ভারতে প্রথমবারের মতো একদিনে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন দুই লাখেরও বেশি মানুষ, মারা গেছেন এক হাজারের বেশি। বৃহস্পতিবার (১৫ এপ্রিল) দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় একথা জানিয়েছে।

করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় রীতিমতো কাঁপছে ভারত। দেশটিতে ভয়াবহভাবে বেড়েই চলেছে ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। বৃহস্পতিবারের এই পরিসংখ্যান করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে সর্বোচ্চ।

বৃহস্পতিবার সকালে দেওয়া ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ৭৩৯ জন। এতে দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে এক কোটি ৪০ লাখ। মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যায় বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে ভারত। তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রের পরই দেশটির অবস্থান।

করোনায় আক্রান্তের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে এলেও মৃতের তালিকায় দেশটির অবস্থান চতুর্থ। গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৩৮ জনের। এ নিয়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে দেশটিতে মোট মারা গেলেন এক লাখ ৭৩ হাজার ১২৩ জন।

করোনাভাইরাস ভারতে ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। ভাইরাসের প্রথম ঢেউয়ে দেশটিতে একদিনে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা এক লাখের ঘর পেরোয়নি। কিন্তু দ্বিতীয় ঢেউ যে আরও বড় আকারে এসেছে তা বুঝিয়ে দিচ্ছে গত কয়েক সপ্তাহের পরিসংখ্যান।

দ্বিতীয় ঢেউয়ের জেরে দৈনিক মৃত্যু পর পর দু’দিন হাজার ছাড়াল। এদিকে একদিকে যেমন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, অন্যদিকে কমে আসছে সুস্থ হয়ে ওঠার শতকরা হার।

গত বছর নভেম্বর থেকে দেশটিতে সংক্রমণ কিছুটা নিম্নমুখী হলেও চলতি বছর মার্চের মাঝামাঝি থেকে তা আবারও বাড়তে শুরু করে। গত এক সপ্তাহ ধরে দেশটিতে দৈনিক এক লাখেরও বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতে করোনা সংক্রমণের সাম্প্রতিক এই উল্লফনের প্রধান কারণ হচ্ছে- করোনা বিধিনিষেধ মানার ব্যাপারে সাধারণ মানুষের উদাসীনতা।

দৈনিক সংক্রমণের এই বৃদ্ধির কারণে ভারতে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে লক্ষাধিক সক্রিয় রোগী বেড়েছে। ভারতে এখন সক্রিয় রোগীর সংখ্যা প্রায় ১৪ লাখ ৭২ হাজার। এই বিপুল সংখ্যক সক্রিয় রোগী বৃদ্ধির কারণে হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে জায়গা ক্রমেই কমে আসছে।

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের শুরুতে মহামারির ভয়াবহতা মোটামুটি ৮ থেকে ৯ রাজ্যেই আবদ্ধ ছিল। কিন্তু গত কয়েকদিনে আরও কয়েকটি রাজ্যে বেড়েছে সংক্রমণ। ভারতজুড়ে ১৮-১৯টি রাজ্যে এখন উল্লেখযোগ্য সংক্রমণ হচ্ছে।

তবে সবার শীর্ষে রয়েছে মহারাষ্ট্রের নাম। সংক্রমণ রোধে রাজ্যটিতে কারফিউ জারির পরও গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে প্রায় ৫৯ হাজার মানুষ নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। উত্তরপ্রদেশে এই প্রথমবারের মতো একদিনে নতুন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছাড়িয়েছে ২০ হাজার। রাজধানী দিল্লিতে ছাড়িয়েছে ১৭ হাজার।

ছত্তিশগড়ে বৃহস্পতিবার নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ১৪ হাজারের বেশি। কর্নাটকেও আক্রান্ত ১১ হাজার ছাড়িয়েছে। মধ্যপ্রদেশে ৯ হাজার ৭২০, কেরালায় ৮ হাজার ৭৭৮, তামিলনাড়ুতে ৭ হাজার ৮১৯, গুজরাটে ৭ হাজার ৪১০, রাজস্থানে ৬ হাজার ২০০ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন।

পশ্চিমবঙ্গেও চলতি সপ্তাহে আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে ৬ হাজারের কাছাকাছি পৌঁছৈছে। হরিয়ানার অবস্থাও একই। বিহার, অন্ধ্রপ্রদেশে দৈনিক আক্রান্ত ৪ হাজারের বেশি। পাঞ্জাব, ঝাড়খণ্ড, তেলঙ্গানায় দৈনিক আক্রান্ত ৩ হাজারের বেশি। উত্তরাখণ্ড, জম্মু ও কাশ্মীর এবং উড়িষ্যাতেও বাড়ছে আক্রান্ত।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এরপর গত বছরের ১১ মার্চ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) করোনাকে ‘বৈশ্বিক মহামারি’ হিসেবে ঘোষণা করে। এর আগে একই বছরের ২০ জানুয়ারি জরুরি পরিস্থিতি ঘোষণা করে ডব্লিউএইচও। বিশ্ব এখন করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলা করছে।



আরো পড়ুন: করোনাভাইরাস পরিস্থিতির সর্বশেষ। 

সূত্র: এনডিটিভি

টিএম