রোহিঙ্গা যাত্রী বহনকারী একটি নৌকা উপকূলে নোঙ্গর ফেলার আগেই তাড়িয়ে দিয়েছে ইন্দোনেশিয়ার নৌবাহিনী। শুক্রবার ভোরের দিকে দেশটির আচেহ প্রদেশের ওয়েহ দ্বীপে এই ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন দেশটির সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র নুগ্রাহ গুমিলার।

বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে গুমিলার বলেন, শুক্রবার ভোরের দিকে সাগরে টহল দেওয়া অবস্থায় নৌবাহিনীর একটি জাহাজ ওয়েহ দ্বীপের কাছাকাছি একটি কাঠের নৌকা দেখতে পেয়ে সেটিকে থামতে বলে। তারপর সেই নৌকার চালক ও যাত্রীদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, নৌকার যাত্রীদের সবাই রোহিঙ্গা এবং তারা মিয়ানমারের আরাকান থেকে এসেছেন।

‘এই তথ্য জানার পর নৌকাটিকে ইন্দোনেশিয়ার জলসীমার বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়,’ রয়টার্সকে বলেন গুমিলার।

এ সম্পর্কে আর কিছু বলেননি নুগ্রাহ গুমিলার। নৌকাটিতে কতজন যাত্রী ছিলো, তা ও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

বিস্তারিত তথ্যে জন্য ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করেছিল রয়টার্স। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ ব্যাপারটি তদন্তের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটির কাজ শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত কিছু বলার সুযোগ নেই।

প্রসঙ্গত, বিশ্বের সবচেয়ে নির্যাতিত জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের উত্তরপশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ আরাকানের বাসিন্দা। শত শত বছর ধরে বসবাস করলেও সাংবিধানিকভাবে তাদের স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি।

২০১৭ সালের আগস্টে আরাকানের বেশ কয়েকটি পুলিশ স্টেশন ও সেনা ছাউনিতে একযোগে বোমা হামলা হয়। পরে সেই হামলার দায় স্বীকার করে সশস্ত্র রোহিঙ্গা গোষ্ঠী আরসা।

এদিকে বোমা হামলার পর পরই আরাকানের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত গ্রামগুলোতে অভিযান শুরু করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী, গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয় এবং সেনাবাহিনীর হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগের মুখে টিকতে না পেরে লাখ লাখ রোহিঙ্গা নাফ নদী পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। বর্তমানে বাংলাদেশের টেকনাফে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলোতে বসবাস করছেন ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা।

কিন্তু বাংলাদেশের সরকার জানিয়ে দিয়েছে যে এই রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করা হবে না এবং তাদের অবশ্যই মিয়ানমারে ফিরে যেতে হবে। তারপর থেকে বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারের উপকূল থেকে নৌপথে রোহিঙ্গাদের যাত্রার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই রোহিঙ্গাদের গন্তব্য মূলত দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দুই দেশ ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়া।

শুক্রবার ভোরে যে নৌকাটি ফেরত পাঠিয়েছে নৌবাহিনী, সেটি মিয়ানমার থেকে এসেছিল।

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনারের দপ্তর ইউএনএইচসিআরের তথ্য অনুযায়ী, গত নভেম্বর থেকে এ পর্যন্ত নৌপথে ১ হাজার ৫০০ জনেরও বেশি রোহিঙ্গা গিয়েছেন দেশটিতে। তাদের বেশিরভাগই পৌঁছেছেন আচেহ প্রদেশে। বর্তমানে প্রদেশটির রাজধানী আচেহ সিটির একটি কনভেনশন সেন্টারে তাদের রাখা হয়েছে।

তাদেরকে ফেরত পাঠানোর দাবিতে আন্দোলনও শুরু হয়েছে দেশটিতে। বুধবার আচেহ সিটির সেই কনভেনশন সেন্টারে হামলা চালিয়েছে একদল ইন্দোনেশীয় শিক্ষার্থী।

ইউএনএইচসিআর সেই হামলায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

রয়টার্স

এসএমডব্লিউ