ভারতে লোকসভা ভোটের আগে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বা সিএএ কার্যকর করতে চাইছে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার। সে কারণেই বিতর্কিত সিটিজেনশিপ অ্যামেনমেন্ট অ্যাক্ট (সিএএ) অন্তর্বর্তী বাজেট সেশনে তুলতে চাইছে তারা।

আইনটি আগেই পাস করিয়ে নিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। এবার তার নিয়মাবলি পাস হয়ে গেলেই গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তা চালু করে দেওয়া সম্ভব।

এনআরসি এবং সিএএ নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন হয়েছে ২০১৮-১৯ সালে। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের আগেই এবিষয়ে নিজেদের মতামত জানিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। আসামে এনআরসি-র প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছিল।

এর বিরুদ্ধে রাজধানী দিল্লিসহ একাধিক জায়গায় আন্দোলন শুরু হয়। পশ্চিমবঙ্গসহ একাধিক রাজ্য বিধানসভায় রীতিমতো সিদ্ধান্ত নিয়ে জানিয়ে দেয়, তারা নিজেদের রাজ্যে এনআরসি এবং সিএএ মানবে না।

নাগরিকত্ব আইন একটি কেন্দ্রীয় বিষয়। এর এখতিয়ার সম্পূর্ণ কেন্দ্রের হাতে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানানো হয়েছে, পুরো বিষয়টিই অনলাইন করা হবে। ফলে রাজ্য সরকারগুলো কোনও সমস্যা তৈরি করতে চাইলেও তা শেষপর্যন্ত করতে পারবে না। অনলাইনের সকলে এই আইনের সুযোগ নিতে পারবেন।

কী আছে সিএএ-তে

নাগরিকত্ব আইন স্বাধীন ভারতের পুরোনো আইন। সেই আইনেই বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছে কেন্দ্র। বলা হয়েছে, বাইরে থেকে আসা ব্যক্তিরা সংশোধিত আইনে আগের চেয়ে অনেক দ্রুত নাগরিকত্ব পাবেন। পুরো প্রক্রিয়াটি সাত বছরের মধ্যে সম্পন্ন হবে।

কিন্তু কারা এই সুযোগ পাবেন? সংশোধিত আইনে বলা হয়েছে, ভারতের প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোতে আক্রান্ত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ ভারতে নাগরিক হওয়ার সুযোগ পাবেন। অর্থাৎ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, বাংলাদেশ থেকে আসা হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন এবং শিখদের কথা বলা হয়েছে এখানে।

কিন্তু আক্রান্ত মুসলিমদের কথা বলা হয়নি। কেন মুসলিমদের এই অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হলো তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীদের একটি অংশ। সিএএ-বিরোধী আন্দোলনও শুরু হয়েছিল সে কারণেই।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ অবশ্য বলেছেন, এই আইন নাগরিকত্ব দেওয়ার আইন, কেড়ে নেওয়ার নয়। মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি এবং কেন্দ্রীয় জাহাজ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর সম্প্রতি জানিয়েছেন, ফেব্রুয়ারির মধ্যেই দেশে সিএএ চালু হবে। তার ওই ঘোষণার পরেই রাজ্যজুড়ে বিক্ষিপ্ত অশান্তি শুরু হয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, সিএএ নিয়ে ভোটের রাজনীতি হচ্ছে।

বস্তুত, পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনায় অন্তত দুইটি আসন মতুয়া ভোটের ওপর নির্ভরশীল। এছাড়াও নদীয়ায় মতুয়া ভোটও গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ থেকে আসা উদ্বাস্তু মতুয়া সম্প্রদায়ের অনেকেই এখনও নাগরিক অধিকার পাননি।

পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে ক্রমশই এই মতুয়া ভোট গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তাই ভোটের আগে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ রাজ্যে এসেই প্রথম সিএএ-এর কথা তুলেছিলেন।

ভোটের আগে মমতাও এর বিরোধিতায় সরব হয়েছেন। কারণ, সিএএ চালু হলে মতুয়ারা বিজেপির পাশে থাকবে বলে রাজনৈতিক মহলের একাংশের ধারণা। ইতোমধ্যেই মতুয়া ভোটের একটি বড় অংশ বিজেপির পক্ষে চলে গেছে।

ফলে বাজেট অধিবেশনে এ নিয়ে তীব্র বিতর্ক হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

টিএম