ভারতের উত্তরাখণ্ড রাজ্যের উত্তর কাশীতে নির্মাণাধীন টানেল থেকে অবশেষে উদ্ধার করা হয়েছে আটকে পড়া ৪১ শ্রমিককে। দীর্ঘ ১৭ দিন টানেলের ভেতর আটকে ছিলেন তারা।

১২ নভেম্বর ভোরে নাইট শিফট শেষে যখন তারা টানেল থেকে বের হচ্ছিলেন, তখন এটির একটি অংশ ধসে পড়ে। এরপর শ্রমিকরা আটকে যান। বিশেষজ্ঞ উদ্ধারকারীদের আপ্রাণ চেষ্টায় মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) সন্ধ্যায় মুক্ত হন তারা। রুদ্ধশ্বাস এক অভিযানের সাক্ষী হয়েছে বিশ্ব। ভারতে এ ধরনের দীর্ঘ অভিযান প্রথমবার হলেও অন্য দেশে এর চেয়ে বেশি দিন অভিযান চালিয়ে উদ্ধারের নজির রয়েছে।

চিলির খনিতে ৬৯ দিনের উদ্ধার অভিযান

দক্ষিণ আমেরিকার চিলিতে সোনার খনিতে ৩৩ জন শ্রমিক আটকে পড়েছিলেন। ২০১০ সালের সালের ৫ আগস্টের ঘটনা এটি।

খনির প্রবেশ ও বের হওয়ার পথ ধস নেমে বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় ২৩০০ ফুট নিচে আটকে পড়েন শ্রমিকরা। এরপর ২২ আগস্ট আটকে পড়া শ্রমিকদের সঙ্গে সংযোগস্থাপন সম্ভব হয়। জানা যায়, ৩৩ জনই ভালো আছেন। যদিও তাদের কাছে খাবার ছিল সামান্য। প্রায় ১৮ দিন অভুক্ত ছিলেন ওই শ্রমিকরা।

প্রায় ৬৯ দিনের চেষ্টায় আরেকটি টানেল তৈরি করা হয়। তারপর ক্রেন দিয়ে শ্রমিকদের জীবিত উদ্ধার করা হয়।

থাইল্যান্ডে গুহা থেকে ১৮ দিনের উদ্ধার অভিযান

২০১৮ সালের ২৩ জুন থাইল্যান্ডের থামল্যাং গুহায় আটকে যান ১২ জন ফুটবলার ও একজন কোচ। হঠাৎ বন্যায় ওই এলাকায় পানির স্তর বেড়ে যায়। তার কারণেই বন্ধ হয়ে যায় ওই গুহার প্রবেশপথ। এমন পরিস্থিতিতে ফুটবলারদের নিয়ে কোচ গুহার আরও গভীরে প্রবেশ করেন। গুহার মধ্যে যে জায়গাটি পাতায়া সৈকতের কাছে, সেখানে শুকনো জায়গা খুঁজে পান তারা। সেখানেই আশ্রয় নেয় দলটি। গুহার দেয়াল বেয়ে নেমে আসা পানি খেয়ে দিন কাটিয়েছেন তারা।

এ ঘটনাটি প্রথমে নজরে আসেনি। যখন কিশোরদের মা-বাবারা সন্তানদের নিখোঁজের অভিযোগ করেন তারপর সন্ধান শুরু হয়। ওই গুহার বাইরে কিশোরদের সাইকেলগুলো পাওয়া গেলে সন্দেহ হয় যে গুহার মধ্যে হয়ত ওই কিশোররা আটকে রয়েছে। তারপর শুরু হয় উদ্ধার অভিযান। থাইল্যান্ডের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক সাহায্য নেওয়া হয়। মার্কিন বিমানবাহিনীর উদ্ধারকারী বিশেষজ্ঞরা আসেন। ব্রিটেন, বেলজিয়াম, অস্ট্রেলিয়া, স্ক্যান্ডেনেভিয়া থেকে কেভ ডাইভার্সরা আসেন। আরও অনেক দেশ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। ঘটনার ১৮ দিন পর ১০ জুলাই উদ্ধার করা হয় ওই ফুটবলারদের এবং কোচকে।

তাসমানিয়ার সোনার খনিতে উদ্ধার অভিযান

২০০৬ সালে তাসমানিয়ায় একটি ঘটনা ঘটেছিল। ওই বছরের ২৫ এপ্রিল ভূমিকম্পের কারণে একটি সোনার খনিতে দুজন শ্রমিক আটকে যান। তারা ভূপৃষ্ঠ থেকে এক কিলোমিটার গভীরে ছিলেন। প্রাথমিকভাবে মনে করা হয়েছিল, তারা হয়ত বেঁচে নেই। কিন্তু থার্মাল ক্যামেরায় পাঁচ দিন পর ধরা পড়ে ওই দুজন জীবিত রয়েছেন। তখন তাদের জন্য খাবার, পানি ও ওষুধ পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। প্রায় সপ্তাহখানেকের চেষ্টায় তাদের উদ্ধার করা হয়।

এসএসএইচ