ভারতের সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা লঙ্ঘন করে দুই যুবকের আকস্মিক ঢুকে পড়ার একদিন পর বিরোধীদলীয় অন্তত ১৫ সাংসদকে বরখাস্ত করা হয়েছে। সংসদে অসাংবিধানিক আচরণ এবং অধিবেশনে বাধা দেওয়ার অভিযোগে বৃহস্পতিবার তাদের বরখাস্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে দেশটির সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভার ১৪ এবং উচ্চকক্ষ রাজ্যসভার একজন সাংসদকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

দেশটির সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি বলছে, বুধবার দুপুরের দিকে সংসদে বড় ধরনের নিরাপত্তা লঙ্ঘনের পরদিন সংসদের কার্যক্রম ব্যাহত করার জন্য লোকসভার ১৪ জন বিরোধী সাংসদ এবং রাজ্যসভার একজনকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে সংসদে উপস্থিত না থাকা সদস্য ডিএমকে দলীয় এসআর পার্থিবনকেও বরখাস্তকৃত সাংসদদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল।

এ নিয়ে প্রতিবাদের পর তার স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে সন্ধ্যার দিকে বরখাস্তকৃত সাংসদের সংখ্যা একের পর এক কমে যায়। এসআর পার্থিবন বলেছেন, তার নাম ভুলবশত অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল।

এনডিটিভি বলছে, বরখাস্ত হওয়া সাংসদদের তালিকায় পার্থিবনের নাম ছিল। তবে তিনি সংসদে উপস্থিত ছিলেন না বলে ডিএমকের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। বলা হয়, তিনি তামিলনাড়ুতে রয়েছেন। পরে তার বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।

বরখাস্তকৃত সাংসদদের মধ্যে দেশটির বিরোধী রাজনৈতিক দল কংগ্রেসের ৯, সিপিএমের ২, সিপিআইয়ের ১ এবং ডিএমকের একজন রয়েছেন। বরখাস্ত হওয়া সাংসদদের তালিকায় আছেন কংগ্রেস দলীয় মানিকম ঠাকুর, মো. জাভেদ, ভি কে শ্রীকান্দন, বেনি বেহানান, ডিএমকে সাংসদ কে কানিমোঝি, সিপিএম সাংসদ পিআর নটরাজন এবং এস ভেঙ্কটেশান এবং সিপিআই সাংসদ কে সুব্বারায়ণ।

এদিকে, তৃণমূল কংগ্রেস দলীয় সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েনকেও বৃহস্পতিবারের অধিবেশনের বাকি অংশের জন্য অস্বাভাবিক আচরণের দায়ে রাজ্যসভা থেকে বরখাস্ত করা হয়। তবে তিনি সংসদ থেকে চলে যেতে অস্বীকৃতি জানান। বিজেপির সাংসদ পীযূষ গয়েলের একটি প্রস্তাবের পর সংসদের বিশেষাধিকার সংক্রান্ত কমিটির কাছে তার বিষয়টি পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

রাজ্যসভায় কংগ্রেসের সাংসদ কেসি ভেনুগোপাল বরখাস্তের আদেশকে ‘‘ভয়ানক, অগণতান্ত্রিক পদক্ষেপ’’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।

এর আগে, ভারতের সংসদবিষয়ক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী কংগ্রেসের পাঁচ সাংসদ— টিএন প্রথাপন, হিবি ইডেন, জোথিমনি, রাম্য হরিদাস এবং ডিন কুরিয়াকোসকে অধিবেশনের বাকি অংশের জন্য বরখাস্ত করার একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেন বলে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে।

দেশটির সংসদের শীতকালীন অধিবেশন আগামী ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। ততদিন পর্যন্ত এই সাংসদরা বরখাস্ত থাকবেন জানিয়ে আগামীকাল (শুক্রবার) সকাল ১১টা পর্যন্ত সংসদের অধিবেশন মুলতবি করা হয়।

বুধবার লোকসভার শীতকালীন অধিবেশন চলাকালে বড় ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে। দেশটির এই সংসদ ভবনে প্রাণঘাতী হামলার ২২তম বার্ষিকীতে লেকাসভায় আইনপ্রণেতাদের আসনে অতর্কিত ঢুকে পড়েন দুই যুবক। তারা হলুদ ধোঁয়া ছড়িয়ে সংসদ কক্ষে আতঙ্ক তৈরি করেন। এ সময় প্রাণ ভয়ে সংসদের অনেক সদস্য দৌড়াদৌড়ি করে পালিয়ে যান।

পরে সংসদের নিরাপত্তারক্ষীরা ওই দুই যুবককে আটক করেন। একই সময়ে সংসদ ভবনের বাইরে থেকে আরও দুজনকে আটক করা হয়। প্রাথমিক তদন্তে এই ঘটনায় ৬ জন জড়িত বলে জানা গেছে।

বৃহস্পতিবার ব্যাপক আলোচিত এই ঘটনা নিয়ে সংসদ অধিবেশনে বিরোধীদলীয় সাংসদদের সাথে সরকারি দলের সাংসদদের উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। সংসদ কক্ষেই কয়েক দফায় বিক্ষোভ করেন বিরোধীরা। দুই যুবকের অনুপ্রবেশ নিয়ে সংসদের উভয়কক্ষ— লোকসভা ও রাজ্যসভায় দেশটির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর বিবৃতি দাবি করেন বিরোধী দলীয় সাংসদরা। এতে চরম হট্টগোল তৈরি হয়। এর এক পর্যায়ে লোকসভার অধিবেশন স্থানীয় সময় বিকেল ৩টা পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।

বিরোধীদের তীব্র হট্টগোলের মাঝেই সংসদবিষয়ক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী লোকসভার ১৪ জন সাংসদকে বরখাস্ত করার প্রস্তাব তোলেন। পরে কণ্ঠভোটে তার সেই প্রস্তাব পাস হয়। একই দিনে রাজ্য সভায়ও বিরোধী দলীয় এক সাংসদকে বরখাস্তের প্রস্তাব গৃহীত হয়।

২০০১ সালের ১৩ ডিসেম্বর লোকসভার পুরোনো ভবনে সন্ত্রাসী হামলায় এক এক ডজনেরও বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটে। ওই সময় পাঁচ বন্দুকধারী সংসদে ঢুকে এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। এই হামলায় পাকিস্তান-ভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী জইশ-ই-মোহাম্মদ জড়িত বলে অভিযোগ করে নয়াদিল্লি।

সূত্র: এনডিটিভি, পিটিআই।

এসএস