ইয়েমেনের সশস্ত্র হুথি গোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে একের পর এক হামলা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। মূলত লোহিত সাগরে ইসরায়েল সংশ্লিষ্ট সব জাহাজকে লক্ষ্যবস্তু করছে হুথিরা। এর জেরে ইরান-সমর্থিত এই গোষ্ঠীর অবস্থানে দফায় দফায় হামলা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।

তবে মার্কিন হামলা লোহিত সাগরে হুথিদের আক্রমণ বন্ধ করতে পারেনি বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এই পরিস্থিতিতে মার্কিন অভিযান অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) এক প্রতিবেনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইয়েমেনে হুথিদের ওপর হামলা সত্ত্বেও গোষ্ঠীটি লোহিত সাগরে তাদের হামলা বন্ধ করেনি এবং সেখানে মার্কিন অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার ইয়েমেনে একটি মার্কিন জাহাজে হুথি গোষ্ঠী ড্রোন হামলা চালানোর পর যুক্তরাষ্ট্র ইয়েমেনে পঞ্চম দফায় আক্রমণ করে।

হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জন কিরবি সাংবাদিকদের বলেছেন, মার্কিন বাহিনী ‘হুথিদের ক্ষেপণাস্ত্রের একটি অংশ ধ্বংস করে দিয়েছে’ যেগুলো লোহিত সাগরের দিকে গোষ্ঠীটি নিক্ষেপ করত। তিনি বলেন, বুধবার এবং বৃহস্পতিবার আবারও সেখানে আমেরিকান হামলা হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে ওয়াশিংটন ডিসিতে সাংবাদিকরা জিজ্ঞাসা করেন, হুথি লক্ষ্যবস্তুতে মার্কিন হামলা আসলে কোনও কাজ করছে কিনা। জবাবে বাইডেন বলেন,  ‘আচ্ছা, আপনি যখন বলছেন (হামলা) কাজ করছে কিনা; (তখন আমি বলব) হামলা কি হুথিদের থামিয়ে দিচ্ছে? (উত্তর হচ্ছে) না।’

মার্কিন এই প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ‘এগুলো (মার্কিন হামলা) কি চলতে থাকবে? (উত্তর হচ্ছে) হ্যাঁ।’

এদিকে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন অভিযানের তত্ত্বাবধানকারী ইউএস সেন্ট্রাল কমান্ড এক বিবৃতিতে বলেছে, বৃহস্পতিবার তারা ‘দুটি হুথি-বিরোধী ক্ষেপণাস্ত্রের ওপর হামলা চালিয়েছে যেগুলো দক্ষিণ লোহিত সাগরকে লক্ষ্য করে উৎক্ষেপণের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছিল।’

এতে আরও বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় বিকেল পৌনে চারটার দিকে ‘ইয়েমেনের হুথি নিয়ন্ত্রিত এলাকায় মার্কিন বাহিনী ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করে’ এবং এই অঞ্চলে বাণিজ্যিক জাহাজ ও মার্কিন নৌবাহিনীর জাহাজের জন্য এটিকে আসন্ন হুমকি বলে নির্ধারণ করে। পরে মার্কিন বাহিনী আত্মরক্ষায় ক্ষেপণাস্ত্রগুলোকে আঘাত করে ধ্বংস করে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি সাবরিনা সিং পরে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা যুদ্ধ চাই না। আমরা হুথিদের সাথে যুদ্ধ করছি না। আমরা যে পদক্ষেপ নিচ্ছি তা প্রতিরক্ষামূলক প্রকৃতির।’

প্রসঙ্গত, ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস এবং ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ওই অঞ্চলে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। ওই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বিরোধী ইরানের মিত্ররাও লেবানন, সিরিয়া এবং ইরাক থেকে মার্কিন স্বার্থকে লক্ষ্যবস্তু বানানোয় এতে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।

এর মাঝেই হুথিদের সাথে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা জোটের হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনায় ব্যাপক উদ্বেগ বৃদ্ধি পেয়েছে।

হুথিরা মূলত ইয়েমেনের শিয়া মুসলিম সংখ্যালঘু জাইদি নামের উপ-সম্প্রদায়ের সশস্ত্র গোষ্ঠী। বেশিরভাগ ইয়েমেনি হুথিদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় বসবাস করে। পাশাপাশি সানা এবং ইয়েমেনের উত্তরে হুথিরা লোহিত সাগরের উপকূলরেখাও নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

মূলত ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরুর পর থেকে গত প্রায় তিন মাস ধরে লোহিত সাগরে ইসরায়েল সংশ্লিষ্ট ও ইসরায়েলগামী জাহাজে অব্যাহতভাবে হামলা চালিয়ে আসছে হুথি বিদ্রোহীরা। ইরান সমর্থিত সশস্ত্র এই গোষ্ঠী জানিয়েছে, যতদিন গাজায় ইসরায়েলের বর্বরতা চলবে ততদিন তারা হামলা চালিয়ে যাবে।

এদিকে বাণিজ্যিক জাহাজ লক্ষ্য করে হুথিদের এসব হামলার কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে এর অনেক প্রভাব পড়েছে। লোহিত সাগর থেকে মিসরের সুয়েজ খাল হয়ে যেসব জাহাজ ইউরোপে যেত; সেসব জাহাজকে এখন আফ্রিকা ঘুরে যেতে হচ্ছে।

টিএম