পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান (ফাইল ছবি)

পাকিস্তানের রাজনীতিতে বইছে নির্বাচনের হাওয়া। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে দেশটিতে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আর এর আগে বড় ধরনের শক্তি প্রদর্শনে মাঠে নামছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)।

এর মাধ্যমে গত বছরের ৯ মে দাঙ্গার পর প্রথমবারের মতো বড় শক্তি প্রদর্শন করবে দলটি। রোববার (২৮ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ইমরান খানের আহ্বানে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) মনোনীত প্রার্থীরা এবং কর্মীরা গত বছরের ৯ মের পর প্রথমবারের মতো আজ দেশব্যাপী শক্তি প্রদর্শন করবে।

দলের কেন্দ্রীয় তথ্য সম্পাদক রওফ হাসান ডনের সাথে কথা বলার সময় বলেছেন, ‘আমরা টিকিটধারীদের দুপুর ২টায় তাদের নির্বাচনী এলাকায় সমাবেশ ও জনসভা করার জন্য স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছি। তারা ভোটারদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেবে। একইসঙ্গে এই বার্তা দেবে যে, পিটিআই কাউকে তার স্থান দখল করতে দেবে না।’

দ্য ডন বলছে, নির্বাচনকে সামনে রেখে রোববার দলটি তার ১৫৮-পৃষ্ঠার ইশতেহারও প্রকাশ করবে। এতে পাকিস্তানের বর্তমান সমস্ত প্রধান ইস্যুকে কভার করা হবে বলেও দলের নেতা ফিরদৌস শামীম নকভি প্রার্থীদের ভার্চুয়াল কনভেনশনে বলেছেন।

এর আগে এই সপ্তাহের শুরুতে প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ইমরান খান রোববার (আজ) সারাদেশে সমস্ত টিকিটধারীদের (মনোনীত প্রার্থীদের) রাজপথে নামতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে সেসময় বলেন, যারা সমাবেশ করবে না তাদের টিকিট (মনোনয়ন) বাতিল করা হবে।

পরে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বোনও গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং গণমাধ্যমের মাধ্যমে দলীয় কর্মী ও টিকিটধারীদের কাছে বার্তা পৌঁছে দেন।

অবশ্য মাঠে নামার এই ঘোষণা বেশ কয়েকজন প্রার্থীর মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। কারণ তারা তাদের গ্রেপ্তার এড়াতে ইতোমধ্যেই বিভিন্ন স্থানে লুকিয়ে আছেন। রোববার (আজ) বাইরে বের হওয়ার পর তাদের বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হবে বলেও আশঙ্কা করছেন তারা।

তবে তথ্য সম্পাদক রওফ হাসান বলেন, গ্রেপ্তারের ভয় ছাড়াই সারাদেশে সমাবেশ করার জন্য সকল পর্যায়ের নেতৃত্বকে বার্তা দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘তাদের গ্রেপ্তার করা হতে পারে তবে আমরা বিশ্বাস করি, এটি তাদের নির্বাচনী প্রচারে প্রভাব ফেলবে না। প্রকৃতপক্ষে, তারা আরও বেশি ভোট পেতে পারেন। কারণ ভোটাররা পিটিআই-এর সাথে কী ঘটছে তা পর্যবেক্ষণ করবে। আমরা সেই বিষয়ে একটি ভিডিও বার্তাও প্রকাশ করেছি।’

উল্লেখ্য, দুর্নীতির মামলায় গত বছরের ৯ মে ইসলামাবাদ হাইকোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে নাটকীয়ভাবে গ্রেপ্তার করা হয় ইমরান খানকে। তার সেই গ্রেপ্তার পারমাণবিক অস্ত্রধারী এই দেশে মারাত্মক অস্থিরতা সৃষ্টি করে। আধাসামরিক বাহিনী রেঞ্জার্স ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের ফলে পাকিস্তানে যে অস্থিরতা শুরু হয় তা টানা চারদিন অব্যাহত ছিল এবং এতে কমপক্ষে ১০ বিক্ষোভকারীর মৃত্যু ও বহু সামরিক ও রাষ্ট্রীয় স্থাপনা ধ্বংস হয়ে যায়।

এছাড়া পাকিস্তানের ইতিহাসে সেবারই প্রথমবারের মতো বিক্ষোভকারীরা ব্যারিকেড ভেঙে রাওয়ালপিন্ডিতে দেশটির সেনা সদর দপ্তরে (জিএইচকিউ) প্রবেশ করে এবং লাহোরে কর্পস কমান্ডারের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। পরে সামরিক বাহিনী ৯ মেকে ‘কালো দিবস’ হিসেবে অভিহিত করে এবং সেনা আইনের অধীনে বিক্ষোভকারীদের বিচার করার সিদ্ধান্ত নেয়।

পরে শীর্ষ আদালতের হস্তক্ষেপে ইমরান কারাগার থেকে মুক্তি পলেও তার দল পিটিআইয়ের ওপর নেমে আসে ব্যাপক দমন-পীড়ন। সহিংসতা এবং সামরিক স্থাপনায় হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে শত শত পিটিআই কর্মী এবং সিনিয়র নেতাদের কারাগারে বন্দি করা হয়।

এমনকি গ্রেপ্তার এড়াতে ইমরানের দলের অনেক নেতাকর্মী এখনও আত্মগোপনে রয়েছেন।

বর্তমানে কয়েক ডজন মামলায় আইনি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছেন কারাবন্দি ইমরান খান। দুর্নীতির এক মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় আগামী ৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। তবে দেশটির সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী তার বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছেন।

এছাড়া দেশজুড়ে নির্বাচনী সমাবেশে বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন পিটিআইয়ের নেতাকর্মীরা। পাকিস্তানের ব্যাপক নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যমেও বিরোধীদের নির্বাচনী সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে লাগাম টানা হয়েছে। যে কারণে পিটিআইয়ের পুরো নির্বাচনী প্রচারণা এখন অনলাইন কেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে।

এমনকি পিটিআইয়ের কয়েক ডজন প্রার্থীর মনোনয়নপত্রও বাতিল করেছে পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন (ইসিপি)।

টিএম