অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ১৭৯ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলি নির্বিচার হামলায় একই সময়ে আহত হয়েছেন আরও কমপক্ষে ৩০৩ ফিলিস্তিনি। বৃহস্পতিবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আশরাফ আল-কুদরা ইসরায়েলি হামলায় ফিলিস্তিনিদের হতাহতের এই তথ্য জানিয়েছেন।

হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধের সর্বশেষ তথ্য জানিয়ে তিনি বলেছেন, গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি হামলায় গাজায় ফিলিস্তিনিদের প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে ১৮ হাজার ৭৮৭ জনে পৌঁছেছে। হামলায় আহত হয়েছেন আরও ৫০ হাজার ৮৯৭ জন।

এছাড়া ইসরায়েলি হামলায় আরও অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা রয়েছেন বলে জানিয়েছেন আল-কুদরা। এদিকে, বৃহস্পতিবার গাজা উপত্যকাজুড়ে ইসরায়েলি বিমান থেকে নির্বিচার বোমা হামলা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

গাজায় হামলায় লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণে আরও নিখুঁত উপায় অবলম্বনের বার্তা দিতে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান ইসরায়েলে পৌঁছেছেন। বৃহস্পতিবার তার সাথে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু যখন বৈঠক করছিলেন, তখনও গাজায় বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।

রয়টার্স বলছে, হামাসের সাথে ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেস্তে যাওয়ার দুই সপ্তাহ পর যুদ্ধ এখন পুরো গাজা উপত্যকায় চলছে এবং সেখানে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়কর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। গাজার দক্ষিণের মিসর সীমান্ত লাগোয়া রাফাহ এলাকায় অস্থায়ী শিবিরে রাতে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে এক ডজনের বেশি মানুষ নিহত ও আর অনেকে আহত হয়েছেন। হতাহতদের মধ্যে কয়েকজন শিশুও রয়েছে।

রাফাহর পার্শ্ববর্তী আবু ধাবা এবং আশুর এলাকার বাড়িঘর লক্ষ্য করে ইসরায়েলি বাহিনীর বিমান হামলা হয়েছে। এতে অনেক বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেছে। গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বলেছে, সেখানে অন্তত ২৬ জন নিহত হয়েছেন। 

গত সপ্তাহে মার্কিন ভেটোতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতির একটি প্রস্তাব বাতিল হয়ে যায়। এরপর চলতি সপ্তাহে সাধারণ পরিষদে বিপুল সমর্থনে পাস হওয়া আরেকটি প্রস্তাবসহ যুদ্ধবিরতির আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে ইসরায়েল।

অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ‘বিজয়’ না পাওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে বলে জানিয়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। তার দাবি, ‘কোনও কিছুই ইসরায়েলকে থামাতে পারবে না’। নেতানিয়াহু এমন এক সময়ে এই মন্তব্য করেছেন যখন গাজায় বেসামরিক হতাহতের জেরে বিশ্বজুড়ে চাপের মুখে পড়েছে ইসরায়েল।

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। ওইদিন হামাসের হামলায় ইসরায়েলে এক হাজার ২০০ জনের প্রাণহানি ঘটে। এরপর থেকে টানা দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে গাজায় আগ্রাসন চালাচ্ছে ইসরায়েল। ইসরায়েলি এই আগ্রাসনের উপত্যকাজুড়ে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।

গাজার ২৩ লাখ বাসিন্দার প্রায় সবাই বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। খাদ্য ও চিকিৎসাসামগ্রীর সরবরাহ ফুরিয়ে আসছে এই উপত্যকায়। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন দাতব্য সংস্থা বলছে, তারা গাজা উপত্যকায় ‘‘ক্ষুধা ও রোগে’ বিপুলসংখ্যক মানুষের প্রাণহানি ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন।

সূত্র: আলজাজিরা, রয়টার্স।

এসএস