ভারতীয় উপকূলে একটি ট্যাংকারে হামলার কয়েক ঘণ্টা পর লোহিত সাগরে হুথিদের এই হামলার ঘটনা ঘটে (ফাইল ছবি)

লোহিত সাগরে আবারও তেলবাহী ট্যাংকারে ড্রোন হামলার ঘটনা ঘটেছে। তেলবাহী এই ট্যাংকারটি ভারতে আসছিল এবং ইয়েমেনের সশস্ত্র বিদ্রোহীগোষ্ঠী হুথি এটিতে ড্রোন হামলা চালায়। ট্যাংকারটিতে ভারতীয়রা অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে।

তবে হামলায় হতাহতের কোনও খবর পাওয়া যায়নি। রোববার (২৪ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের নিক্ষেপ করা একটি হামলাকারী ড্রোন লোহিত সাগরে ভারতগামী একটি অপরিশোধিত তেলের ট্যাংকারে আঘাত হেনেছে বলে মার্কিন সেনাবাহিনী রোববার জানিয়েছে।

হামলার শিকার এই ট্যাংকারের নাম এম/ভি সাইবাবা। গ্যাবনের পতাকাবাহী এই ট্যাংকারে ভারতীয় আরোহীরা অবস্থান করছেন। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে দেওয়া এক বার্তায় মার্কিন সামরিক বাহিনীর সেন্ট্রাল কমান্ড বলেছে, এম/ভি সাইবাবা নামের গ্যাবনের পতাকাবাহী এই ট্যাংকারে ভারতীয়রা আছেন এবং হামলায় কারও আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। কিন্তু হামলার পর ওই এলাকায় থাকা একটি মার্কিন জাহাজে জরুরি বার্তা পাঠিয়েছে তারা।

এনডিটিভি বলছে, শনিবার ভারতীয় সময় রাত সাড়ে ১০টার দিকে এই হামলার ঘটনাটি ঘটে। এর আগে একইদিন ভারতের গুজরাট উপকূলে আরব সাগরে একটি ট্যাংকার জাহাজে ড্রোন হামলার ঘটনা ঘটে। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, জাপানি মালিকানাধীন এই রাসায়নিক ট্যাংকারে যে ড্রোন হামলা হয়েছে, তা ছোঁড়া হয়েছিল ইরান থেকে।

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে লোহিত সাগরের গুরুত্বপূর্ণ শিপিং রুটে ইয়েমেনের ইরান-সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীদের ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মধ্যে শনিবার রাতে ভারত অভিমুখী এই ট্যাংকারে আক্রমণের ঘটনাটি ঘটে।

মার্কিন সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, শনিবার রাতে দক্ষিণ লোহিত সাগরে টহলরত মার্কিন নৌবাহিনীর একটি জাহাজকে দুটি জাহাজ জানায়, তারা আক্রমণের শিকার হয়েছে। তাদের মধ্যে একটি হচ্ছে এম/ভি ব্লামানেন। এটি নরওয়েজিয়ান পতাকাবাহী রাসায়নিক ট্যাংকার।

আর দ্বিতীয় জাহাজটি হচ্ছে এম/ভি সাইবাবা। নৌযানটি জানায়, একটি একমুখী হামলাকারী ড্রোনের মাধ্যমে তারা আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। তবে এতে কোনও আঘাতের খবর পাওয়া যায়নি জানিয়ে মার্কিন সামরিক বাহিনী বলেছে, ইউএসএস ল্যাবুন ওই হামলার পর তাদের সহায়তার আহ্বানে সাড়া দেয়।

সর্বশেষ ঘটনার আগে মার্কিন সামরিক বাহিনীর এই ডেস্ট্রয়ার ইয়েমেনের হুথি নিয়ন্ত্রিত এলাকা থেকে নিক্ষেপ করা চারটি ড্রোন ভূপাতিত করেছিল।

এর আগে শনিবার ভারতের গুজরাট উপকূলে আরব সাগরে একটি ট্যাংকার জাহাজে ড্রোন হামলার ঘটনা ঘটে। ভারত উপকূলে জাপানি মালিকানাধীন রাসায়নিক ট্যাংকারে আঘাত হানা ড্রোনটি ‘ইরান থেকে ছোঁড়া হয়েছিল' বলে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন জানিয়েছে।

এছাড়া ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম চ্যানেল-১২ দাবি করে, গুজরাট উপকূলে শনিবার জাহাজে এই হামলাটি সরাসরি ইরান থেকে করা হয়। আর সমুদ্রপথ বিষয়ক একটি সংস্থা জানিয়েছে, আরব সাগরে হামলার শিকার হওয়া জাহাজটির সঙ্গে ইসরায়েলের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।

ইরান-সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীরা সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে অসংখ্য জাহাজে হামলা চালিয়েছে। তারা বলেছে, গাজায় ইসরায়েলের সামরিক আক্রমণের প্রতিবাদে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত জাহাজগুলোকে লোহিত সাগরে হামলার লক্ষ্যবস্তু করছে তারা।

এছাড়া লোহিত সাগর দিয়ে ইসরায়েলি বন্দরগুলোতে যাওয়া এবং সেখানে কর্মকাণ্ড পরিচালনার বিরুদ্ধে সমস্ত আন্তর্জাতিক শিপিং কোম্পানিকে সতর্কও করেছে গোষ্ঠীটি। এর আগে চলতি মাসেই ইসরায়েলে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইয়েমেনের ইরান-সমর্থিত এই বিদ্রোহীরা।

শনিবারের এই হামলার ঘটনা গত ১৭ অক্টোবর থেকে বাণিজ্যিক জাহাজে হুথি বিদ্রোহীদের ১৪তম এবং ১৫তম হামলা বলে মার্কিন সামরিক বাহিনী জানিয়েছে।

এর আগে গত সপ্তাহে আরও দুটি জাহাজে হামলা চালানোর দাবি করে ইয়েমেনের সশস্ত্র এই বিদ্রোহীগোষ্ঠী। সেসময় হুথির মুখপাত্র ইয়াহিয়া সারিয়া হামলার শিকার জাহাজগুলোকে এমএসসি ক্লারা এবং নরওয়েজিয়ান মালিকানাধীন সোয়ান আটলান্টিক হিসাবে চিহ্নিত করেন।

উল্লেখ্য, টানা আড়াই মাস ধরে গাজায় আগ্রাসন চালাচ্ছে ইসরায়েল এবং তাদের এই বর্বর হামলার মধ্যেই ইরান-সমর্থিত এই সশস্ত্র গোষ্ঠীটির একের পর এক হামলা আঞ্চলিক সংঘাতের ঝুঁকিকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

হুথিরা লোহিত সাগর এবং ওই সাগরের বাব আল-মান্দেব প্রণালীতে ইসরায়েলি-সংযুক্ত বেশ কয়েকটি জাহাজ আক্রমণ চালানোর পাশাপাশি জব্দও করেছে। এই সমুদ্রপথ দিয়ে বিশ্বের বেশিরভাগ তেলবাহী জাহাজ যাতায়াত করে থাকে। 

আর তাই এসব আক্রমণ লোহিত সাগরের মতো গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক বাণিজ্য পথে তেল, শস্য এবং অন্যান্য পণ্যের পরিবহন নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। এতে করে লোহিত সাগরের মধ্য দিয়ে পণ্যের বীমা এবং পরিবহনের খরচও বেড়ে গেছে।

টিএম