ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডে অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। টানা তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে চালানো এই হামলায় এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন প্রায় ২৪ হাজার ফিলিস্তিনি। ইসরায়েলি হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।

এই অবস্থায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের হাতে বন্দি থাকা ব্যক্তিদের অনেকেই নিহত হয়েছেন। বাকি যারা জীবিত আছেন, তারাও রয়েছেন ভয়াবহ বিপদে। আর এর জন্য ইসরায়েলেকে দায়ী করেছে হামাস।

সোমবার (১৫ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজা উপত্যকায় হামাসের হাতে আটক অনেক বন্দির নিহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে স্বাধীনতাকামী এই গোষ্ঠীটির সশস্ত্র শাখার মুখপাত্র রোববার জানিয়েছেন। একইসঙ্গে এসব বন্দি যে ভাগ্যবরণ করেছেন তার জন্য ইসরায়েলি নেতৃত্বকে দায়ী করেছেন তিনি।

টেলিভিশনে দেওয়া এক বিবৃতিতে হামাসের সশস্ত্র শাখার মুখপাত্র আবু ওবেইদা বলেছেন, ‘শত্রুপক্ষের অনেক বন্দি এবং আটক ব্যক্তিদের ভাগ্যে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে কী ঘটেছে তা অজানা রয়ে গেছে এবং বাকিরা (যারা জীবিত আছেন) সবাই ইহুদিবাদী আগ্রাসনের কারণে অজ্ঞাত সুড়ঙ্গে প্রবেশ করেছে।’

তিনি বলেছেন, ‘সম্ভবত, তাদের (বন্দিদের) মধ্যে অনেকেই সম্প্রতি নিহত হয়েছে। বাকিরা প্রতি ঘণ্টায়ই মহাবিপদের মধ্যে রয়েছেন এবং এর জন্য শত্রুর (ইসরায়েলের) নেতৃত্ব ও সেনাবাহিনী সম্পূর্ণভাবে দায়ী।’

আবু ওবেইদা বলেন, ‘প্রতিরোধের অক্ষ’ থেকে গোষ্ঠীর মিত্ররা হামাসকে জানিয়েছিল, তারা আগামী দিনগুলোতে ইসরায়েলি সেনাদের বিরুদ্ধে ‘তাদের আক্রমণ আরও প্রসারিত করবে’।

আবু ওবেইদা গাজা উপত্যকায় মসজিদ ধ্বংস করে ‘ধর্মীয় যুদ্ধ’ শুরু করার জন্য ইসরায়েলি বাহিনীকেও অভিযুক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘জায়নবাদী শত্রু ১০০ দিনের মধ্যে, গাজা উপত্যকার বেশিরভাগ মসজিদ ধ্বংস করেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘তারা (মসজিদ) অপবিত্র করেছে, পুড়িয়ে দিয়েছে এবং বুলডোজার দিয়ে মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছে এবং নামাজের আযান বন্ধ করে দিয়েছে... এটি স্পষ্টতই ধর্মীয় যুদ্ধ।’

প্রসঙ্গত, মুসলিমদের তৃতীয় পবিত্র ধর্মীয় স্থান আল-আকসা মসজিদের পবিত্রতা লঙ্ঘন এবং অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের অত্যাচারের জবাব দিতে গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’ নামে একটি অভিযান চালায় ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস।

হামাসের এই হামলায় নিহত হন কমপক্ষে ১২০০ ইসরায়েলি। নিহতদের প্রায় ৩০০ জন সেনাসদস্যও ছিলেন। এছাড়া সেনা কর্মকর্তা ও সৈনিকসহ আরও দুই শতাধিক মানুষকে বন্দি করে গাজায় নিয়ে যায় হামাস।

হামাসের হাতে আটক বিপুল এসব বন্দির মুক্তি দাবি করেছে ইসরায়েল। আর এ লক্ষ্যে গত ৭ অক্টোবর থেকেই গাজায় ব্যাপক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে দেশটি।

তবে টানা তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে আগ্রাসন চালানোর পরও ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের হাতে আটক থাকা বেশিরভাগ বন্দিকেই উদ্ধার করতে পারেনি ইসরায়েল। চলতি মাসের শুরুতে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, এখনও ১৩৬ ইসরায়েলি হামাসের হাতে গাজায় আটক রয়েছে।

গত ৫ জানুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি বলেন: ‘১৩৬ ইসরায়েলি এখনও গাজা উপত্যকায় বন্দি রয়েছে, যার মধ্যে ৩ জন বেসামরিক নাগরিকও রয়েছেন যাদের প্রাথমিকভাবে নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়া গেলেও পরে জানা যায় তারা গাজায় বন্দিদের মধ্যে রয়েছেন।’

সেসময় তিনি আরও বলেন, ‘আমরা তাদের ফিরিয়ে আনতে গোয়েন্দা এবং সামরিক অভিযানসহ সকল প্রচেষ্টার মাধ্যমে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।’

এর আগে অবশ্য ইসরায়েলি কর্মকর্তা এবং মিডিয়ায় প্রকাশিত সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল যে, গাজা উপত্যকায় ১২৯ জন বন্দি রয়েছেন। আর ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি বলছেন তাদের সংখ্যা ১৩৬ জন।

টিএম