জর্ডানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রকাশিত এই ছবিতে দেশটির অজ্ঞাত একটি স্থানে সামরিক মহড়ার সময় সৈন্যদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। ছবিটি ২০২২ সালের ৪ সেপ্টেম্বর তোলা

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে আকাশ ও স্থলপথে অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা ১৪ হাজার ছাড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ইসরায়েল সীমান্তে সেনা উপস্থিতি ব্যাপকভাবে বাড়িয়েছে জর্ডান।

একইসঙ্গে জর্ডান নদীর ওপারে ফিলিস্তিনিদের জোর করে ঠেলে দেওয়ার বিষয়েও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে দেশটি। বুধবার (২২ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের সঙ্গে নিজেদের সীমান্তে সেনা উপস্থিতি বাড়ানোর কথা জানিয়েছে জর্ডান। একইসঙ্গে মঙ্গলবার দেশটি সতর্ক করে বলেছে, জর্ডান নদীর ওপারে ফিলিস্তিনিদের জোর করে ঠেলে দেওয়ার যে কোনও ইসরায়েলি প্রচেষ্টা বিদ্যমান শান্তি চুক্তির লঙ্ঘন করবে।

জর্ডানের প্রধানমন্ত্রী বিশের খাসাওনেহ বলেছেন, পশ্চিম তীর থেকে ফিলিস্তিনিদের ব্যাপকভাবে বিতাড়নের বিষয়ে ইসরায়েলকে বাধা দিতে তার দেশ ‘নিজেদের ক্ষমতায় থাকা সব উপায়’ ব্যবহার করবে।

রয়টার্স বলছে, ইসরায়েল-গাজার মধ্যে চলমান সংঘাত জর্ডানের দীর্ঘদিনের শঙ্কাকে আলোড়িত করেছে। মূলত দেশটিতে বিশাল সংখ্যক ফিলিস্তিনি শরণার্থী এবং তাদের বংশধররা বাস করেন। গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় ব্যাপক বোমাবর্ষণ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে করে গাজার ২৩ লাখ মানুষের মধ্যে ১৭ লাখ মানুষই অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

ইসরায়েলের সাথে ১৯৯৪ সালের শান্তি চুক্তির কথা উল্লেখ করে মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী খাসাওনেহ বলেন, ‘যেকোনও স্থানচ্যুতি বা সেই ধরনের কোনও পরিস্থিতি তৈরি করা হলে তা শরণার্থীর ঢেউ সৃষ্টির দিকেই পরিচালিত করবে। জর্ডান এটিকে যুদ্ধ ঘোষণা হিসাবে বিবেচনা করবে এবং তাতে কার্যত শান্তি চুক্তি লঙ্ঘিত হবে।’

খাসাওনেহ আরও বলেছেন, ‘এতে ফিলিস্তিনিদের অধিকার ক্ষুন্ণ হবে এবং জর্ডানের জাতীয় নিরাপত্তাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’

রয়টার্স বলছে, মিশরের পর দ্বিতীয় আরব দেশ হিসেবে ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল জর্ডান। এমনকি ইসরায়েলের সাথে শক্তিশালী নিরাপত্তা সম্পর্কও রয়েছে দেশটির। কিন্তু ইসরায়েলের ইতিহাসে সবচেয়ে ডানপন্থি সরকারের আবির্ভাবের পর থেকে সেই সম্পর্ক ভেঙে পড়েছে।

খাসাওনেহ বলেছেন, ‘ইসরায়েল যদি তার দায়িত্ব ও বাধ্যবাধকতাকে সম্মান না করে এবং চুক্তি লঙ্ঘন করেই চলে তবে শান্তি চুক্তিটি কেবল ধুলোয় পড়ে থাকা একটি কাগজের টুকরোতে পরিণত হবে।’

জর্ডানের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য যে কোনও হুমকি মোকাবিলায় ‘বিকল্প সকল উপায়ই উন্মুক্ত থাকবে’ উল্লেখ করে খাসাওনেহ বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েলের সাথে সীমান্তে সেনা মোতায়েন দেশটির নিরাপত্তা রক্ষার ব্যবস্থার একটি অংশ।

রয়টার্স বলছে, বাসিন্দারা এবং প্রত্যক্ষদর্শীরা গত কয়েকদিনে পশ্চিম তীরের বিপরীতে জর্ডান উপত্যকায় যাওয়ার একটি প্রধান মহাসড়ক ধরে সাঁজোয়া যান ও ট্যাংকের বিশাল বহর দেখেছেন। কর্মকর্তারা বলছেন, যেকোনও পরিস্থিতি মোকাবিলায় সেনাবাহিনী ইতোমধ্যেই সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।

গত ৭ অক্টোবরের পর থেকে ফিলিস্তিনি বেসামরিকদের ওপর ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের ক্রমবর্ধমান হামলার কথা উল্লেখ করে খাসাওনেহ বলেন, পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি পদক্ষেপ ব্যাপক সহিংসতার সূত্রপাত ঘটাতে পারে।

এছাড়া বৃহত্তর সংঘাতের আশঙ্কায় বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতা রোধ করতে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ওয়াশিংটনও।

টিএম