চীনের শিশুদের মধ্যে বর্তমানে যে রহস্যজনক শ্বাসতন্ত্রের রোগ শুরু হয়েছে, সেটি সম্পর্কে দেশটির সরকারের কাছে বিস্তারিত তথ্য চেয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। বুধবার  চীনের সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে এ সম্পর্কিত অনুরোধ জানিয়েছে জাতিসংঘের বৈশ্বিক স্বাস্থ্য নিরাপত্তা বিষয়ক এই সংস্থা।

গত বেশ কয়েক দিন ধরেই চীনের শিশুদের মধ্যে একধরনের শ্বাসতন্ত্রের রোগ শুরু হয়েছে, যা আগে কখনও দেখা যায়নি। গত ১৩ নভেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে এই রোগটিকে রহস্যজনক নিউমোনিয়া বলে উল্লেখ করেছে চীনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ন্যাশনাল হেলথ কমিশন।

আন্তর্জাতিক জনস্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ সংস্থা প্রোমেড জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত এই রহস্যময় নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত যেসব রোগী পাওয়া গেছে, তাদের প্রায় সবাই শিশু। চীনের বিভিন্ন শহরে এই রোগের উপস্থিতি শনাক্ত হলেও রাজধানী বেইজিং এবং উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ লিওনিয়াংয়ে আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি, রীতিমতো প্রাদুর্ভাব পর্যায়ের। প্রসঙ্গত, বেইজিং ও লিওনিয়াংয়ের মধ্যে দূরত্ব প্রায় ৮০০ কিলোমিটার।

রোগটিকে রহস্যজনক নিউমোনিয়া বলার কারণ হলো— নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগীরা যেমন শ্বাসকষ্টে ভোগেন, অজানা এই রোগটিতে আক্রান্ত শিশুদের মধ্যেও এ উপসর্গের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা গেছে। তবে নিউমোনিয়ার রোগীদের শ্বাসকষ্ট ছাড়াও কফ ও বুকে ঘড়ঘড় শব্দের মতো উপসর্গ দেখা যায়— আক্রান্ত শিশুদের ক্ষেত্রে তা দেখা যায়নি।

তবে শ্বাসকষ্টের পাশাপাশি উচ্চমাত্রার জ্বরের মতো উপসর্গ রয়েছে আক্রান্ত শিশুদের। এছাড়া শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে আক্রান্ত প্রত্যেক শিশুর ফুসফুসে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ফোসকা পরিলক্ষিত হয়েছে। জলবসন্ত রোগে মানুষের শরীরে যেমন ফোসকা ওঠে, সেসবের সঙ্গে মিল রয়েছে সেগুলোর।

 বুধবার এক বিবৃতিতে ডব্লিউএইচও জানিয়েছে, এই রোগটির সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রথমিক তথ্য পর্যালোচনা করে ধরণা করা হচ্ছে, করোনা সংক্রান্ত বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার জের, ইনফ্লুয়েঞ্জা, মাইক্রোপ্লাজমা নিউমোনিয়া (শিশুদের ক্ষেত্রে সাধারণভাবে যে নিউমোনিয়া দেখা যায়), শ্বাসতন্ত্রের ভাইরাস, করোনার জন্য দায়ী সার্স ভাইরাস— এসবের যে কোনো একটি বা একাধিক কারণ অপরিচিত এই নিউমোনিয়ার উত্থানের জন্য দায়ী।

‘তবে চীন যদি আরও বিস্তারিত তথ্য প্রদান করে, সেক্ষেত্রে এ ব্যাপারে আরও সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারব আমরা,’ বিবৃতিতে বলেছে ডব্লিউএইচও।

প্রসঙ্গত গত অক্টোবরের মাঝমাঝি এক বিবৃতিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছিল, রাজধানী বেইজিংসহ চীনের বিভিন্ন অঞ্চলে ইনফ্লুয়েঞ্জা জাতীয় অসুস্থতার হার বাড়ছে।

অক্টোবর নভেম্বরে ঋতু পরিবর্তনের সময় চীনে স্বাভাবিকভাবেই ইনফ্লুয়ঞ্জা বা সর্দিজ্বরের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পর্যালোচনা অনুযায়ী, গত তিন বছরের তুলনায় চলতি বছর চীনে এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি।

রয়টার্স

এসএমডব্লিউ