ফাইল ছবি

ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার রাজনৈতিক প্রভাব এক ধাক্কায় অনেকটাই খর্ব করেছিল দশ বছর আগের এক গণআন্দোলন। নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে সেসময় প্রায় ১০০ নিরীহ মানুষের মৃত্যু হয়।

রাজধানী কিয়েভের ময়দান এলাকায় সেই জনজোয়ারের চাপে রুশপন্থি শাসকদের বিদায় নিতে হয়। ইউক্রেনের পরবর্তী নির্বাচিত সরকারগুলো তারপর থেকে ইউরোপের ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করে।

অন্যদিকে রাশিয়া ইউক্রেনের বিরুদ্ধে আরও কড়া অবস্থান নিতে থাকে। ২০১৪ সালের হামলায় ক্রিমিয়াসহ ইউক্রেনের পূর্বের কিছু অংশ রাশিয়ার দখলে চলে যায়। আর ২০২২ সালের যুদ্ধ এখনও চলছে।

ময়দান বিক্ষোভের ১০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে ইউরোপের একাধিক নেতা কিয়েভ সফর করেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সরকার পরিষদের প্রধান শার্ল মিশেল ও জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী বরিস পিস্টোরিউস তাদের মধ্যে অন্যতম।

মধ্যপ্রাচ্য সংকট নিয়ে ব্যস্ততা সত্ত্বেও ইউক্রেনের প্রতি রাজনৈতিক ও সামরিক সহায়তায় কোনও ঘাটতি হবে না বলে আশ্বাস দিয়েছেন তারা। ময়দান চত্বরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, আরও সহায়তার অঙ্গীকার ছাড়াও ইউক্রেনের মানুষের প্রতি সংহতি দেখাতে তিনি আবার দেশটিতে এসেছেন।

এসময় পিস্টোরিউস ইউক্রেনের সাহসী সংগ্রামের প্রশংসা করেন। আর জার্মানি ইউক্রেনের জন্য আরও ১৩০ কোটি ইউরোর অঙ্গীকার করেছে।

চলতি সপ্তাহে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন ও ব্রিটেনের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনও কিয়েভ সফর করে আরও সহায়তা ও সংহতির অঙ্গীকার করেছেন। দেশের পূর্বে পাল্টা সামরিক অভিযানে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী প্রত্যাশা অনুযায়ী রাশিয়ার দখল থেকে যথেষ্ট এলাকা উদ্ধার করতে না পারায় যে হতাশা সৃষ্টি হয়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমা বিশ্বের অব্যাহত সহায়তার এই অঙ্গীকার বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে।

এদিকে ময়দান বিক্ষোভের দশ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে রাশিয়ার বিরুদ্ধে সংগ্রাম আরও জোরালো করার ডাক দিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, আজকের যুদ্ধের প্রথম জয় সে সময়েই এসেছিল। সেটা ছিল উদাসীনতার বিরুদ্ধে জয়, সাহসের জয়, মর্যাদার বিপ্লবের জয়।

এসময় ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হওয়ার পথে ইউক্রেনের অগ্রগতি সম্পর্কে সন্তোষ প্রকাশ করেন জেলেনস্কি। মূলত সেই লক্ষ্যে চলতি মাসেই ইইউ নির্বাহী নেতৃত্ব আনুষ্ঠানিকভাবে ইউক্রেনের সঙ্গে আলোচনা শুরু করার পরামর্শ দিয়েছে।

ইইউ সরকার পরিষদের প্রধান শার্ল মিশেল অবশ্য স্পষ্ট করে দিয়েছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নে ইউক্রেনের যোগদানের প্রক্রিয়ায় আরও সময় লাগবে। ডিসেম্বর মাসে সরকার প্রধানরা আলোচনা শুরু করার বিষয়ে যে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নেবেন, তা মোটেই সহজ হবে না বলে তিনি মনে করেন। তবে সেই বাধা দূর করার চেষ্টা চলছে। বিশেষ করে হাঙ্গেরি ও স্লোভাকিয়ার বর্তমান সরকার রাশিয়ার প্রতি নরম মনোভাব নেওয়ায় ঐকমত্য নিয়ে সংশয় রয়েছে।

ময়দান বিপ্লবের দশ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া ছিল অবশ্যই ভিন্ন। ক্রেমলিনের মুখমাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, বিদেশি শক্তির মদতে সে সময়কার সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টা হয়েছিল। সেটা ছিল এক অভ্যুত্থান।

পেসকভ বলেন, ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর রাশিয়া।

টিএম