মহাকাশে গোয়েন্দা স্যাটেলাইট উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের কাছে বেশ লোভনীয় অর্জন হবে

মহাকাশে গোয়েন্দা স্যাটেলাইট পাঠিয়েছে উত্তর কোরিয়া। পূর্ব এশিয়ার এই দেশটির দাবি, তারা সফলভাবে একটি সামরিক গোয়েন্দা উপগ্রহ মহাকাশে স্থাপন করেছে। দেশটির সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন নিজেই এই উৎক্ষেপণ পর্যবেক্ষণ করেছেন।

অবশ্য এই ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে প্রতিবেশী দেশগুলো। বুধবার (২২ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মালিগিয়ং-১ নামের স্যাটেলাইটটি সঠিকভাবে কক্ষপথে প্রবেশ করেছে বলে উত্তর কোরিয়ার সরকারি সংবাদমাধ্যম দ্য কোরিয়ান সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সি (কেসিএনএ) জানিয়েছে। 

উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন নিজেই এই উৎক্ষেপণ পর্যবেক্ষণ করেছেন বলেও জানিয়েছে রাষ্ট্রীয় এই বার্তাসংস্থা।

এদিকে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা উত্তর কোরিয়ার এই গোয়েন্দা স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের নিন্দা জানিয়েছেন। উৎক্ষেপণের পর ওই স্যাটেলাইটটি জাপানের ওকিনাওয়া প্রিফেকচারের ওপর দিয়ে প্রশান্ত মহাসাগরের দিকে উড়ে যায়।

অবশ্য স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পর জাপানের ওকিনাওয়া জেলায় বাসিন্দাদের সতর্ক করে অবিলম্বে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে বলা হয়েছিল। প্রায় ৩০ মিনিট পরে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার সেই আদেশ তুলে নেয় জাপান।

অন্যদিকে হোয়াইট হাউস উত্তর কোরিয়ার এই পদক্ষেপটিকে জাতিসংঘের একাধিক রেজুলেশনের ‘নির্লজ্জ লঙ্ঘন’ বলে অভিহিত করেছে। উত্তর কোরিয়া এর আগে চলতি বছর দুইবার সামরিক উপগ্রহ কক্ষপথে স্থাপনের চেষ্টা করে এবং ওই দুবারই ব্যর্থ হয়েছিল। সর্বশেষ এই প্রচেষ্টাটি ছিল পিয়ংইয়ংয়ের তৃতীয় কোনও প্রচেষ্টা।

তবে জাপানের প্রধানমন্ত্রী কিশিদা এই স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের বিষয়ে ‘কঠোর ভাষায়’ নিন্দা করেছেন। তিনি বলেছেন, উত্তর কোরিয়ার কাছে এ বিষয়ে একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

কিশিদা বলেন, ‘যদি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করাই উদ্দেশ্য হয়ে থাকে, তাহলে এ ক্ষেত্রে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি ব্যবহার করা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রাসঙ্গিক রেজুলেশনের স্পষ্ট লঙ্ঘন। এটি অত্যন্ত গুরুতর একটি বিষয় যা আমাদের জনগণের নিরাপত্তা সম্পর্কে আমাদের উদ্বেগ ব্যাপকভাবে বাড়িয়ে দিয়েছে।’

এর আগে মঙ্গলবার উত্তর কোরিয়া জাপানকে জানিয়েছিল, তারা বুধবার থেকে শুরু করে আগামী ৯ দিনের মধ্যে পীত সাগর এবং পূর্ব চীন সাগরের দিকে একটি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা করছে। এটি এই বছর উত্তর কোরিয়ার তৃতীয়বারের মতো গুপ্তচর স্যাটেলাট উৎক্ষেপণের চেষ্টা। এর আগে গত মে এবং আগস্টে রকেট সমস্যার কারণে এই ধরনের প্রচেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবাসিত হয়েছিল।

অবশ্য উত্তর কোরিয়ার সর্বসাম্প্রতিক প্রচেষ্টা সফল হয়েছে কিনা তা স্পষ্ট নয়। উত্তর কোরিয়া প্রায়ই তার ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের বিষয়ে মন্তব্য করে না যতক্ষণ না তার রাষ্ট্রীয় সংবাদপত্রগুলোতে পরের দিন সকালে এ সম্পর্কিত সংবাদ প্রকাশিত হয়।

এর আগে গত বছর উত্তর কোরিয়া বলেছিল, তারা যুক্তরাষ্ট্র এবং তার আঞ্চলিক মিত্রদের কার্যকর সময়ের তথ্য সরবরাহ করতে কক্ষপথে ‘অনেকগুলো’ গোয়েন্দা উপগ্রহ উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা করছে।

উল্লেখ্য, উত্তর কোরিয়া কমপক্ষে দুটি স্যাটেলাইট কক্ষপথে স্থাপন করেছে। এর মধ্যে সর্বশেষটি স্থাপন করা হয়েছে ২০১৬ সালে। কিন্তু ওই দুটি স্যাটেলাইটের কোনোটিই কাজ করছে বলে মনে হয় না।

যদিও পিয়ংইয়ংয়ের দাবি, এই উৎক্ষেপণগুলো উত্তর কোরিয়ার শান্তিপূর্ণ মহাকাশ উন্নয়ন কর্মসূচির অংশ।

টিএম