গাজায় গণহত্যা হয়নি, দাবি যুক্তরাষ্ট্রের
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর সাম্প্রতিক অভিযানে কোনো গণহত্যা হয়নি বলে মনে করে যুক্তরাষ্ট্র। জাতিসংঘের অন্যতম অঙ্গসংস্থা ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট ফর জাস্টিসে (আইসিজে) ইসরায়েলকে অভিযুক্ত করে গাজায় গণহত্যা মামলা দায়েরের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার সমালোচনাও করেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
গত ৩০ ডিসেম্বর বাদি হয়ে আইসিজেতে মামলাটি দায়ের করে দক্ষিণ আফ্রিকা। মামলার আবেদনপত্রের সঙ্গে ৮৪ পৃষ্ঠার একটি নথি সংযুক্ত করে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী আন্তর্জাতিক অপরাধ, যেমন—মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং যুদ্ধাপরাধ, এর পাশাপাশি গণহত্যা বা এ সম্পর্কিত অপরাধের সীমারেখা লঙ্ঘন করেছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
বিজ্ঞাপন
আবেদনে আরও বলা হয়েছিল, ইসরায়েলের এই আচরণ গণহত্যামূলক। কারণ তারা ফিলিস্তিনি জাতির একটি উল্লেখযোগ্য অংশকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্য নিয়েই হামলা চালাচ্ছে।
গত ৩০ তারিখ আবেদনপত্র জমা দেওয়ার সময় আইসিজেকে দ্রুত এ বিষয়ে শুনানির অনুরোধ করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। সেই অনুরোধে সাড়া দিয়েই ১১ জানুয়ারি শুনানি শুরুর দিন ধার্য করা হয়েছে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে আইসিজে। পাশাপাশি শুনানিতে উপস্থিত থাকতে ইসরায়েলকে প্রতিনিধি পাঠানোর জন্য সমনও পাঠিয়েছে জাতিসংঘের আদালত।
আইসিজের এই আদেশের প্রতিক্রিয়ায় বুধবার মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক ব্রিফিংয়ে মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, ‘গণহত্যা খুবই ঘৃণ্য ধরনের নৃশংসতা। বিশ্বে যতরকম নৃশংসতা-নিষ্ঠুরতা দেখা যায়, সেসবের মধ্যে গণহত্যা সবচেয়ে ন্যাক্কারজনক অপরাধগুলোর একটি।’
‘তাই এই ব্যাপারটিকে হালকাভাবে নেওয়ার কিছু নেই। তবে যদি এ ব্যপারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হয়, তাহলে আমরা বলব, গণহত্যার স্বীকৃত সংজ্ঞায় যা উল্লেখ করেছে— গাজায় তা ঘটেনি এবং যারা মামলা দায়ের করেছে, তারা কোনো ফলপ্রসূ পদক্ষেপ নেয়নি।’
আলাদা এক ব্রিফিংয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন কিরবি বলেন, ‘ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ ভিত্তিহীন। দক্ষিণ আফ্রিকা যে মামলা দায়ের করেছে, তা থেকে কোনো ফলাফল আসবে না।’
আগামী ১১ ও ১২ জানুয়ারি সেই মামলার ওপর শুনানির দিন ধার্য করেছেন ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস। শুনানির সময় উপস্থিত থাকতে ইসরায়েলকে তলবও করেছেন আইসিজে।
আদালতের এই আদেশের প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলের জাতিসংঘ মিশন জানিয়েছে, এই মামলার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পরিসরে ইসরায়েলের মানহানি করার চেষ্টা করা করা হয়েছে এবং এর জবাব দিতে শুননির দিন আদালতে উপস্থিত থাকবে ইসরায়েল।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় ইরেজ সীমান্তে হামাস যোদ্ধারা অতর্কিত হামলা চালানোর পর ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বিমানবাহিনী। ২৮ অক্টোবর থেকে অভিযানে যোগ দেয় স্থলবাহিনীও।
ইসরায়েলি বাহিনীর টানা দেড় মাসের অভিযানে কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজা উপত্যকা, নিহত হয়েছেন ২২ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। এই নিহতদের ৭০ শতাংশই নারী, শিশু, অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোর-কিশোরী এবং বয়স্ক লোকজন।
আহত হয়েছেন আরও ৫৪ হাজার ৯৬৮ জন এবং এখনও নিখোঁজ রয়েছেন ৭ হাজার জন।। এছাড়া হাজার হাজার পরিবার বাড়িঘর-সহায় সম্বল হারিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন বিভিন্ন স্কুল, সরকারি প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল প্রাঙ্গণে।
অন্যদিকে, হামাসের গত ৭ অক্টোবরের হামলায় ইসরায়েলে নিহত হয়েছিলেন ১ হাজার ২০০ জন ইসরায়েলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিক। পাশাপাশি, ইসরায়েলের ভূখণ্ড থেকে ২৪২ জন ইসরায়েলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিককে সেদিন জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে যান হামাস যোদ্ধারা। তাদের মধ্যে এখনও মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছেন ১২৯ জন জিম্মি।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, হামাসকে সম্পূর্ণ ধ্বংস এবং গাজাকে পরিপূর্নভাবে নিরস্ত্রীকরণ করার আগ পর্যন্ত এই যুদ্ধ চলবে।
এএফপি/ আরটি
এসএমডব্লিউ