ফাইল ছবি

যুক্তরাষ্ট্রে আবারও বাড়ছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। এর সঙ্গে বাড়ছে মৌসুমী ফ্লু এবং অন্যান্য শ্বাসযন্ত্রের অসুস্থতা। এই পরিস্থিতিতে উত্তর আমেরিকার এই দেশটির কমপক্ষে চারটি অঙ্গরাজ্যের হাসপাতালগুলোতে ফিরেছে মাস্ক পরার বাধ্যবাধকতা।

বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস, মৌসুমী ফ্লু এবং অন্যান্য শ্বাসযন্ত্রের অসুস্থতা বৃদ্ধির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের কমপক্ষে চারটি অঙ্গরাজ্য তার হাসপাতালগুলোতে মাস্ক পরার বাধ্যবাধ্যকতা পুনরায় জারি করেছে। এই চারটি অঙ্গরাজ্য হচ্ছে নিউইয়র্ক, ক্যালিফোর্নিয়া, ইলিনয় এবং ম্যাসাচুসেটস।

এতে করে এই অঙ্গরাজ্যগুলোর স্বাস্থ্যসেবা অবকাঠামোগুলোতে রোগী এবং সেবা প্রদানকারীদের মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হলো।

নিউইয়র্ক সিটির স্বাস্থ্য কমিশনার ড. অশ্বিন ভাসান বুধবার ডব্লিউএবিসি টিভিকে বলেছেন, শহরের ১১টি সরকারি হাসপাতাল, ৩০টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং পাঁচটি দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা অবকাঠামোতে মাস্ক ম্যান্ডেট পুনরায় চালু হয়েছে।

ভাসান ডব্লিউএবিসিকে বলেছেন, ‘আমরা যা চাই না তা হল কর্মীদের ঘাটতি, তাই না? আমরা যখন ২০২২ সালে ওমিক্রন সংক্রমণের ঢেউ দেখেছিলাম, তখন সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল শুধু মানুষ অসুস্থ হচ্ছে না, কিন্তু আমাদের প্রচুর স্বাস্থ্যকর্মীও সেসময় কোভিডে আক্রান্ত হয়ে কাজের বাইরে ছিল।’

যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের সাম্প্রতিকতম সাপ্তাহিক ডেটাতে দেখা যাচ্ছে, গত ১৭-২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ২৯ হাজারেরও বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। যা আগের সপ্তাহের থেকে ১৬ শতাংশ বেশি।

এছাড়া একই সময়ের মধ্যে ফ্লুতে আক্রান্ত হয়ে ১৪ হাজার ৭০০ জনেরও বেশি মানুষের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার খবর দিয়েছে সিডিসি।

অবশ্য মাস্ক পরার এই বিধিনিষেধ কোভিড মহামারি চলাকালীন যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক বিতর্ক সৃষ্টি করেছিল। সেসময় যারা এই বিধিনিষেধের বিরোধিতা করেছিলেন তারা মনে করেন, মাস্ক আসলে অসুস্থতার বিস্তারকে দমন করতে তেমন কিছু করেনি। আর এটিই তাদের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।

এছাড়া যারা সেসময় মাস্ক পরেছিলেন তাদের মধ্যেও গভীর ক্ষোভ ছিল। কারণ তারা মনে করতেন, যারা মাস্ক পরেন না তাদের মাধ্যমে তাদের স্বাস্থ্যও ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাচ্ছে।

করোনাভাইরাসে সংক্রমণ ও প্রাণহানির দিক দিয়ে কোভিড মহামারিতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ ছিল যুক্তরাষ্ট্র। ওই মহামারিতে ১১ লাখেরও বেশি আমেরিকান প্রাণ হারান। যা অন্যান্য ধনী দেশের তুলনায় অনেক বেশি।

এদিকে শিকাগোর রাশ ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সিস্টেম গত মঙ্গলবার বলেছে, ‘ক্যাম্পাসের কিছু এলাকায় রোগী, দর্শনার্থী এবং কর্মীদের হাসপাতাল-অনুমোদিত মাস্ক পরতে হবে। এর মধ্যে ক্লিনিকাল ওয়েটিং এলাকা এবং রোগীদের নিবন্ধন এলাকাও রয়েছে।’

শিকাগোকে ঘিরে থাকা কুক কাউন্টি হেলথ এবং শিকাগো শহরতলিতে অবস্থিত এন্ডেভার হেলথ গত মাসে আবার মাস্কের বাধ্যবাধ্যকতা শুরু করে। এর আগে ইলিনয় জনস্বাস্থ্য বিভাগ হাসপাতালগুলোকে মাস্ক পরাসহ বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে সংক্রমণ প্রশমনের প্রচেষ্টা বাড়াতে নির্দেশ দেয়।

এছাড়া ম্যাসাচুসেটসের বার্কশায়ার হেলথ সিস্টেমস বুধবার থেকে বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক ব্যবহার শুরু করেছে বলে একটি বিবৃতি বলা হয়েছে।

ক্যালিফোর্নিয়ায় লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টি গত শনিবার সিটি নিউজ সার্ভিসকে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, লাইসেন্সপ্রাপ্ত সকল স্বাস্থ্যসেবা অবকাঠামোতে মাস্ক পরার বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।

কাউন্টির স্বাস্থ্য বিভাগ তাৎক্ষণিকভাবে অবশ্য এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি।

টিএম