হামাসের হাতে থাকা জিম্মিদের মুক্তি সংক্রান্ত আলোচনা শুরু করতে কাতার সফরে যাওয়ার কথা ছিল ইসরায়েলের রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দাসংস্থা মোসাদের প্রধান নির্বাহী ডেভিড বার্নিয়ার। নির্ধারিত সেই সফর বাতিল করেছে ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা।

এক প্রতিবেদনে ইসরায়েলের সম্প্রচার সংবাদমাধ্যম চ্যানেল ১৩ বলেছে, বুধবার এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন এই মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে আপাতত ইসরায়েলের কোনো সরকারি কর্মকর্তাকে কাতারে পাঠানো হবে না। মন্ত্রিসভার এ সিদ্ধান্তের ফলে কার্যত হামাসের হাতে আটক জিম্মিদের মুক্তির বিষয়টি আরও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়লো।

প্রসঙ্গত, ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাসের শীর্ষ নেতৃত্বের প্রায় সবাই কাতারে থাকেন। এর আগে গাজায় হামাস-ইসরায়েলের যুদ্ধের প্রথম অস্থায়ী বিরতির আলোচনা শুরু হয়েছিল দোহায়। ডেভিড বার্নিয়া ছিলেন সেই আলোচনায় ইসরায়েলি প্রতিনিধি দলের নেতা।

গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা ইসরায়েলের ভূখণ্ডে অতর্কিত হামলা চালানোর পর ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী। পরে ১৬ অক্টোবর থেকে অভিযানে যোগ দেয় স্থল বাহিনীও।

ইসরায়েলি বাহিনীর টানা দেড় মাসের অভিযানে কার্যত ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে গাজা উপত্যকা, নিহত হয়েছেন ১৫ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। নিহত এই ফিলিস্তিনিদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা ১০ হাজারেরও বেশি।

অন্যদিকে, হামাস যোদ্ধাদের হামলায় ইসরায়েলে নিহত হয়েছিলেন ১ হাজার ২০০ জন ইসরায়েলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিক।

ইসরায়েলি ভূখণ্ডে হামলার চালানোর দিন এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ে শত শত সামরিক-বেসামরিক মানুষকে হত্যার পাশাপাশি ২৪২ জনকে জিম্মি হিসেবে গাজায় নিয়ে গিয়েছিলেন হামাসের যোদ্ধারা। এই জিম্মিদের মধ্যে ইসরায়েলিদের সংখ্যা ১০৪ জন। বাকি ১৩৮ জনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, থাইল্যান্ড, জার্মানি, ফ্রান্স, আর্জেন্টিনা, রাশিয়া ও ইউক্রেনের নাগরিকরা রয়েছেন; এবং রয়েছেন শিশু, নারী, তরুণ-তরুণী এবং বৃদ্ধ-বৃদ্ধা— সব বয়সী মানুষ।

 দেড় মাসেরও বেশি সময় যুদ্ধের পর অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে নতি স্বীকার করে গত ২৫ নভেম্বর অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফ এবং হামাস। প্রথমে চার দিনের বিরতি ঘোষণা করলেও পরে এই বিরতির মেয়াদ আরও ৩ দিন বাড়ানো হয়।

৭ দিনের এই অস্থায়ী বিরতির সময় নিজের হাতে আটক ২ শতাধিক জিম্মির মধ্যে থেকে ৯৪ জনকে মুক্তি দিয়েছে হামাস; আর এই সময়সীমায় ইসরায়েলের বিভিন্ন কারাগার থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে ১৫০ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে।

হামাসের হাতে থাকা অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তি সংক্রান্ত আলোচনা পুনরায় শুরু করতে চলতি সপ্তাহে ফের দোহায় সফরের সূচি ছিল ইসরায়েলি প্রতিনিধি দলের।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের একটি সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, ধারণা করা হচ্ছে যে হামাসের কাছে ১৩৫ জন জিম্মি রয়েছে এবং বর্তমানে তাদের মধ্যে ১১৫ জন জীবিত রয়েছে।   

জিম্মিদের পরিবারের সদস্যদের ক্ষোভ

এদিকে যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার এই সিদ্ধান্তে ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছে ইসরায়েলি জিম্মিদের পরিবারের সদস্যরা। এক লিখিত বিবৃতিতে তারা জানিয়েছেন, ‘আমরা এই সিদ্ধান্তে স্থম্ভিত এবং সরকারের উদাসীনতা ও বর্তমান অচলাবস্থায় অতীষ্ঠ। সাধারণ ইসরায়েলের জীবনের মূল্য তাদের কাছে নেই।’

সূত্র : সিএনএন, এনডিটিভি

এসএমডব্লিউ