হুথি বিদ্রোহীদের দখলে থাকা হোদেইদাহ বন্দরটি লোহিত সাগরে ইয়েমেনের প্রধান বন্দর (ফাইল ছবি)

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে হামাস ও ইসরায়েলের সংঘাত চলছে আড়াই মাসেরও বেশি সময় ধরে। ইসরায়েলি আগ্রাসন যতই তীব্র হচ্ছে, চলমান এই সংঘাত আঞ্চলিক রূপ নেওয়ার ঝুঁকিও ততই বাড়ছে।

এই পরিস্থিতিতে ইসরায়েলে নতুন করে ড্রোন হামলা করেছে ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা। ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলীয় লোহিত সাগরের তীরবর্তী শহর ইলাতে মনুষ্যবিহীন ড্রোন ব্যবহার করে এই হামলা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে ইরান-সমর্থিত ইয়েমেনের এই বিদ্রোহীগোষ্ঠীটি।

বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের বন্দরনগরী ইলাতকে লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালানো হয়েছে বলে ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহী গোষ্ঠী জানিয়েছে। একইসঙ্গে লোহিত সাগরে একটি বাণিজ্যিক জাহাজেও হামলা করা হয়েছে বলে গোষ্ঠীটি দাবি করেছে।

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে লোহিত সাগরের গুরুত্বপূর্ণ শিপিং রুটে ইয়েমেনের ইরান-সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীরা ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে আসছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে এই হামলা আরও তীব্র হয়েছে এবং এর মধ্যেই মঙ্গলবার ইসরায়েলে এই হামলার ঘটনা ঘটল।

হুথি বিদ্রোহীরা বলছে, গাজায় চলমান যুদ্ধের অবসান ঘটাতে ইসরায়েলকে চাপ দেওয়ার জন্য আক্রমণ বাড়িয়েছে তারা।

মঙ্গলবার কথা বলার সময় হুথি সামরিক মুখপাত্র ইয়াহিয়া সারিয়া বলেছেন, তাদের বাহিনী ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলীয় লোহিত সাগরের তীরবর্তী শহর ইলাত এবং ‘অধিকৃত ফিলিস্তিনের অন্যান্য অঞ্চলে’ ড্রোন হামলা চালিয়েছে।

তিনি আরও বলেছেন, সতর্কতামূলক তিনটি কল প্রত্যাখ্যান করার পরে তারা লোহিত সাগরে এমএসসি ইউনাইটেড জাহাজেও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে।

হামলার শিকার এমএসসি ইউনাইটেড ৮ সৌদি আরবের কিং আবদুল্লাহ বন্দর থেকে পাকিস্তানের করাচিতে যাচ্ছিল বলে নিশ্চিত করেছে এমএসসি মেডিটেরানিয়ান। অবশ্য মঙ্গলবার হুথিদের হামলার শিকার হলেও জাহাজটির ক্রুরা নিরাপদ ছিলেন।

শিপিং কোম্পানিটি বলেছে, তারা এই হামলার ঘটনাটি মূল্যায়ন করছে এবং লোহিত সাগরে মোতায়েন থাকা মার্কিন নেতৃত্বাধীন নৌ জোটকে ঘটনাটি জানিয়েছে।

অবশ্য গত অক্টোবর মাসের শেষের দিকেও ইসরায়েলের ইলাত শহরে ড্রোন হামলা চালিয়েছিল হুথি বিদ্রোহীগোষ্ঠী। গাজা যুদ্ধের প্রতিশোধে ইসরায়েলে ওই ড্রোন হামলা চালানো হয় বলেও সেসময় দাবি করে তারা।

পরে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী ইসরায়েলের দক্ষিণের দূরবর্তী শহর ইলাতের আকাশে মনুষ্যবিহীন যানের অনুপ্রবেশ শনাক্ত হয়েছে বলে জানায়। পরে ইলাতের বাসিন্দাদের সতর্ক করে দিতে বিমান হামলার সাইরেন বাজানো হয়।

মূলত ইলাত শহরটি জর্ডান এবং মিসর— উভয় দেশের সীমানার কাছে লোহিত সাগরের তীরে অবস্থিত। অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা থেকে শহরটির দূরত্ব প্রায় ২০০ কিলোমিটার।

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ইসরায়েলে বারবারই ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলার চেষ্টা করে চলেছে হুথি বিদ্রোহীরা। হামাসের সাথে ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায়ই এসব হামলার চেষ্টা করেছে তারা। এছাড়া সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে তাদের নিক্ষেপ করা কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন গুলি চালিয়ে ভূপাতিত করার দাবিও করেছে ইসরায়েল।

উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর থেকেই গাজায় ব্যাপক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভূখণ্ডটিতে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা প্রায় ২১ হাজারে পৌঁছেছে। নিহতদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

ইসরায়েলের এই হামলা থেকে বাদ যাচ্ছে না গাজার কোনও অবকাঠামো। তারা মসজিদ, গির্জা, স্কুল, হাসপাতাল, শরণার্থী শিবিরসহ বেসামরিক মানুষের বাড়ি-ঘর সব জায়গায় হামলা চালিয়ে আসছে।

এছাড়া সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে ইরাক ও সিরিয়ায় মার্কিন বাহিনীর ওপর একের পর এক আক্রমণের পাশাপাশি হিজবুল্লাহ এবং ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মধ্যে ইসরায়েল-লেবানন সীমান্তে প্রায় প্রতিদিনই গুলি বিনিময় ও হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটছে।

টিএম