পাকিস্তান দিবসে কুচকাওয়াজের সময় রাজধানী ইসলামাবাদে উড়ছে পাকিস্তান বিমান বাহিনীর এফ-১৬ যুদ্ধবিমান। ছবিটি ২০০৫ সালের ২৩ মার্চ তোলা/ সংগৃহীত

ইরানে এবার পাল্টা বিমান হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান। এতে কমপক্ষে ৭ নারী ও শিশু নিহত হয়েছে। বেলুচিস্তান প্রদেশে ইরানের হামলার জবাবে বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) এই হামলা চালিয়েছে পরমাণু শক্তিধর দেশটি।

পাকিস্তান অবশ্য ইরানের অভ্যন্তরে বিচ্ছিন্নতাবাদী জঙ্গিদের লক্ষ্য করে হামলা চালানোর কথা জানিয়েছে। বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের অভ্যন্তরে বিচ্ছিন্নতাবাদী জঙ্গিদের লক্ষ্য করে পাকিস্তান বৃহস্পতিবার হামলা চালিয়েছে বলে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। পাকিস্তানের ভূখণ্ডের অভ্যন্তরে ইসরায়েল-সংশ্লিষ্ট জঙ্গি ঘাঁটিতে ইরান আক্রমণ করার দুই দিন পর পাকিস্তান এই হামলা চালাল।

ইরানি মিডিয়ার বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, পাকিস্তান সীমান্তবর্তী সিস্তান-বেলুচিস্তান প্রদেশের একটি গ্রামে বেশ কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে। এতে তিন নারী ও চার শিশু নিহত হয়েছে। নিহতরা সবাই অ-ইরানি নাগরিক।

পাকিস্তানি মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে চালানো এই অভিযানের সময় বেশ কিছু সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে। এছাড়া এই অভিযানকে ‘সন্ত্রাসী আস্তানাগুলোর বিরুদ্ধে অত্যন্ত সমন্বিত এবং বিশেষ লক্ষ্যবস্তুতে সামরিক হামলা’ হিসেবেও বর্ণনা করেছে মন্ত্রণালয়।

এতে আরও বলা হয়েছে, ‘ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে সম্পূর্ণভাবে সম্মান করে পাকিস্তান। তবে আজকের এই হামলার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তানের নিজস্ব নিরাপত্তা এবং জাতীয় স্বার্থ রক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করা। এটি সবকিছুর ওপরে এবং এই বিষয়ে কোনো আপস করা যায় না।’

পাকিস্তানের একটি গোয়েন্দা সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, সামরিক বিমানের মাধ্যমে এই হামলা চালানো হয়েছে। পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদ থেকে ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেছেন, ‘আমাদের বাহিনী ইরানের অভ্যন্তরে বেলুচ জঙ্গিদের লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে।’

পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশের বিচ্ছিন্নতাবাদী বেলুচিস্তান লিবারেশন ফ্রন্টের কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘হামলার টার্গেটে থাকা জঙ্গিরা বিএলএফের অন্তর্ভুক্ত।’

এদিকে তেহরান ইসলামাবাদের কাছে সর্বশেষ এই হামলার বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়েছে বলে অজ্ঞাত এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানিয়েছে ইরানের বার্তাসংস্থা তাসনিম।

এর আগে, মঙ্গলবার গভীর রাতে পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশের স্থানীয় জঙ্গি গোষ্ঠী জইশ আল-আদলের দুটি ঘাঁটিতে বিমান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। আকাশসীমা লঙ্ঘন করে ইরানের চালানো এই হামলায় পাকিস্তানে অন্তত দুই শিশু নিহত হয় এবং তিনজন আহত হন।

এ ঘটনার পর ইসলামাবাদে নিযুক্ত তেহরানের রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করে পাকিস্তান। একই সঙ্গে তেহরান থেকে নিজ রাষ্ট্রদূতকেও প্রত্যাহার করে নেওয়ার ঘোষণা দেয় দেশটি।

বুধবার ইসলামাবাদে এক সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র মুমতাজ জাহরা বালোচ এই তথ্য জানান। সেসময় তিনি বলেন, ‘ইরান থেকে রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাকিস্তান। এ ছাড়া পাকিস্তানে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত, যিনি বর্তমানে তেহরান সফর করছেন, তিনি আপাতত আর ফিরে নাও আসতে পারেন।’

পাকিস্তান এই বেআইনি কাজের জবাব দেওয়ার অধিকার রাখে বলেও সেসময় হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন মুমতাজ জাহরা বালোচ।

টিএম