হামাসের প্রতিষ্ঠার ৩১তম বার্ষিকী উপলক্ষে গাজা শহরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে হামাস যোদ্ধাদের দেখা যাচ্ছে। ছবিটি ২০১৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর তোলা

টানা ২ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলছে ইসরায়েল ও হামাসের সংঘাত। ইসরায়েল বলছে, হামাসকে তারা নির্মূল করতে চায়। কিন্তু হামাসকে কি আসলেই সম্পূর্ণ নির্মূল করা সম্ভব?

বিশেষজ্ঞদের এক কথায় উত্তর, ‘না’। বরং তাদের বক্তব্য, ইসরায়েল অভিযান চালিয়ে হামাস নেতাদের মারতে পারে। কিন্তু তাদের মতাদর্শ ধ্বংস করা সম্ভব নয়।

বিশেষজ্ঞদের একটি বড় অংশের বক্তব্য, রাজনৈতিক সমাধানই এই সংঘাত শেষ করার একমাত্র রাস্তা। কিন্তু ইসরায়েলের বক্তব্য খুব পরিষ্কার। প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু থেকে শুরু করে সরকারের প্রায় সমস্ত উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা একাধিকবার জানিয়ে দিয়েছেন, তাদের এক এবং একমাত্র লক্ষ্য হামাস নেতাদের নির্মূল করা।

সম্প্রতি নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, হামাস নেতারা যদি আত্মসমর্পণ করেন, তাহলে তাদের প্রাণভিক্ষা দেওয়া হবে। ইসরায়েলি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতেও বার বার একটি স্লোগান দেখাচ্ছে-- ‘টুগেদার উই উইন’ অর্থাৎ, আমরা একসঙ্গে লড়ে জিতব। কিন্তু সত্যিই কি এই বিজয় সম্ভব? বিশেষজ্ঞদের বড় অংশ মনে করছেন- না।

গত ৭ অক্টোবরের ঘটনার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় লাগাতার বোমাবর্ষণ করে চলছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী সেখানে অভিযান চালাচ্ছে। প্রায় ২০ লাখ মানুষ বসবাস করেন এই গাজা উপত্যকায়। কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে সেখানে। বহু হামাস নেতারও মৃত্যু হয়েছে।

কিন্তু বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, এইভাবে হামাসকে নির্মূল করা সম্ভব নয়। কারণ, হামাস কেবলমাত্র একটি সশস্ত্র সংগঠন নয়। জার্মান ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের বিশেষজ্ঞ গুইডো স্টেইনবার্গের বক্তব্য, গাজা উপত্যকায় অন্তত ২০ থেকে ৩০ হাজার হামাস যোদ্ধা আছে। কিন্তু তার চেয়েও বড় কথা, গাজার মানুষ হামাসকে সমর্থন করে। তাদের কাছে হামাস একটি সামাজিক সংগঠন। যারা তাদের অধিকারের জন্য লড়াই করছে।

২০০৭ সাল থেকে গাজা ভূখণ্ড পরিচালনা করছে হামাস। দাওয়াহ বলে তাদের একটি সামাজিক সংগঠন আছে। এই দাওয়াহ-তে কাজ করে অন্তত ৮০ থেকে ৯০ হাজার মানুষ। তারা যোদ্ধা নন, ভল্যান্টিয়ার।

কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আরব স্টাডিজের অধ্যাপক রশিদ খালিদি জানিয়েছেন, ‘ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অভিযান চালাচ্ছে, এর ফলে সেখানে হামাস নেতাদের মারা সম্ভব কিন্তু হামাসের রাজনৈতিক অবস্থান এবং মতাদর্শকে ধ্বংস করা সম্ভব নয়।’

খালিদির বক্তব্য, অভিযান চালিয়ে হামাসের নেতাদের ইসরায়েল হত্যা করতে পারে। কিন্তু হামাসের রাজনৈতিক এবং সামাজিক অবস্থানকে ধ্বংস করতে পারবে না। ফলে রাজনৈতিক সমাধানই এই সংঘাত শেষ করার একমাত্র রাস্তা।

টিএম