ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে বন্দি সৈন্যদের জীবন নিয়ে জুয়া খেলছে ইসরায়েল। এমন অভিযোগই সামনে এনেছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস।

এমনকি বন্দি সেনাদের মুক্ত করার চেয়ে হত্যা করাকেই ইসরায়েল বেছে নিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছে গোষ্ঠীটি। গাজায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ইচ্ছাকৃতভাবে তিন বন্দিকে গুলি করে হত্যা করার পর হামাসের এই বক্তব্য সামনে এলো।

রোববার (১৭ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামাসের সশস্ত্র শাখা আল-কাসাম ব্রিগেড শনিবার বলেছে, ইসরায়েল তার বন্দি সৈন্যদের জীবন নিয়ে জুয়া খেলছে। যাদের মধ্যে তিনজনকে শুক্রবার ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করেছে ইসরায়েল।

এই হত্যাকাণ্ডকে সমস্যার বোঝা থেকে পরিত্রাণ পেতে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মরিয়া প্রচেষ্টার অংশ বলেও মন্তব্য করেছে হামাসের সশস্ত্র শাখা।

আল-কাসাম ব্রিগেডের মুখপাত্র আবু উবাইদা এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘পরিবারের অনুভূতিকে উপেক্ষা করে প্রতিরোধ বাহিনীর (হামাসের) হাতে আটক সৈন্যদের জীবন নিয়ে জুয়া খেলা চালিয়ে যাচ্ছে শত্রুবাহিনী।’

তিনি বলেন, ইসরায়েল গতকাল তার তিন বন্দি সৈন্যকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করেছে, তাদের মুক্ত না করে হত্যা করার পথ বেছে নিয়েছে। এটি সেই একই নির্লজ্জ অপরাধমূলক আচরণ যা ইসরায়েলি বাহিনী অনুশীলন করেছে এবং গাজায় তার বন্দিদের বিরুদ্ধেও সেটি চালিয়ে যাচ্ছে।

আবু উবাইদা এটিকে ‘সমস্যার বোঝা এবং এর প্রভাব থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য মরিয়া প্রচেষ্টা’ বলে জানান।

এর আগে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গত শুক্রবার জানায়, তাদের বাহিনী ‘দুর্ঘটনাক্রমে’ গাজা শহরের পূর্বাঞ্চলীয় শুজাইয়া এলাকায় যুদ্ধের সময় হামাসের হাতে আটক তিনজনকে হত্যা করেছে।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছে, যে তিন জিম্মি নিজ সেনাদের হাতে প্রাণ হারিয়েছেন, তারা সেনাদের দিকে আসছিলেন। তখন তাদেরকে নিরাপত্তার জন্য হুমকি মনে করে গুলি ছোড়া হয়। এসময় তাদের (নিহতদের) হাতে সাদা পতাকা ছিল।

পরবর্তীতে মরদেহের কাছে গিয়ে সন্দেহ হলে, সেগুলো ইসরায়েলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানা যায়, নিহতরা ইসরায়েলি। তাদের গত ৭ অক্টোবর হামাস গাজায় ধরে নিয়ে গিয়েছিল।

এদিকে সেনাবাহিনী বন্দিদের হত্যার কথা স্বীকার করার পরই; শুক্রবার রাতে ইসরায়েলে বিক্ষোভ শুরু হয়। সেসময় তেল আবিবে অবস্থিত প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সামনে জড়ো হন শত শত মানুষ। তারা সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেন।

সেখানে জড়ো হওয়া বন্দিদের আত্মীয়-স্বজনরা দাবি জানান, এখনও যারা গাজায় আটকে আছেন, তাদের উদ্ধারে যেন হামাসের সঙ্গে আলোচনা শুরু করা হয়।

উল্লেখ্য, টানা দেড় মাসের সংঘাতের পর গত ২৪ নভেম্বর হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি হয়। সাতদিন স্থায়ী সেই যুদ্ধবিরতির সময় ১১০ বন্দিকে মুক্তি দিয়েছিল হামাস।

অবশ্য করুণভাবে তিন বন্দির মৃত্যু ও অন্য বন্দিদের পরিবারের চাপের মুখে হামাসের সঙ্গে নতুন চুক্তি করতে আবারও আলোচনা শুরু করেছে দখলদার ইসরায়েল।

টিএম