৩০ বছরেরও বেশি সময় পর বুরকিনা ফাসোতে ফের দূতাবাস খুলল রাশিয়া
পশ্চিম আফ্রিকার দেশ বুরকিনা ফাসোতে আবারও দূতাবাস খুলেছে রাশিয়া। ৩০ বছরেরও বেশি সময় পর দেশটিতে এই দূতাবাস খুলল মস্কো। মূলত সামরিক অভ্যুত্থানের পর সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বাড়ানোর চেষ্টা করছে পশ্চিম আফ্রিকার এই দেশ।
শুক্রবার (২৯ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
বিজ্ঞাপন
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৩০ বছরেরও বেশি সময় আগে বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর রাশিয়া বুরকিনা ফাসোতে তাদের দূতাবাস পুনরায় চালু করেছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। বুরকিনা ফাসো সাবেক ঔপনিবেশিক শক্তি ফ্রান্সের ঘনিষ্ঠ মিত্র ছিল, কিন্তু ২০২২ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করার পর থেকে দেশটির জান্তা সরকার রাশিয়ার দিকে অগ্রসর হয়েছে।
এমনকি বুরকিনা ফাসোর জান্তা সরকার ফরাসি কূটনীতিকদের দেশ থেকে বহিষ্কার করেছে এবং দেশটিতে থাকা ফ্রান্সের সামরিক ঘাঁটিও বন্ধ করে দিয়েছে। একই সঙ্গে রাশিয়ার সঙ্গে সামরিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করছে পশ্চিম আফ্রিকার এই দেশটি।
ফ্রান্স অবশ্য বুরকিনা ফাসোর পাশাপাশি প্রতিবেশী মালি ও নাইজারেও সামরিক অভ্যুত্থানের নিন্দা করেছিল।
বিবিসি বলছে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন চলতি বছরের জুলাই মাসে সেন্ট পিটার্সবার্গে রাশিয়া-আফ্রিকা শীর্ষ সম্মেলনের সময় বুরকিনা ফাসোতে দূতাবাস পুনরায় খোলার পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছিলেন।
১৯৯২ সালে বুরকিনা ফাসোতে রুশ দূতাবাসটি বন্ধ হয়ে যায়। মূলত নব্বইয়ের দশকের শুরুতে স্নায়ুযুদ্ধের সমাপ্তি এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর মস্কো আফ্রিকায় তার সম্পৃক্ততা কমিয়ে আনে। এরই জেরে সেসময় বুরকিনা ফাসোতে রুশ দূতাবাস বন্ধ হয়ে যায়।
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বার্তাসংস্থা তাস জানিয়েছে, বুরকিনা ফাসোর রাজধানী ওয়াগাদুগুতে এক অনুষ্ঠানে দূতাবাসটি পুনরায় চালু করা হয়েছে। তবে রাশিয়া এখনও দেশটিতে রুশ মিশনের প্রধানের নাম ঘোষণা করেনি।
বার্তাসংস্থা এএফপি জানিয়েছে, আইভরি কোস্টে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেক্সি সালটিকভ বলেছেন- প্রেসিডেন্ট পুতিন কাউকে নিয়োগ না দেওয়া পর্যন্ত তিনিই এই মিশনের নেতৃত্ব দেবেন। তিনি পশ্চিম আফ্রিকার এই রাষ্ট্রটিকে ‘(মস্কোর) পুরোনো অংশীদার যার সাথে আমাদের দৃঢ় এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক’ রয়েছে বলে বর্ণনা করেছেন।
বিবিসি বলছে, প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের অধীনে রাশিয়া সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আফ্রিকায় তার প্রভাব পুনরুদ্ধারের জন্য ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছে। বুরকিনা ফাসোর প্রতিরক্ষামন্ত্রী কর্নেল কাসুম কুলিবালি গত মাসে মস্কোতে রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগুর সাথে আলোচনা করেন।
কর্নেল কুলিবালি বলেছেন, বুরকিনা ফাসোর সেনাবাহিনী তাদের সক্ষমতা জোরদার করার চেষ্টা করছে এবং (রাশিয়ার সঙ্গে) আলোচনা ‘ব্যবহারিক পর্যায়ে’ পৌঁছেছে।
মালি এবং নাইজারের পাশাপাশি বুরকিনা ফাসো ইসলামপন্থি বিদ্রোহীদের সাথে লড়াই করছে। মালির জান্তা ফরাসি সৈন্যদের বহিষ্কার করার পাশাপাশি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তা করার জন্য রাশিয়ার ভাড়াটে ওয়াগনার গোষ্ঠীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
অন্যদিকে বুরকিনা ফাসোর জান্তাও এই অঞ্চলে ওয়াগনারকে নিয়ে আসছে বলে গত বছর ঘানার প্রেসিডেন্ট নানা আকুফো-আডো অভিযোগ করেন। তবে তা অস্বীকার করেছিল বুরকিনা ফাসো।
এছাড়া পারস্পরিক সহযোগিতার অন্যান্য ক্ষেত্রে বুরকিনা ফাসো তার জ্বালানি সরবরাহ বৃদ্ধি করতে একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য গত জুলাই মাসে রাশিয়ার সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করে। আফ্রিকার এই দেশটির জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশেরও কম মানুষ বর্তমানে বিদ্যুৎ সুবিধা পেয়ে থাকেন।
এর আগে গত মাসে ডেঙ্গু জ্বর এবং চিকুনগুনিয়ার মারাত্মক প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় বুরকিনা ফাসোকে সহায়তা করার জন্য ডাক্তারদের একটি দলও পাঠিয়েছিল রাশিয়া।
টিএম