স্বপ্নের দেশ কানাডা থেকে চলে যাচ্ছেন অভিবাসীরা
উত্তর আমেরিকার দেশ কানাডায় যাওয়া এবং সেখানে স্থায়ী হওয়া অনেকের স্বপ্ন। সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে কানাডায় পাড়ি দেন বিশ্বের অসংখ্য মানুষ। তবে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম রয়টার্স রোববার (১০ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, জীবনযাপনের ব্যয় অস্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং আবাসন সংকটের কারণে অনেক অভিবাসী কানাডা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।
কানাডার যেসব স্থায়ী নাগরিক রয়েছেন তাদের বেশিরভাগই বয়স্ক। এছাড়া দেশটিতে জন্মহারও কম। এ কারণে চাহিদার তুলনায় সেখানে মানবসম্পদ কম। আর এই মানবসম্পদের সমস্যা দূর করতে অভিবাসনকে নিজের অন্যতম বড় অস্ত্র হিসেবে তৈরি করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। তার উদার নীতির কারণে অসংখ্য নতুন অভিবাসী দেশটির অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে তুলেছে। সেই সুবাদে গত ছয় দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো জনসংখ্যাও বেড়েছে কানাডার।
বিজ্ঞাপন
তবে এখন উল্টো অভিবাসীদের কানাডা ছাড়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। ২০২৩ সালের প্রথম ছয় মাসে প্রায় ৪২ হাজার অভিবাসী কানাডা ছেড়েছেন। যদিও গত বছর এই সংখ্যা ছিল ৯৩ হাজার ৮১৮ জন। অপরদিকে ২০২১ সালে কানাডা ছেড়ে অন্যত্র পাড়ি জমিয়েছেন ৮৫ হাজার ৯২৭ জন।
আরও পড়ুন
ইনস্টিটিউট ফর কানাডিয়ান সিটিজেনশিপের প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত কয়েক দশকের মধ্যে ২০১৯ সালে রেকর্ডসংখ্যক অভিবাসী কানাডা ছেড়ে গেছেন। করোনা মহামারির লকডাউনের সময় এই প্রবণতা কমলেও এখন তা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
একই সময়ে কানাডায় নতুন করে আরও ২ লাখ ৬৩ হাজার অভিবাসী আসলেও দেশত্যাগের প্রবণতা বৃদ্ধির বিষয়টি পর্যবেক্ষকদের ভাবাচ্ছে। কানাডার মতো একটি দেশ; যেটি অভিবাসনের ওপর তৈরি হয়েছে, সেই দেশ থেকে মানুষের চলে যাওয়ার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর নীতির জন্য বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিজের অভিবাসন নীতির ওপর ভিত্তি করে গত ৮ বছরে তিনি ২৫ লাখ মানুষকে দেশটিতে স্থায়ী বসবাসের অনুমতি দিয়েছেন।
আরও পড়ুন
কানাডায় বেশ কয়েকজন অভিবাসীর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স। যাদের কয়েকজন ইতিমধ্যে কানাডা ছেড়ে চলে গেছেন। অন্যরা চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। তারা বলেছেন, অস্বাভাবিক বাড়ি ভাড়ার কারণেই তারা বাধ্য হয়ে কানাডা ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।
তাদের একজন ২৫ বছর বয়সী কারা (ছদ্মনাম)। যিনি হংকং থেকে শরণার্থী হিসেবে ২০২২ সালে কানাডায় পাড়ি জমান। কারা বলেছেন, কানাডায় এসে একটি বেজমেন্ট রুমে থাকছেন তিনি। কিন্তু এই রুমের জন্য তাকে মাস ৬৫০ কানাডিয়ান ডলার (৫৩ হাজার টাকা) ভাড়া দিতে হয়। তিনি যা আয় করেন তার ৩০ শতাংশই ভাড়ায় চলে যায়।
তিনি বলেন, ‘‘আমি কখনো একটি পশ্চিমা দেশ ছাড়ার কথা ভাবিনি। আপনি শুধুমাত্র বেজমেন্টে একটি রুমই ভাড়া নিতে পারবেন।’’ কারা তার আসল নাম প্রকাশ করেননি। কারণ তিনি ২০১৯ সালের হংকং আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন
কারা বলেন, কানাডায় বর্তমানে তিনটি পার্টটাইম চাকরি করেন তিনি। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রেডিট অর্জনের জন্য পড়াশোনাও করেন। তিনি বলেন, ‘‘আমি এখানে সব অর্থ খরচ করে ফেলি। হংকংয়ে থাকা অবস্থায় আয়ের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ সঞ্চয় করতে পারতাম।’’
সূত্র: রয়টার্স
এমটিআই