রাজধানী বেইজিংসহ চীনের বিভিন্ন শহরের শিশুদের মধ্যে রহস্যজনক নিউমোনিয়া ছড়িয়ে পড়ছে। আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ইনফ্লুয়েঞ্জার বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দিলেও সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে শ্বাসকষ্ট শুরু হচ্ছে তাদের, যা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের বেলায় দেখা যায়।

গত ১২ নভেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে চীনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ন্যাশনাল হেলথ কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশজুড়ে প্রতিদিনই বাড়ছে এই রোগটিতে আক্রান্ত শিশুদের সংখ্যা। করোনাকালে জনগণ যেসব বিধিনিষেধ মেনে চলতেন, অজানা এই নিউমোনিয়ার ছড়িয়ে পড়া রোধ করতেও দেশের লোকজনজকে সেসব বিধিনিষেধ মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন ন্যাশনাল হেলথ কমিশনের কর্মকর্তারা।

জনস্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ বিষয়ক আন্তর্জাতিক নজরদারি সংস্থা প্রোমেড ইতোমধ্যে এক বিবৃতিতে এ বিষয়ক সতর্কবার্তা জারি করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, চীনের শিশুদের মধ্যে বর্তমানে যে নিউমোনিয়া শুরু হয়েছে, সেটির কতখানি ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে— তা এখনও নির্ণয় করা যায়নি।

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে করোনা দেখা দেওয়ার পর সবার আগে বিশ্ববাসীকে এই রোগ সম্পর্কে সতর্কবার্তা দিয়েছিল প্রোমেড।

তাইওয়ানভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল এফটিভি নিউজ বুধবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, রাজধানী বেইজিং এবং উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ লিয়াওনিংয়ে এই রোগের প্রাদুর্ভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে এই দুই অঞ্চলের হাসপাতালগুলোতে এই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের উপচে পড়া ভিড় শুরু হয়েছে বলেও জানিয়েছে এফটিভি নিউজ।

এই রোগটিকে ‘রহস্যময় নিউমোনিয়া’ বলার বড় কারণ হলো— সাধারণ নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে জ্বরের পাশাপাশি কফ, বুকে জমাট বেঁধে থাকা কফের শব্দ এবং সেই জনিত কারণে শ্বাসকষ্ট দেখা যায়।

কিন্তু এখন পর্যন্ত যেসব শিশু এই রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে তাদের অভিভাবকদের মাধ্যমে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য এসেছে, তাদের মধ্যে কফ কিংবা বুকে জমাটবাঁধা কফের মতো কোনো উপসর্গ দেখা যায়নি।

বরং যে দু’টি উপসর্গ দেখা গেছে, সেগুলো হলো— উচ্চমাত্রার জ্বর এবং এবং শ্বাসকষ্ট। শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে আক্রান্ত প্রত্যেক শিশুর ফুসফুসে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ফোসকা পরিলক্ষিত হয়েছে। জলবসন্ত রোগে মানুষের শরীরে যেমন ফোসকা ওঠে, সেসবের সঙ্গে মিল রয়েছে সেগুলোর।

এফটিভি নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লিয়াওনিংয়ের দালিয়ান শহরের শিশু হাসপাতালের লবিতে রীতিমতো ভিড় শুরু হয়েছে এই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশু এবং তাদের অভিভাবকদের। এছাড়া বেইজিং এবং লিওয়াওনিংয়ের ঐতিহ্যগত দেশীয় হাসপাতাল ও অন্যান্য হাসপাতালেও প্রচুর সংখ্যক শিশু চিকিৎসা নিচ্ছে।

বুধবারের বিবৃতিতে জনস্বাস্থ্য নজরদারি সংস্থা প্রোমেড বলেছে, ‘চীনের শিশুদের মধ্যে বর্তমানে যে মাত্রায় অজানা এই শ্বাসতন্ত্রের রোগ ছড়িয়ে পড়ছে, তাকে ব্যাপক প্রাদুর্ভাব বলা চলে। ঠিক কবে থেকে এই প্রাদুর্ভাব শুরু হয়েছে, তা এখনও পরিষ্কার নয়; তবে খুব অল্প সময়ের মধ্যে এত সংখ্যক শিশুর এই রোগে আক্রান্ত হওয়া অস্বাভাবিক।’

এসএমডব্লিউ