পশ্চিম তীরে সহিংসতা রোধে ইসরায়েলকে ফের তাগিদ যুক্তরাষ্ট্রের
ফিলিস্তিনের অধিকৃত পশ্চিম তীরে সহিংসতা রোধে ইসরায়েলকে ফের তাগিদ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি বলছে, পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতার বিষয়ে ইসরায়েলকে ‘আরও কিছু করতে হবে’।
এর আগে চলতি মাসেই পশ্চিম তীরে সহিংস ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ শুরু করার ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।
বিজ্ঞাপন
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পশ্চিম তীরে ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতার নিন্দা করার পাশাপাশি একজন মার্কিন কূটনীতিক মঙ্গলবার ইসরায়েলকে আক্রমণ বন্ধ করতে ‘আরও কিছু করার’ দাবি জানিয়েছেন।
জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের উপ-রাষ্ট্রদূত রবার্ট উড স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের কথা উল্লেখ করে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে বলেছেন, ‘বিশেষ সমন্বয়কারী ওয়েনেসল্যান্ড যেমন হাইলাইট করেছেন, গত বছর পশ্চিম তীরে যেসব ঘটনা উন্মোচিত হয়েছে তা আমাদের সেই বাস্তবতা থেকে আরও দূরে সরিয়ে দিয়েছে। এর মধ্যে পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপনের চলমান নির্মাণও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। যা (স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার) সম্ভাবনাকে দুর্বল করছে।’
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এই ‘হিংসাত্মক হামলার নিন্দা করে। আমরা বিশ্বাস করি, অপরাধীদের অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে’। তার ভাষায়, ‘এবং আমরা বারবার ইসরায়েলি সরকারকে এই সহিংসতার তদন্ত করতে এবং চরমপন্থি বসতি স্থাপনকারীদের অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে বলে জোর দিয়ে জানিয়ে দিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘তার চেয়েও বেশি, ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের অবশ্যই এই সহিংসতার আগুনকে উস্কানিমূলক, অমানবিক বক্তব্যের মাধ্যমে আরও উস্কে দেওয়া উচিত নয়। কারণ এই ধরনের উস্কানিমূলক কথার পরিণতি কেবল পশ্চিম তীরে নয় সারা বিশ্বেই আমরা দেখেছি।’
তিনি বলেন, গত দুই মাসে ইহুদি বিদ্বেষ ও ইসলামবিদ্বেষ বেড়েছে। সাংবাদিকদের ওপর হামলার বিষয়ে উড বলেন, সাংবাদিকদের সুরক্ষার জন্য আরও কিছু করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, সাংবাদিকরা যা ঘটছে তা শুধু দেখেই যান না। সত্য বলার চেয়ে মহৎ কাজ কমই আছে। সাংবাদিকদের লেখনি হৃদয় ও মন পরিবর্তন করে এবং মানুষকে ভালো কর্মের দিকে নিয়ে যায়।
এর আগে পশ্চিম তীরে সহিংস ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। পশ্চিম তীরে সহিংসতা নিয়ে ইসরায়েলকে কয়েক দফায় সতর্ক করার পর গত ৫ ডিসেম্বর ভিসা নিষেধাজ্ঞার এই ঘোষণা দেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন।
মূলত অবৈধভাবে বসতি স্থাপনকারী ছাড়াও সহিংসতা চালানো ইসরায়েলি নাগরিকদের বিরুদ্ধে এই ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। পরে যুক্তরাষ্ট্রের পথ ধরে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার কথা বিবেচনার কথা জানায় ইউরোপীয় ইউনিয়নও (ইইউ)।
আরও পড়ুন
এছাড়া ফিলিস্তিনিদের ওপর সহিংসতার জন্য দায়ী ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের ব্রিটেনে প্রবেশ নিষিদ্ধ করার ঘোষণা দেন যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। ইউরোপীয় ইউনিয়নও (ইইউ) একই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ক্যামেরন ব্রিটেনের এই পরিকল্পনার কথা জানান।
জাতিসংঘের প্রকাশিত এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত ৭ অক্টোবর গাজা উপত্যকার ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলে হামলা চালানোর পর ইসরায়েল-অধিকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের দৈনিক হামলার সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে।
হামাস-ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর আন্তঃসীমান্ত হামলা এবং গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যুদ্ধের দিকে যখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মনোনিবেশ করেছে, তখন পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের ক্রমবর্ধমান সহিংসতার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ইউরোপীয় কর্মকর্তারাও।
টিএম