ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে হাসপাতালে বোমাবর্ষণ করে গাজাবাসীদের মনোবল ভাঙার চেষ্টা করছে ইসরায়েল। এমন মন্তব্যই করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান।

এছাড়া গাজায় ইসরায়েলি হামলাকে ‘বর্বরতা, দস্যুতা এবং রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস’ বলেও অভিহিত করেছেন তিনি। তার অভিযোগ, হামাসের সঙ্গে যুদ্ধের নামে শিশু, নারী ও বয়স্কদের বিরুদ্ধে আধুনিক সব অস্ত্র ব্যবহার করছে ইসরায়েল।

মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।

মূলত ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। টানা দেড় মাস ধরে চালানো এই আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ১৩ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। ইসরায়েলি এই হামলা থেকে বাদ যাচ্ছে না গাজার স্কুল, মসজিদ এমনকি হাসপাতালের মতো স্থাপনাও।

এই পরিস্থিতিতে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের হাসপাতালে বারবার ইচ্ছাকৃত আক্রমণের কথা উল্লেখ করে সোমবার প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বলেছেন, হাসপাতালগুলোতে ইচ্ছাকৃতভাবে বোমাবর্ষণ করে গাজার বাসিন্দাদের মনোবল বা দৃঢ়তা ভাঙার চেষ্টা করছে ইসরায়েল।

এদিন রাজধানী আঙ্কারায় মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর এরদোয়ান বলেন, ইসরায়েল ও তার সমর্থকদের যারা শিশু, নারী ও বয়স্কদের বিরুদ্ধে আধুনিক যুদ্ধের সব হাতিয়ার ব্যবহার করছে তাদের মানবতার বিবেকের সামনে বিচার করা হবে।

তুরস্কের এই প্রেসিডেন্ট বলেছেন, গত ৭ অক্টোবর গাজায় ইসরায়েলের আক্রমণের শুরু থেকে অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডটি মধ্যযুগীয় ক্রুসেড এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মতো নৃশংসতা ও নিষ্ঠুরতা দেখে চলেছে।

এরদোয়ান বলেন, তুরস্কই হলো ‘একমাত্র দেশ’ যাকে ইসরায়েল ইহুদি-বিরোধী বলে আখ্যা দিতে পারে না। তুরস্কের অতীত সময়েও আপনি এমন লজ্জার দাগ দেখতে পাবেন না।

তিনি বলেন, হলোকাস্টের অপমান ইউরোপীয় নেতাদের ঘিরে রেখেছে। তার ভাষায়, ‘গাজায় যা ঘটছে তাতে যদি আমরা প্রতিক্রিয়া না দেখাই, তাহলে আমরা আগামীকাল ধর্মান্ধ দখলদারকে আমাদের নিজেদের ভূমিতে পৌঁছাতে বাধা দিতে পারব না।’

প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বলেন, ‘তাই বলকান থেকে ককেশাস, কৃষ্ণসাগর থেকে ভূমধ্যসাগরের পূর্ব উপকূল পর্যন্ত আমাদের চারপাশে ঘটতে থাকা যেকোনও ঘটনা আমাদের জন্য সরাসরি উদ্বেগের বিষয়।’

আজারবাইজানের অন্তর্গত দক্ষিণ ককেশাস অঞ্চলের নাগোরনো-কারাবাখের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘গাজা আমাদের হৃদয়ে কারাবাখের মতো একই জায়গাই রয়েছে’। সম্প্রতি প্রায় ৩০ বছরের আর্মেনিয়ান দখলদারিত্ব থেকে মুক্ত হয়েছে কারাবাখ।

তুরস্ক গাজার জনগণের জন্য এই অঞ্চলে ৮০০ টন মানবিক সহায়তা পাঠিয়েছে উল্লেখ করে এরদোয়ান বলেছেন: ‘তুরস্ক যখন গাজায় রক্তপাত বন্ধ করতে পদক্ষেপ নিচ্ছে, তখন আমরা পশ্চিমা দেশগুলোর নীতিহীনতা দেখে বিব্রত বোধ করছি।’

তিনি বলেন, গাজার বর্বরতার মুখে বিবেক ও মানবতার কণ্ঠস্বর হওয়ার দায়িত্ব এখন তুরস্কের ওপর। তার ভাষায়, ‘ইসরায়েল খোলাখুলিভাবে পরমাণু অস্ত্র থাকার কথা স্বীকার করছে। তবে এরপরও জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ বা আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা এই বিষয়ে কোনও তদন্ত শুরু করেনি।’

ইসরায়েলি সরকার গর্ভবতী নারী এবং তাদের অনাগত শিশুদের হত্যা করার বিষয়ে গর্ব করে বলেও জানান প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান। একইসঙ্গে গাজায় ইসরায়েলের হামলাকে ‘বর্বরতা, দস্যুতা এবং রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস’ বলেও অভিহিত করেছেন তিনি।

উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর থেকেই গাজায় বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। এছাড়া ইসরায়েলের এই বিমান হামলা থেকে বাদ যাচ্ছে না গাজার কোনও অবকাঠামো। তারা মসজিদ, গির্জা, স্কুল, হাসপাতাল ও বেসামরিক মানুষের বাড়ি-ঘর সব জায়গায় হামলা চালিয়ে আসছে।

ফিলিস্তিনি সরকারের মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি বর্বর হামলায় নিহতের সংখ্যা ইতোমধ্যেই ১৩ হাজার ৩০০ জনে পৌঁছেছে। নিহত এসব ফিলিস্তিনিদের মধ্যে শিশু ও অপ্রাপ্তবয়স্কদের সংখ্যাই সাড়ে ৫ হাজারের বেশি।

এছাড়া হামলায় নিহতদের মধ্যে তিন হাজারেরও বেশি নারী রয়েছেন। ইসরায়েলি হামলায় আহত হয়েছেন আরও ৩০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি।

টিএম