গাজায় উচ্চমাত্রায় অনাহারের কথা স্বীকার করল যুক্তরাষ্ট্র
টানা তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে ইসরায়েলের বর্বরোচিত বিমান হামলায় বিপর্যস্ত ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা। স্থল পথেও সেনা অভিযান চলার কারণে ভূখণ্ডটিতে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র মানবিক সংকট।
পরিস্থিতি এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে, গাজার জনসংখ্যার বেশিরভাগই থাকছেন অনাহারে। এই পরিস্থিতিতে গাজায় উচ্চমাত্রায় অনাহারের কথা স্বীকার করে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি বলছে, ভূখণ্ডটিতে সাহায্য আরও বাড়ানো দরকার।
বিজ্ঞাপন
শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হোয়াইট হাউস বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের চলমান হামলা ও অবরোধের মধ্যে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় উচ্চমাত্রার খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার কথা স্বীকার করে নিয়েছে। একইসঙ্গে উপকূলীয় এই ভূখণ্ডে আরও সাহায্য সরবরাহ করা দরকার বলেও জানিয়েছে তারা।
মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের স্ট্র্যাটেজিক কমিউনিকেশনের কো-অর্ডিনেটর জন কিরবি বলেছেন, ‘আমরা স্বীকার করছি, গাজায় সত্যিকারের খাদ্য নিরাপত্তার সমস্যা রয়েছে, ১০০ শতাংশ, এবং সেই কারণেই মানবিক সহায়তার প্রধান উপাদান হিসেবে আমরা খাদ্য পাঠানোর চেষ্টা করছি -- খাদ্য, পানীয় ও ওষুধ -- কিন্তু খাদ্য অবশ্যই সেই তালিকার শীর্ষে রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বুঝতে পারছি, গাজায় ব্যাপক ক্ষুধা ও অনাহার রয়েছে।’
হোয়াইট হাউসের তথ্য অনুসারে, প্রতিদিন ২০০ ট্রাক গাজায় প্রবেশ করতে সক্ষম হচ্ছে। এটি মোটামুটি ৫০০টি চালানের কার্যত একটি ভগ্নাংশ, যা যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে প্রতিদিন গাজায় প্রবেশ করত। যদিও সেসময় সহায়তা নেওয়ার প্রয়োজন থাকা মানুষের সংখ্যা অনেক কম ছিল।
কিরবি স্বীকার করেছেন, গাজায় ‘নাটকীয়ভাবে’ কম ট্রাক প্রবেশ করছে। তিনি বলেছেন, ‘আরও কাজ করা দরকার এবং আমি আপনাকে আশ্বস্ত করতে পারি যে, আমরা এই বিষয়টি থেকে চোখ সরিয়ে নেব না। আমরা জানি, গাজায় অনেক মানুষ ভুগছেন, শুধু ক্ষুধার কারণে নয়, অন্যান্য প্রয়োজনেও এবং আমরা এটি কমানোর জন্য যা যা করতে পারি তা করছি।’
গাজায় ইসরায়েলের চলমান যুদ্ধের কারণে ভূখণ্ডটিতে ব্যাপক খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যেই অবশ্য ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে দক্ষিণ আফ্রিকার একটি গণহত্যা মামলার শুনানি বৃহস্পতিবার শুরু হয়েছে।
আদালতে শুনানির উদ্বোধনী অধিবেশন চলাকালীন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিনিধিত্বকারী আইনজীবীরা ফিলিস্তিনিদের হত্যা, তাদের গুরুতর শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি, বাড়িঘর থেকে ব্যাপকভাবে বিতাড়ন এবং বাস্তুচ্যুতি, ফিলিস্তিনিদের জন্ম রোধ করার উদ্দেশ্যে ব্যবস্থা আরোপ এবং পর্যাপ্ত খাবার সরবরাহ থেকে শুরু করে পানি, আশ্রয়, স্যানিটেশন, এবং চিকিৎসা সহায়তা থেকে বঞ্চিত করাসহ গণহত্যামূলক কাজ করার জন্য ইসরায়েলকে অভিযুক্ত করেন।
ইসরায়েল এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং হেগের এই আদালতে তারাও তাদের যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন করবে। এছাড়া ইসরায়েলের মতো হোয়াইট হাউসও এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।
আরও পড়ুন
জন কিরবি বলেছেন, ‘আমরা বারবার বলেছি, আমরা এই অভিযোগগুলোকে, এই মামলাটিকে ভিত্তিহীন বলে বিশ্বাস করি এবং ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগের কোনও ভিত্তি নেই। আমরা অবশ্যই বিশ্বাস করি না, গণহত্যার অভিযোগ এখানে প্রযোজ্য।’
উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর থেকেই গাজায় ব্যাপক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভূখণ্ডটিতে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা ২৩ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। নিহতদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
এছাড়া আহত হয়েছেন আরও প্রায় ৬০ হাজার মানুষ। ইসরায়েলের এই হামলা থেকে বাদ যাচ্ছে না গাজার কোনও অবকাঠামো। তারা মসজিদ, গির্জা, স্কুল, হাসপাতাল, শরণার্থী শিবিরসহ বেসামরিক মানুষের বাড়ি-ঘর সব জায়গায় হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
টিএম