ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডে অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। টানা প্রায় ৩ মাস ধরে চালানো এই হামলায় নিহত হয়েছেন ২২ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। ইসরায়েলি আগ্রাসনে হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।

আর এই সংঘাতে ইসরায়েলকে সমর্থনের কারণে ভুগছে জনপ্রিয় বহুজাতিক ফাস্টফুড প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ম্যাকডোনাল্ডস এবং জনপ্রিয় চেইন কফিহাউস স্টারবাকস। মূলত গাজায় দখলদার ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদে বিভিন্ন দেশে পশ্চিমা পণ্য বয়কটের ডাক দেওয়া হয়েছে। আর এতেই ভুগছে তারা।

যদিও গাজায় সংঘাত নিয়ে তারা ‘ভুল তথ্যের’ শিকার বলেও দাবি করেছে ম্যাকডোনাল্ডস। শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

ম্যাকডোনাল্ডস বলেছে, তারা তাদের ব্যবসায় একটি ‘অর্থপূর্ণ’ আঘাত দেখতে পারছে। কারণ মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের গ্রাহকরা ইসরায়েলের প্রতি সমর্থনের কারণে তাদেরকে বয়কট করছে।

ম্যাকডোনাল্ডসের প্রধান নির্বাহী ক্রিস কেম্পজিনস্কি এক লিঙ্কডইন পোস্টে ব্যবসায়িক ক্ষতির কথা স্বীকার করেছেন। আর এর জন্য হামাস-ইসরায়েল সংঘাত নিয়ে ‘ভুল তথ্যকে’ দায়ী করেছেন তিনি।

তিনি বড় কোনও মার্কিন সংস্থার দ্বিতীয় বস যিনি ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধের উত্তেজনার কারণে ব্যবসায়িক ক্ষতির কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। এছাড়া জনপ্রিয় চেইন কফিহাউস স্টারবাকসও গাজায় সংঘাতের কারণে ক্ষতির মুখে পড়েছে।

কেম্পজিনস্কি লিঙ্কডইন পোস্টে দেওয়া বার্তায় লিখেছেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি বাজার এবং এই অঞ্চলের বাইরের কিছু বাজার যুদ্ধের কারণে একটি অর্থবহ ব্যবসায়িক ক্ষতি অনুভব করছে এবং সংশ্লিষ্ট ভুল তথ্য ম্যাকডোনাল্ডসের মতো ব্র্যান্ডগুলোকেও প্রভাবিত করছে।’

তিনি আরও বলেছেন, ‘এটি হতাশাজনক এবং ভিত্তিহীন। মুসলিম দেশগুলোসহ প্রতিটি দেশে যেখানে আমরা কাজ করি সেখানে ম্যাকডোনাল্ডস গর্বের সাথে স্থানীয় মালিক অপারেটরদের মাধ্যমে প্রতিনিধিত্ব করে।’

ম্যাকডোনাল্ডস বিশ্বজুড়ে তার ৪০ হাজারেরও বেশি স্টোরের মালিকানা এবং পরিচালনার জন্য হাজার হাজার স্বাধীন ব্যবসার ওপর নির্ভর করে। আর এর মধ্যে প্রায় ৫ শতাংশ মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থিত।

বিবিসি বলছে, গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাস-ইসরায়েল সংঘাত শুরুর পর থেকে ম্যাকডোনাল্ডসের কর্পোরেট সদর দপ্তর সংঘর্ষের বিষয়ে অনেকটা চুপ থাকার চেষ্টা করেছে। তবে বৈশ্বিক এই ব্র্যান্ডটি এখন এই লড়াইয়ে কার্যত ক্ষতির মুখে পড়েছে।

গত অক্টোবরে গাজায় আগ্রাসন শুরুর পরের সপ্তাহগুলোতে ম্যাকডোনাল্ডস ইসরায়েল জানায়, তারা ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর সদস্যদের জন্য হাজার হাজার খাবার বিনামূল্যে দিয়েছে। এরপরই কুয়েত, মালয়েশিয়া এবং পাকিস্তানের মতো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতে ব্র্যান্ডটি বয়কটের ডাক দেওয়া হয়।

আর সাম্প্রতিক দিনগুলোতে বয়কটের ডাক আরও বেড়েছে এবং এর মধ্যেই কেম্পজিনস্কির পোস্টটি সামনে এলো।

বিবিসি বলছে, ফিলিস্তিনপন্থি বয়কট, ডাইভেস্টমেন্ট অ্যান্ড সাংকশনস (বিডিএস) আগে আনুষ্ঠানিকভাবে ম্যাকডোনাল্ডসকে লক্ষ্যবস্তু না করলেও এই সপ্তাহে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে ব্র্যান্ডটি বয়কটের আহ্বান জানিয়েছে।

‘মিথ্যা এবং মানহানিকর বিবৃতি’ উদ্ধৃত করে মালয়েশিয়া বিডিএস গ্রুপের বিরুদ্ধে ম্যাকডোনাল্ডস মালয়েশিয়া ১৩ লাখ মার্কিন ডলারের মামলা করার পর আনুষ্ঠানিকভাবে ব্র্যান্ডটি বয়কটের আহ্বান জানানো হয়।

বিডিএস বলেছে, ইসরায়েলে নিজের ফ্র্যাঞ্চাইজির সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা উচিত ম্যাকডোনাল্ডসের।

গ্রুপটি বলেছে, ‘মূল কোম্পানি ম্যাকডোনাল্ডস কর্পোরেশনকে ইসরায়েলে তার লজ্জাজনক ফ্র্যাঞ্চাইজ চুক্তি বাতিল করার জন্য চাপ দেওয়ার পরিবর্তে ম্যাকডোনাল্ডস মালয়েশিয়া এবং এর সৌদি মালিক মালয়েশিয়ায় ফিলিস্তিনের মুক্তি সংগ্রামের সাথে শান্তিপূর্ণ সংহতির কণ্ঠস্বরকে নীরব করার জন্য মরিয়া চেষ্টা করছে।’

তারা আরও বলেছে, ‘আমরা এটি হতে দিতে পারি না। আসুন ম্যাকডোনাল্ডসকে দেখাই, তৃণমূল থেকে মানুষ বয়কট করা শুরু করলে সেটির ফল কী হতে পারে।’

ম্যাকডোনাল্ডস অবশ্য মামলার বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছে। কেম্পজিনস্কি বলেছেন: ‘আমরা যে কোনও ধরনের সহিংসতা ঘৃণা করি এবং ঘৃণাত্মক বক্তব্যের বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে অবস্থান নিই। এবং আমরা সর্বদা গর্বিতভাবে সবার জন্য আমাদের দরজা খুলে দেব।’

টিএম