভি।

এসএস