রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নির্দেশে ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা চালায় রুশ সেনারা। ওই সময় রাশিয়ান সেনাদের ঠেকাতে স্বেচ্ছায় সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন হাজার হাজার ইউক্রেনীয়। তবে দীর্ঘ দুই বছর ধরে চলা এ যুদ্ধ নিয়ে এখন ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন দেশটির সাধারণ মানুষ।

ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে ওঠে এসেছে যুদ্ধ নিয়ে সাধারণ মানুষের বর্তমান অবস্থান।

প্রতিবেদনের শুরুতে আন্তোনিয়া দানেলোভচ নামের এক নারীর কথা তুলে ধরা হয়েছে। যার স্বামী একজন সাধারণ লেকচারার হয়েও যুদ্ধের শুরুতে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন। এরপর দুই বছর ধরে সেনাবাহিনীতেই রয়েছেন তিনি।

আন্তোনিয়া দানেলোভচ বলেছেন, ২০২২ সালের মার্চে যখন সেনাবাহিনীতে তার স্বামীর নাম তালিকাভুক্ত করা হয় তখন রাজধানী কিয়েভের একটি ড্রাফট অফিসে যান তারা। সেখানে গিয়ে দেখতে পান তার স্বামীর মতো শত শত পুরুষ ড্রাফট অফিসে এসেছেন সেনাবাহিনীতে যুক্ত হতে। কিন্তু এখনকার চিত্র পুরোপুরি ভিন্ন। ড্রাফট অফিসগুলো এখন ফাঁকা পড়ে থাকে।

৪১ বছর বয়সী এ নারী পেশায় একজন এইচআর ম্যানেজার। যুদ্ধের শুরুতে স্বামীকে সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে নিজে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। কিন্তু এখন জীবন সংগ্রামের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে হিমশিম খাচ্ছেন। তার মতে, এ যুদ্ধের কোনো শেষ দেখতে পাচ্ছেন না; যা তাদের পীড়া দিচ্ছে। তার স্বামী গত দুই বছরে মাত্র ২৫ দিন বাড়িতে থাকার সুযোগ পেয়েছিলেন। যুদ্ধ এবং নিজের স্বামী নিয়ে এখন ‘ক্লান্ত’ হয়ে পড়েছেন তিনি। কারণ তার দুই সন্তান এখন বাবাদের ছাড়াই বেড়ে ওঠছে। এমনকি চলতি বছর ছেলের বিয়েতেও উপস্থিত হতে পারেননি তার স্বামী। এর বদলে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাখমুত থেকে ভিডিওকলে বিয়েতে যুক্ত হয়েছিলেন তিনি।

আন্তোনিয়া দানেলোভচের কথা, তার স্বামীসহ যারা যুদ্ধের শুরুতে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন তারাই এখন পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন। এখন এসব সেনাদের বিশ্রাম দিয়ে অন্যদের যুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন তিনি।

আন্তোনিয়া বলেছেন, ‘আমরা চাই ইউক্রেন জয় পাক, কিন্তু একই সেনাদের দ্বারা নয়। আমি দেখছি তাদের জায়গায় অন্যদের দেওয়া উচিত এবং তাদের বিশ্রামও প্রয়োজন। কিন্তু কিছু কারণে অন্যরা এটি বুঝছেন না। এছাড়া যেসব নারী বাড়িতে রয়েছেন তাদের শক্তিশালী হতে হয়েছে। কিন্তু কিসের মূল্যে আমরা শক্তিশালী হয়েছি?’

যুদ্ধ প্রায় দুই বছরে গড়ানোর পর ইউক্রেনের অনেক মানুষ বলছেন, তারা যেমনটি মনে করেছিলেন এ যুদ্ধ সেটি থেকে অনেক দীর্ঘ হচ্ছে। এমনকি কেউ কেউ বলছেন যুদ্ধ দীর্ঘ হলেও; তারা যে জয়ী হবেন সে নিশ্চয়তা নেই।

দীর্ঘ সময় ধরে চলা যুদ্ধে অস্থির হয়ে যাওয়া আন্তোনিয়ার মতো ২৫ হাজার মানুষ প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির কাছে পিটিশন দাখিল করেছেন। তারা দাবি করেছেন, এমন অনির্দিষ্টকালের জন্য তাদের স্বামী বা আত্মীয়-স্বজনরা যুদ্ধ করতে পারেন না। তাদের একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা বেধে দেওয়া উচিত।

চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে বহুল প্রতিক্ষীত পাল্টা আক্রমণ শুরু করে ইউক্রেনীয় সেনারা। কিন্তু এতে তারা কোনো ব্রেকথ্রু বা বড় সাফল্য পায়নি। বর্তমানে দুই দেশের সেনারাই পরিখা খনন করে অবস্থান নিয়ে আছে।

সম্মুখভাগে যুদ্ধ থেমে থাকলেও; রাশিয়ার হামলা থেমে নেই। গত সপ্তাহে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে সবচেয়ে বড় ড্রোন হামলা চালায় রুশ বাহিনী। অনেক ইউক্রেনীয়র শঙ্কা— শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে রাশিয়ার হামলাও বাড়বে। এতে করে আবারও শীতের মধ্যে বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়বেন তারা।

সূত্র: রয়টার্স

এমটিআই