হামাসের বিরুদ্ধে আরও নিখুঁত অভিযান পরিচালনার লক্ষ্যে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা থেকে কিছু সৈন্য প্রত্যাহার করছে ইসরায়েল। ইসরায়েলের অর্থনীতিকে সহায়তা করার জন্য রিজার্ভ সৈন্যদের মধ্যে থেকে কিছু সৈন্যকে আংশিকভাবে প্রত্যাহার করে নেওয়া হচ্ছে বলে ইসরায়েলি সরকারি এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

ওই কর্মকর্তা বলেছেন, ফিলিস্তিনি উপত্যকা থেকে ইসলামপন্থী গোষ্ঠীকে উৎখাত করাই ইসরায়েলের হামলার লক্ষ্য। গাজা থেকে যে পাঁচটি ব্রিগেড প্রত্যাহার করা হয়েছে তার মধ্যে কয়েকটি ব্রিগেড লেবাননের হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে দ্বিতীয় ফ্রন্টের সম্ভাব্য সংঘাতের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করবে।

গত ৭ অক্টোবরের হামাসের আন্তঃসীমান্ত হামলার প্রতিশোধে গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ শুরু করার পর থেকে ইসরায়েলি কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা তিনটি প্রধান ধাপে এই যুদ্ধ চালিয়ে যাবেন। এর প্রথম ধাপে আছে স্থলবাহিনীর প্রবেশপথ পরিষ্কার এবং বেসামরিকদের সরে যেতে উৎসাহিত করার জন্য তীব্র গোলাবর্ষণ। দ্বিতীয় ধাপে আছে আগ্রাসন; যা ২৭ অক্টোবর শুরু হয়েছিল।

ইসরায়েলি ট্যাংক এবং সৈন্যরা এখন গাজা উপত্যকার বেশিরভাগ অংশের দখল নিয়েছে। হামাস যোদ্ধাদের গোপন সুড়ঙ্গ এবং বাঙ্কার থেকে অতর্কিত হামলা সত্ত্বেও এখন ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী যুদ্ধের তৃতীয় স্তরে প্রবেশ করছে বলে ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন। বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় ওই কর্মকর্তা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বলে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে।

যুদ্ধে বিধ্বস্ত গাজা জেলার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, ‘‘এতে কমপক্ষে ছয় মাস সময় লাগবে। বর্তমানে হামাসের অস্ত্রধারীদের বিরুদ্ধে কঠিন মিশন পরিচালনা করা হচ্ছে। গাজা উপত্যকার শাজাইয়া থেকে শান্তির ঘুঘু উড়ানোর কথা কেউ বলছে না।’’

গত অক্টোবর ইসরায়েলে ঢুকে অতর্কিত হামলা চালিয়ে এক হাজার ২০০ জন ইসরায়েলিকে হত্যা এবং ২৪০ জনকে ধরে নিয়ে গাজায় জিম্মি করে হামাস। কয়েক দফার যুদ্ধবিরতি কার্যকরের পর উপত্যকা থেকে শতাধিক জিম্মিকে ছেড়ে দিয়েছে হামাস। এখনও এই গোষ্ঠীর হাতে ১২৯ জিম্মি আটকা আছেন। ইসরায়েল এই জিম্মিদের উদ্ধারে দৃঢ় অঙ্গীকার করেছে। কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতায় ফের হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি চুক্তির আলোচনা চলছে। এই চুক্তি কার্যকর করা হলে আরও কিছু জিম্মি মুক্তি পাবেন বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

হামাসের সাথে যুদ্ধে গাজায় নজিরবিহীন ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। গাজা উপত্যকার ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী হামাসের নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, দুই মাসের বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধে প্রায় ২২ হাজার ফিলিস্তিনির প্রাণহানি ঘটেছে; যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক।

আর ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী এখন পর্যন্ত ৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি যোদ্ধাকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেছে। যুদ্ধের আগে হামাসের ৩০ হাজারের মতো যোদ্ধা ছিল বলে ইসরায়েল জানিয়েছে।

শনিবার ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর শীর্ষ কমান্ডার লেফটেন্যান্ট-জেনারেল হার্জি হালেভি বাহিনীতে ‘‘পুনর্বিন্যাসের’’ অংশ হিসেবে কিছু রিজার্ভ সৈন্যকে বাড়িতে পাঠানো হচ্ছে বলে ঘোষণা দেন। সৈন্যদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেছেন, ‘‘এই যুদ্ধের প্রথম থেকেই আমরা বলেছিলাম এতে অনেক সময় লাগবে। আমরা কি শেষ পর্যন্ত বলতে পারব যে ইসরায়েল রাষ্ট্রের আশপাশে আর কোনও শত্রু নেই? আমি মনে করি এটা অত্যন্ত উচ্চাভিলাষী চিন্তা। তবে আমরা সেখানে একটি ভিন্ন নিরাপত্তা পরিস্থিতি তৈরি করবো; যা নিরাপদ এবং যতটা সম্ভব স্থিতিশীলও।’’

গাজায় যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর ১৭৪ সৈন্য নিহত হয়েছে; যাদের মধ্যে অনেকে রিজার্ভ সৈন্য ছিলেন। এছাড়া লেবানন সীমান্তে ইরান-সমর্থিত লেবাননের শক্তিশালী সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর সাথে সংঘাতে আরও ৯ ইসরায়েলি সৈন্য নিহত হয়েছেন।

সূত্র: রয়টার্স।

এসএস