ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদ
বয়কটের ডাক, আরব বিশ্বে পশ্চিমা পণ্যের বিক্রিতে ধস
ফিলিস্তিনের গাজায় দখলদার ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পশ্চিমা পণ্য বয়কটের ডাক দেওয়া হয়েছে। এতে মিসর, জর্ডান, কুয়েত এবং মরক্কোর সাধারণ মানুষ ব্যাপক সাড়া দিয়েছেন। যার প্রভাবে বেশ কয়েকটি পশ্চিমা পণ্যের বিক্রিতে ধস নেমেছে।
বার্তাসংস্থা রয়টার্সের প্রতিনিধি কয়েকদিন আগে মিসরের রাজধানী কায়রোতে ম্যাকডোনাল্ডসের একটি রেস্টুরেন্টে যান। সেখানে তিনি দেখতে পান খালি রেস্টুরেন্টটি পরিষ্কার করছেন একজন কর্মী। রয়টার্সের প্রতিনিধি জানিয়েছেন, কায়রোতে অন্যান্য পশ্চিমা ফাস্টফুড চেইনের শাখাগুলোও এখন খালি অবস্থায় থাকছে।
বিজ্ঞাপন
বড় পশ্চিমা ব্র্যান্ডগুলো এখন মিসর ও জর্ডানে বয়কটের সবচেয়ে বড় প্রভাবটি টের পাচ্ছে। ধীরে ধীরে এখন এটি কুয়েত এবং মরক্কোতে ছড়াচ্ছে। তবে সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে বয়কটের তেমন প্রভাব পড়েনি।
যেসব ব্র্যান্ডের পণ্য বর্জনের আহ্বান জানানো হয়েছে, সেগুলো মূলত ইসরায়েলের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এমনকি কয়েকটি ব্র্যান্ডের সঙ্গে ইসরায়েলের অর্থনৈতিক সম্পর্ক থাকার অভিযোগও রয়েছে।
আরও পড়ুন
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কয়েকটি পণ্যের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে এবং এগুলো পুরোপুরি বর্জনের আহ্বান জানানো হয়েছে। এতে সাড়া দিয়ে দোকানদাররাও সেসব পণ্য সরিয়ে স্থানীয় পণ্য দিয়ে নিজেদের দোকান সাজাচ্ছেন।
রিহাম হামেদ (৩১) নামে কায়রোর এক বাসিন্দা, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের ফাস্টফুড চেইন এবং কিছু পণ্যকে বয়কট করছেন, তিনি রয়টার্সকে বলেছেন, ‘আমি মনে করি যদিও যুদ্ধে এটি বড় কোনো প্রভাব ফেলবে না, কিন্তু অন্য দেশের মানুষ হিসেবে আমরা অন্তত এটি করতে পারি। যেন আমরা অনুভব করতে পারি আমাদের হাত রক্তে মাখা নয়।’
জর্ডানে বয়কটে অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা প্রায়ই ম্যাকডোনাল্ডস এবং স্টারবাকসের শাখাগুলোতে প্রবেশ করছেন। সেখানে তারা যেসব কাস্টমারদের পাচ্ছেন, তাদের উদ্বুদ্ধ করছেন যেন এসব পশ্চিমা ব্র্যান্ডের পণ্য না কেনেন তারা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, বিশ্বের জনপ্রিয় একটি ডিটারজেন্ট দিয়ে কাপড় পরিষ্কার করছেন ইসরায়েলি সেনারা। সেই ডিজারজেন্টও বয়কটের আহ্বান জানানো হয়েছে।
জর্ডানের রাজধানী আম্মানের একটি বড় সুপারশপের ক্যাশিয়ার আহমাদ আল-জারো বলেছেন, ‘কেউ এসব পণ্য কিনছেন না। কাস্টমাররা এরবদলে স্থানীয় পণ্য কিনছেন।’
কুয়েতে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় স্টারবাকস, ম্যাকডোনাল্ডস এবং কেএফসির সাতটি শাখায় গিয়েছিলেন রয়টার্সের প্রতিনিধি। তিনি সবগুলো শাখাই প্রায় খালি পেয়েছেন।
আরও পড়ুন
মরক্কোর রাজধানী রাবাতে অবস্থিত স্টারবাকসের এক কর্মী রয়টার্সকে বলেছেন, এ সপ্তাহে তাদের কাস্টমারের সংখ্যা নাটকীয়ভাবে কমে গেছে।
তবে গতমাসে ম্যাকডোনাল্ডস এক বিবৃতিতে দাবি করেছিল, ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের অবস্থান নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে অসত্য তথ্য ছড়ানো হচ্ছে।
অপরদিকে স্টারবাকস তাদের ওয়েবসাইটে দাবি করেছে, ইসরায়েলি সরকার এবং সেনাবাহিনীর সঙ্গে তাদের আলাদা বিশেষ কোনো সম্পর্ক নেই।
তবে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে একটি পোস্ট দেওয়াকে কেন্দ্র করে স্টারবাকস তাদের ইউনিয়নের শ্রমিকদের শোকজ করেছিল। অপরদিকে ম্যাকডোনাল্ডসের ইসরায়েলি শাখা ইসরায়েলি সেনাদের বিনামূল্যে খাবার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল। এ দুটি বিষয়ই সবার চোখে পড়েছে।
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে মিসরে ম্যাকডোনাল্ডসের কর্পোরেট অফিসের এক কর্মকর্তা বলেছেন, গত বছরের তুলনায় এ বছরের অক্টোবর-নভেম্বর মাসে তাদের বিক্রির পরিমাণ ৭০ শতাংশ কমেছে। তিনি জানিয়েছেন, এখন নিজেদের খরচ মেটাতেই হিমশিম খাচ্ছেন তারা।
সূত্র: রয়টার্স
এমটিআই