ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসকে নির্মূলের লক্ষ্য নিয়ে অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। টানা প্রায় সাড়ে তিন মাস ধরে চলা এই অভিযানে ইসরায়েলি বাহিনী ফিলিস্তিনি এই ভূখণ্ডকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে।

তবে হামাসকে ধ্বংস করতে ইসরায়েলের পরিকল্পনা কাজে আসছে না বলে মন্তব্য করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। একইসঙ্গে সংকট সমাধানে শান্তি আলোচনা দরকার বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।

মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ সোমবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেলের সাথে বৈঠক করেন। তবে ওই বৈঠকে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন বিরোধে সমাধান হিসেবে দুই-রাষ্ট্র সমাধানের আলোচনাকে তিনি এড়িয়ে গেছেন।

ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে আলোচনার জন্য ব্রাসেলসে অবস্থান করছিলেন। মূলত ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ওপর হামলা এবং গাজায় ইসরায়েলের প্রতিশোধমূলক আক্রমণের পরিণতির বিষয়ে সেখানে আলোচনা হচ্ছে।

রয়টার্স বলছে, ব্যাপক দীর্ঘমেয়াদী শান্তি প্রতিষ্ঠার অংশ হিসাবে ইসরায়েলের পাশাপাশি একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিষয়ে জোর দিতে আগ্রহী ইইউ মন্ত্রীরা। কিন্তু ইসরায়েল সরকার এই ধরনের যেকোনও আহ্বান বাতিল করে দিয়েছে।

ইইউ পররাষ্ট্র নীতির প্রধান জোসেপ বোরেল এবং অন্য ইইউ কূটনীতিকরা বলেছেন, সোমবারের এই বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাটজ মন্ত্রীদের গাজার উপকূলে একটি কল্পনা করা কৃত্রিম দ্বীপ এবং মধ্যপ্রাচ্যকে ভারতের সাথে সংযুক্ত করে এমন একটি রেল নেটওয়ার্কের ভিডিও দেখিয়েছেন।

তবে বোরেল স্পষ্ট করে বলেছেন, তিনি এই ধরনের কোনও পদক্ষেপে সন্তুষ্ট নন। জোসেপ বোরেল সাংবাদিকদের বলেন, ‘মন্ত্রী আমাদের কয়েকটি ভিডিও দেখিয়েছেন। আমরা যে ইস্যুতে আলোচনা করছিলাম এমন সমস্যাগুলোর সাথে ওই ভিডিওগুলোর কিছুই সংশ্লিষ্টতা নেই।’

বোরেল মনে করেন, কাটজ তার ইইউ সহকর্মীদের সাথে তার সময়টির আরও ভালো ব্যবহার করতে পারতেন। কূটনীতিকরা বলেছেন, ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দেখানো ভিডিওগুলো ওই কক্ষে থাকা অন্যদের বিস্মিত করেছিল।

রয়টার্স বলছে, ইইউ মন্ত্রীরা সৌদি আরব, মিসর এবং জর্ডানের মন্ত্রীদের পাশাপাশি ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিয়াদ আল-মালিকির সাথেও আলাদাভাবে দেখা করেছেন। সেখানে তারা গাজা এবং বৃহত্তর মধ্যপ্রাচ্য তথা উভয়ের বর্তমান সংকট নিয়ে আলোচনা করেন।

বৈঠকের আগে বোরেল বৃহত্তর ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি সংঘাতে শান্তির জন্য একটি রোডম্যাপ প্রস্তাব করে ইইউর ২৭টি সদস্য দেশকে একটি আলোচনা পত্র পাঠিয়েছেন। পরিকল্পনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ইইউ, মিসর, জর্ডান, সৌদি আরব এবং আরব লীগের দেশগুলোর আয়োজিত একটি ‘প্রস্তুতিমূলক শান্তি সম্মেলনের’ আহ্বান। আর এখানে যুক্তরাষ্ট্র এবং জাতিসংঘকেও  যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু যেকোনও ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করার একদিন পর অনুষ্ঠিত সোমবারের এই বৈঠকটিতে ইসরায়েলকে তার অবস্থান পরিবর্তন করতে দেখা যায়নি। ইসরায়েলের দাবি, এটি (ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র) ইসরায়েলের জন্য ‘অস্তিত্বগত বিপদ’ তৈরি করবে।

তবুও, বোরেল বলছেন- তিনি দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান বাস্তবায়নের জন্য আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টাকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যেতে চান। যদিও ইসরায়েল এই উদ্যোগের বিরোধিতা অব্যাহত রাখলে এটি কীভাবে সম্ভব হবে বা অর্জন করা যেতে পারে তা তিনি উল্লেখ করেননি।

পারস্পরিক অবিশ্বাস ও অনৈক্যের কারণে অবশ্য এক দশক আগে দ্বি-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার এমন একটি সমাধানের শেষ আলোচনা ভেস্তে গিয়েছিল।

উল্লেখ্য, গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকেই গাজায় ব্যাপক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভূখণ্ডটিতে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা ২৫ হাজার ছাড়িয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও ৬৩ হাজার মানুষ।

জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। আর খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে গাজার সকলেই এখন খাদ্য নিরাপত্তাহীন অবস্থার মধ্যে রয়েছেন।

ইসরায়েল বলেছে, যুদ্ধ ‘অনেক মাস’ চলতে পারে। একইসঙ্গে হামাস নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত, সমস্ত ইসরায়েলি বন্দি মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত এবং গাজা উপত্যকা থেকে যেন আর কোনও নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন না হতে হয় তা নিশ্চিত না করা পর্যন্ত ইসরায়েল থামবে না।

বৈঠকে যাওয়ার পথে কাটজ সাংবাদিকদের বলেন, তিনি চান- ইইউ হামাসের নেটওয়ার্ককে দমন করার প্রচেষ্টার দিকে মনোনিবেশ করুক এবং গোষ্ঠীর হাতে আটক থাকা বন্দিদের মুক্ত করতে সহায়তা করুক।

তবে জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আয়মান সাফাদি বলেছেন, এখন সময় এসেছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এটাই ঘোষণা করার যে- একটি দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানই একমাত্র বিকল্প এবং সেটিই বাস্তবায়ন করা।

টিএম