ইসরায়েলের সেনাপ্রধান হেরজি হালেভি

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান আরও বেশ কয়েক মাস চলবে বলে জানিয়েছেন ইসরায়েলের সেনাপ্রধান এবং সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ হেরজি হালেভি। মঙ্গলবার টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন তিনি।

নিজ বক্তব্যে হেরজি হালেভি বলেন, ‘এখানে কোনো যাদুকরী সমাধান নেই। কোনো একটি সন্ত্রাসী সংগঠনকে নিষ্ক্রিয় করার মতো শর্টকাট কোনো পদ্ধতিও আমাদের হাতে নেই। আমাদের সামনে উপায় একটিই— দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া।’

হালেভি বলেন, মঙ্গলবার গাজায় হামাসের ১০০টিরও বেশি স্থাপনায় হামলা চালানো হয়েছে। সামনের দিনগুলোতে উপত্যকার কেন্দ্রীয় অঞ্চলে সামরিক অপারেশনের মাত্রা আরও বাড়বে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।

গত ২৫ ডিসেম্বর খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব বড়দিনে গাজা উপত্যকার মধ্যাঞ্চলে ব্যাপকমাত্রায় অভিযান চালিয়েছে ইসরায়েলি সেনা ও বিমানবাহিনী। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক দপ্তরের মুখপাত্র সেইফ ম্যাগাঙ্গো সোমবার উদ্বেগ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, ‘বড়দিনে গাজা উপত্যকায় অব্যাহত বোমাবর্ষণ হয়েছে এবং এতে মৃত্যু হয়েছে শতাধিক ফিলিস্তিনির। যুদ্ধের সাম্প্রতিক এই অবস্থায় আমরা খুবই উদ্বিগ্ন।’

‘ইসরায়েলি বাহিনীকে অবশ্যই বেসামরিক লোকজনের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ নিতে হবে। কেবলমাত্র আগাম সতর্কবার্তা এবং যুদ্ধস্থল থেকে লোকজনকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিলেই আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন মেনে চলা হলো— এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই।’

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় ইরেজ সীমান্তে অতর্কিত হামলা চালায় হামাস যোদ্ধারা। তারপর ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী। পরে ২৮ অক্টোবর থেকে অভিযানে যোগ দেয় স্থল বাহিনীও।

ইসরায়েলি বাহিনীর টানা দেড় মাসের অভিযানে কার্যত ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে গাজা উপত্যকা, নিহত হয়েছেন ২০ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। এই নিহতদের ৭০ শতাংশই নারী, শিশু,অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোর-কিশোরী এবং বয়স্ক লোকজন।

সেই সঙ্গে আহত হয়েছেন আরও ৫২ হাজার ৫৮৬ জন এবং এখনও নিখোঁজ রয়েছেন ৬ হাজার ৭০০ জন।। এছাড়া হাজার হাজার পরিবার বাড়িঘর-সহায় সম্বল হারিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন বিভিন্ন স্কুল, সরকারি প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল প্রাঙ্গণে।

অন্যদিকে, হামাসের গত ৭ অক্টোবরের হামলায় ইসরায়েলে নিহত হয়েছিলেন ১ হাজার ২০০ জন ইসরায়েলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিক। পাশাপাশি, ইসরায়েলের ভূখণ্ড থেকে ২৪২ জন ইসরায়েলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিকদের সেদিন জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে গিয়েছিল হামাস যোদ্ধারা।

এই জিম্মিদের মধ্যে ইসরায়েলিদের সংখ্যা ১০৪ জন। বাকি ১৩৬ জনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, থাইল্যান্ড, জার্মানি, ফ্রান্স, আর্জেন্টিনা, রাশিয়া ও ইউক্রেনের নাগরিকরা রয়েছেন; এবং রয়েছেন শিশু, নারী, তরুণ-তরুণী এবং বৃদ্ধ-বৃদ্ধা— সব বয়সী মানুষ।

টানা দেড় মাস ভয়াবহ যুদ্ধ শেষে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে নতিস্বীকার করে গত ২৫ নভেম্বর অস্থায়ী বিরতি ঘোষণা করে হামাস-ইসরায়েলি বাহিনী। পরে ১ ডিসেম্বর দু’পক্ষের পারস্পরিক হামলার শুরুর মধ্যে দিয়ে শেষ হয় সেই বিরতি।

৭ দিনের অস্থায়ী বিরতির সময় নিজের কব্জায় আটক জিম্মিদের মধ্যে থেকে ১১৮ জনকে মুক্তি দিয়েছে হামাস; বিপরীতে এই সময়সীমায় ইসরায়েলের বিভিন্ন কারাগার থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে ১৫০ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে।

এদিকে এক বিবৃতে ইসরায়েলে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল লিকুদ পার্টি জানিয়েছে, সোমবার গাজা উপত্যকা সফরে গিয়েছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী। সেখানে এক সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি বলেছেন, সামনের দিনগুলোতে গাজায় অভিযান আরও ব্যাপক ও তীব্র হবে।