টানা দুই মাস ধরে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় চলছে ইসরায়েলের আগ্রাসন। এতে এখনও পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ১৭ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। নিহতদের ৭০ শতাংশই নারী ও শিশু।

এই পরিস্থিতিতে গাজায় বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সাথে টেলিফোনে আলাপকালে একথা জানান তিনি।

শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সাথে ফোনালাপে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা দেওয়ার ‘অতীব প্রয়োজনীয়তার’ কথা উল্লেখ করেছেন বলে বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউস জানিয়েছে।

হোয়াইট হাউস এক বিবৃতিতে বলেছে, প্রেসিডেন্ট বাইডেন ইসরায়েলকে ‘হামাস থেকে বেসামরিক নাগরিকদের আলাদা করার পাশাপাশি সংঘর্ষ চলছে এমন এলাকা থেকে জনগণকে নিরাপদে সরে যেতে দেওয়ার’ প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘প্রেসিডেন্ট গাজায় মানবিক সাহায্যের ক্রমাগত এবং টেকসই প্রবাহের গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছেন। প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণ নিশ্চিত করতে জ্বালানি সরবরাহের মাত্রা বাড়ানোর জন্য সম্প্রতি ইসরায়েল যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটিকেও স্বাগত জানিয়েছেন তিনি। তবে তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, গাজাজুড়ে আরও অনেক বেশি সহায়তা জরুরিভাবে প্রয়োজন।’

হোয়াইট হাউস বলেছে, ‘প্রেসিডেন্ট গাজায় থাকা বন্দিদের জন্য তার গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। হামাসের হাতে আটক বন্দিদের ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব রেড ক্রস (আইসিআরসি)-এর হাতে তুলে দিতে হবে বলেও পুনর্ব্যক্ত করেছেন তিনি।’

উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।

মাঝে হামাসের সাথে এক সপ্তাহব্যাপী মানবিক বিরতির পর গত শুক্রবার থেকে গাজা উপত্যকায় পুনরায় বিমান ও স্থল হামলা শুরু করে ইসরায়েল। বিরতির পর শুরু হওয়া এই অভিযানে গাজায় হামলা আরও তীব্র করেছে দখলদার সেনারা।

গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করার পর থেকে সেখানে কমপক্ষে ১৭ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত এবং আরও ৪৬ হাজার মানুষ বেশি আহত হয়েছেন।

নিহত এসব ফিলিস্তিনিদের মধ্যে কমপক্ষে ৭ হাজার ১১২ জন শিশু এবং ৪ হাজার ৮৮৫ জন নারী রয়েছেন। এছাড়া ভূখণ্ডটিতে এখনও প্রায় ৭ হাজার ৬০০ জন নিখোঁজ রয়েছেন।

আনাদোলু বলছে, গাজায় আনুমানিক ১৯ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, যা ভূখণ্ডটির মোট জনসংখ্যার ৮৫ শতাংশ। জাতিসংঘের মতে, গাজার অনেকেরই খাদ্য, পানি, মর্যাদাপূর্ণ আশ্রয় এবং স্যানিটেশন সুবিধার পাশাপাশি চিকিৎসা সেবার মতো প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধার অভাব রয়েছে।

এদিকে জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহর সঙ্গে পৃথক ফোনালাপ করেছেন জো বাইডেন। সেই ফোন কলে মার্কিন ডেমোক্র্যাটিক এই প্রেসিডেন্ট ‘গাজার বেসামরিক নাগরিকদের জীবন রক্ষাকারী মানবিক সহায়তার বর্ধিত, টেকসই বিতরণের বিষয়ে তার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করার পাশাপাশি এই প্রচেষ্টায় জর্ডানের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারিত্বের জন্য বাদশাহকে ধন্যবাদ জানান।’

হোয়াইট হাউস বলেছে, ‘প্রেসিডেন্ট এবং বাদশাহ আবদুল্লাহ মধ্যপ্রাচ্যে টেকসই ও স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আবহ তৈরি করতে একসঙ্গে এবং অন্যান্য আঞ্চলিক অংশীদারদের সাথে কাজ করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন।’

টিএম