যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে খালিস্তানপন্থি কর্মীদের হাতে হেনস্তার শিকার হয়েছেন দেশটিতে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত তারানজিৎ সিং সান্ধু। তিনি নিউইয়র্কের একটি গুরুদুয়ারায় যাওয়ার পথে এ ঘটনা ঘটে।

এসময় খালিস্তানপন্থি কর্মীরা তাকে চলে যেতে বাধ্য করেন। মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম দ্য ডন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খালিস্তানপন্থি কর্মীরা নিউইয়র্কের একটি গুরুদুয়ারায় যাওয়ার সময় যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত তারানজিৎ সিং সান্ধুকে হেনস্তা করেছেন। এসময় তারা তাকে চলে যেতে বাধ্য করেন।

এদিকে রাষ্ট্রদূতকে হেনস্তার ঘটনায় বেশ কিছু ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। এসব ভিডিও ফুটেজে খালিস্তানপন্থি কর্মীদের রাষ্ট্রদূত সান্ধুর মুখোমুখি হতে দেখা যায়। এছাড়া শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জার এবং গুরপতবন্ত সিং পান্নুনের ওপর হামলার বিষয়েও এসময় খালিস্তানপন্থিদের কথা বলতে শোনা যায়।

দ্য ডন বলছে, রাষ্ট্রদূত তারানজিৎ সিং সান্ধু গত রোববার নিউইয়র্কের লং আইল্যান্ডের গুরুনানক দরবার গুরুদুয়ারা পরিদর্শনে যান। শিখ ধর্মের অনুসারীদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎসব গুরুপুরব উদযাপনে অংশ নিতে সেখানে গিয়েছিলেন তিনি।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ১৮ জুন কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার একটি শিখ মন্দিরের পার্কিং লটে খালিস্তানপন্থি শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জারকে হত্যা করা হয়। এরপর গত সেপ্টেম্বরে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এই হত্যাকাণ্ডের জন্য ভারতকে দায়ী করেন।

মূলত নিজ্জার হত্যার ঘটনায় ভারত সরকারের দিকে সরাসরি অভিযোগের আঙুল তোলেন কানাডীয় প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। সেসময় পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, কানাডার গোয়েন্দা সংস্থা শিখ নেতা নিজ্জারের হত্যার সাথে ভারত সরকারের সংশ্লিষ্টতার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ খুঁজে পেয়েছে।

এরপর গত সপ্তাহে প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমস জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে সম্প্রতি আরেক শিখ নেতা গুরপতবন্ত সিং পান্নুনকে হত্যার আরেকটি ভারতীয় চক্রান্ত নস্যাৎ করে দিয়েছে ওয়াশিংটন।

এ বিষয়ে গত বুধবার হোয়াইট হাউস জানায়, আমেরিকান মাটিতে এই ধরনের হত্যা প্রচেষ্টাকে তারা ‘অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে’ নিয়েছে এবং ভারত সরকারের ‘সর্বোচ্চ স্তরে’ বিষয়টি উত্থাপন করেছে।

আর এরপরই নিউইয়র্কে ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে হেনস্থার ঘটনা ঘটল। নিউইয়র্কের লং আইল্যান্ডের ওই গুরুদুয়ারার ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, শিখ আন্দোলনকে দমন করার বিষয়ে ভারতের প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছেন বিক্ষোভকারীরা। রাষ্ট্রদূত সান্ধু যখন গুরুদ্বার থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন তখন একজন প্রতিবাদকারীকে খালিস্তানি পতাকা তুলতেও দেখা যায়।

গুরপতবন্ত সিং পান্নুন এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘রাষ্ট্রদূত সান্ধু তার সফর বাতিল করে এবং হিকসভিল গুরুদ্বার থেকে দ্রুত, বিব্রত ও খালিস্তানপন্থি শিখদের হত্যা প্রচেষ্টা সম্পর্কে উত্থাপিত প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে পালিয়ে যান।’

তিনি আরও বলেন, ‘পলায়নকারী রাষ্ট্রদূতের অসংলগ্ন উত্তর থেকে’ এটা স্পষ্ট যে, ‘খালিস্তান গণভোট বন্ধ করতে ভাড়াটে সৈন্যদের ব্যবহার করছে ভারত’। তিনি আরও বলেন, ‘আমাকে হত্যা করার জন্য ভারতের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও খালিস্তান গণভোট অব্যাহত থাকবে এবং আগামী বছরের ২৮ জানুয়ারি ক্যালিফোর্নিয়ার সান ফ্রান্সিসকোতে আমেরিকান পর্ব শুরু হতে চলেছে।’

দ্য ডন বলছে, খালিস্তানপন্থি কর্মীরা ঘটনার দিন ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন- তিনিও পান্নুনকে হত্যার ব্যর্থ প্রচেষ্টায় জড়িত ছিলেন কিনা।

গুরুদুয়ারায় খালিস্তানপন্থি শিখদের নেতৃত্বদানকারী হিম্মত সিং দাবি করেছেন, নয়াদিল্লি হরদীপ সিং নিজ্জারকে হত্যা করেছে। নিহত ওই শিখ নেতা কানাডার সারে গুরুদুয়ারার সভাপতি এবং কানাডায় খালিস্তান গণভোট আয়োজনের সমন্বয়কারী ছিলেন।

ইস্ট কোস্ট কোঅর্ডিনেশন কমিটির প্রধান হিম্মত সিং আরও বলেন, ‘আমি শুধু রাষ্ট্রদূত সান্ধুর কাছ থেকে এই উত্তরই চেয়েছিলাম যে, ভারত কেন বিশ্বব্যাপী খালিস্তান গণভোট বন্ধ করার জন্য সহিংসতাকে ব্যবহার করছে।’

টিএম