ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান চলছে প্রায় দুই বছর ধরে। দীর্ঘ এই সময় ধরে পশ্চিমা মিত্র দেশগুলোর সহায়তায় রুশ আগ্রাসন মোকাবিলা করছে কিয়েভ। এই পরিস্থিতিতে বিদেশে বসবাসকারী পুরুষ নাগরিকদের সেনাবাহিনীতে নেওয়ার কথা ভাবছে ইউক্রেন।

এমনকি প্রবাসী নাগরিকদের কেউ সেনাবাহিনীতে যুক্ত হতে না চাইলে শাস্তির মুখে পড়ার ঝুঁকিও রয়েছে। বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদেশে বসবাসকারী ২৫ থেকে ৬০ বছর বয়সী ইউক্রেনের পুরুষ নাগরিকদের সামরিক চাকরির জন্য রিপোর্ট করতে বলা হবে বলে ইউক্রেনীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুস্তেম উমেরভ জানিয়েছেন। তিনি এটিকে ‘আমন্ত্রণ’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন। তবে কেউ এটা না মানলে তাকে নিষিদ্ধ করা হবে বলে মনে হচ্ছে।

অবশ্য পরে একজন মুখপাত্র পরে স্পষ্ট করে বলেছেন, সশস্ত্র বাহিনীতে চাকরি করার জন্য কাউকে ডেকে পাঠানো বা তলব করার কথা বিবেচনা করা হচ্ছে না।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি গত মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, তার দেশের সাড়ে চার লাখ থেকে পাঁচ লাখ নতুন সৈন্য প্রয়োজন। কিন্তু এটি অর্জন করা ‘খুব কঠিন’।

বিবিসি বলছে, ইউক্রেনের সাম্প্রতিক পাল্টা আক্রমণ থমকে গেছে বলে মনে হচ্ছে। গত নভেম্বরে ইইউ পরিসংখ্যান সংস্থা ইউরোস্ট্যাটের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে বিবিসি ইউক্রেনীয় দেখেছে- রাশিয়ার পূর্ণ মাত্রায় আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর থেকে ১৮ থেকে ৬৪ বছর বয়সী প্রায় ৭ লাখ ৬৮ হাজার ইউক্রেনীয় পুরুষ একা দেশ ছেড়েছে।

ইইউয়ের বাইরে বসবাসকারী নাগরিক বা ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির আগে থেকে বিদেশে বসবাসকারী ইউক্রেনীয়রা এই পরিসংখ্যানের অন্তর্ভুক্ত নয়। ইউক্রেনীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুস্তেম উমেরভ এই নিয়োগ কর্মকাণ্ডকে ‘শাস্তি নয়’ বরং ‘সম্মান’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন।

তবে ‘তারা স্বেচ্ছায় না এলে কী হবে তা নিয়ে আমরা এখনও আলোচনা করছি,’ বলেও জানিয়েছেন তিনি।

কিন্তু পরে মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র কোনও ধরনের জবরদস্তি করার কথা অস্বীকার করেছেন। ইলারিয়ন পাভলিউকের উদ্ধৃতি দিয়ে ইউক্রেনীয় মিডিয়ায় বলা হয়েছে, ‘বিদেশ থেকে প্রবাসী ইউক্রেনীয় পুরুষদের সামরিক বাহিনেীতে কাজ করতে তলবের এজেন্ডা নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি।’

তিনি আরও বলেছেন, ‘প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইউক্রেনের সকল নাগরিককে সেনাবাহিনীতে যোগদানের আহ্বান জানাচ্ছেন, তারা যেখানেই থাকুন না কেন। কাউকে তলব করা হচ্ছে না মানে এই নয় যে ইউক্রেনের জন্য কোনও হুমকি নেই। এটা বিদেশে অবস্থানরত ইউক্রেনীয়দের ক্ষেত্রেও পুরোপুরি প্রযোজ্য।’

তবে ইউক্রেনের বাইরে কোনও নিয়োগ কেন্দ্র নেই এবং ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষের কাছে কাউকে বাধ্য করার কোনও উপায়ও নেই। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলছেন, এখানে সত্য বলাটা গুরুত্বপূর্ণ। সামরিক বাহিনীর জন্য ডাকা পুরুষদের জানিয়ে দেওয়া উচিত যে, তারা কীভাবে প্রশিক্ষিত ও কেমনভাবে সজ্জিত হবে, কখন ও কোথায় তারা কাজ করবে এবং কখন তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে।

এর আগে জেলেনস্কি গত মঙ্গলবার তার বছরের শেষ সংবাদ সম্মেলনে ইঙ্গিত দেন, বর্তমানে ৫ লাখ ইউক্রেনীয় সৈন্য যুদ্ধের ফ্রন্টে রয়েছে। তিনি আরও বলেন, এসব সৈন্যদের মধ্যে রোটেশন এবং ছুটি নিয়ে সমস্যা রয়েছে। বর্তমানে নিয়োগপ্রাপ্ত এবং স্বেচ্ছাসেবকরা যুদ্ধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত সেনা হিসেবে কাজ করতে বাধ্য এবং বছরে তাদের মাত্র ১০ দিনের ছুটি দেওয়া হয়।

অপরদিকে রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এই সপ্তাহে জানিয়েছেন, ইউক্রেনে তথাকথিত ‘বিশেষ সামরিক অভিযানে’ অংশ নিচ্ছে ৬ লাখ ১৭ হাজার রাশিয়ান সেনা।

টিএম