অর্থসহায়তা ও গোলাবারুদের অভাবে সামরিক অপারেশন কাটছাঁট করতে বাধ্য হচ্ছে ইউক্রেন। দেশটির সেনাপ্রধান জেনারেল ওলেকসান্দ্র তারনাভস্কি এক সাক্ষাৎকারে এ তথ্য জানিয়েছেন।

বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া সেই সাক্ষাৎকারে জেনারেল তারনাভস্কি জানান, সামরিক বাহিনীর প্রতিটি ইউনিট গোলাবারুদের অভাবে ভুগছে এবং শিগগিরই এই সমস্যার সমাধান না হলে অদূর ভবিষ্যতে কিয়েভের সামনে ‘বিরাট বিপদ’ আসবে।

গত প্রায় দু’বছরের যুদ্ধে উল্লেখযোগ্য কোনো সাফল্য অর্জন করতে না পারায় ইউক্রেনের সঙ্গে ইউরোপের দেশগুলোর জোট ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং যুক্তরাষ্ট্রের দ্বন্দ্ব ও তার জেরে সহায়তার প্রবাহ অনিয়মিত হয়ে পড়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ইউক্রেন যদিও বলেছে যে পশ্চিমা দেশগুলোর সহায়তায় শিগগিরই দেশটি নিজেদের গোলাবারুদ নিজেরাই উৎপাদন করবে; ইউক্রেনে কারখানা স্থাপনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি অস্ত্র প্রস্তুতকারী কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিও করেছে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কির প্রশাসন।

কিন্তু বাস্তব সত্য হলো, ইউক্রেনের নিজস্ব গোলাবারুদের মজুত তলানিতে ঠেকেছে এবং বর্তমানে দেশটি পশ্চিমা দেশগুলোর সরবরাহের ওপর প্রায় পুরোপুরি নির্ভরশীল।

কিন্তু পশ্চিমা সরবরাহ যা আসছে, তা ও ইউক্রেনের চাহিদার তুলনায় বেশ কম। রয়টার্সকে জেনারেল তারনাভস্কি বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের কাছে গোলাবারুদের যে মজুত রয়েছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় বেশ কম। তাই আমরা সেগুলো বিভিন্ন ইউনিটের মধ্যে পুনর্বণ্টন করেছি এবং যতদূর সম্ভব রক্ষাণাত্মক সামরিক কৌশল অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছি। অর্থাৎ খুব প্রয়োজন পড়লে যেন সেগুলো ব্যবহার করা হয়— এমন নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ইউনিটগুলোকে।’

 প্রসঙ্গত, ইউক্রেনকে চলতি ডিসেম্বর মাসে ৬ হাজার কোটি ডলার সামরিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ইইউ, কিন্তু ইউরোপীয় এই জোটের সাম্প্রতিক বৈঠকে ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করে সেই সহায়তা আটকে দিয়েছে হাঙ্গেরি।

ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়সূত্রে জানা গেছে, গত নভেম্বর থেকে ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত ইউক্রেনে ১০ লাখ গোলা বা আর্টিলারি শেল পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ইইউ। কিন্তু এখন পর্যন্ত ইউক্রেন পেয়েছে ৪ লাখেরও কম শেল।

এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে ২০ লাখ ১৫৫এমএম গোলা পাঠিয়েছে, কিন্তু সেগুলোর মজুতও ফুরিয়ে আসছে। ইইউ জোটের অন্যতম সদস্যরাষ্ট্র এস্তোনিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলেছে, রাশিয়া সঙ্গে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হলে প্রতি মাসে ইউক্রেনের ন্যূনতম ২ লাখ আর্টিলারি শেল প্রয়োজন এবং এখন থেকে যদি দেশটিকে প্রতি মাসে এই পরিমাণ গোলা সরবরাহ করা হয়, তাহলে আগামী ২০২৪ সাল শেষ হওয়ার আগেই ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রের গোলাবারুদের মজুত শেষ হয়ে যাবে।

এদিকে ইউক্রেনের প্রতি আন্তর্জাতিক সমর্থন যে কমে আসছে, তা বেশ ভালোভাবেই টের পেয়েছে রাশিয়া। ফলে যুদ্ধ থেকে পিছু হটার কোনো লক্ষণ আপাতত রুশ বাহিনীর মধ্যে পরিলক্ষিত হচ্ছে না। গত মাসে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার লক্ষ্য অর্জন না হওয়া পর্যন্ত এই যুদ্ধ চলবে।

পুতিনের এই বক্তব্যে স্বাভাবিকভাবেই অস্বস্তিতে পড়েছে ইইউ। ন্যাটোতে নিযুক্ত এস্তোনিয়ার প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা ক্যালে ক্রিস বিবিসিকে জানিয়েছেন, ইউক্রেনে রুশ বাহিনীকে প্রতিহত করতে নিজেদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে ইউরোপীয় জোট।

‘আমরা রাশিয়াকে পরিষ্কারভাবে বলতে চাই যে ইউরোপও দীর্ঘ যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত এবং নিজেদের সম্পদকে কাজে লাগিয়ে প্রয়োজনীয় গোলাবারুদ আমরা নিজেরাই তৈরি করতে পারব,’ বিবিসিকে বলেছেন ক্যালে ক্রিস।

বিবিসি

এসএমডব্লিউ