ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু (ফাইল ছবি)

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। টানা দেড় মাস ধরে চালানো এই আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ১৩ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। ইসরায়েলি এই হামলা থেকে বাদ যাচ্ছে না গাজার স্কুল, মসজিদ এমনকি হাসপাতালের মতো স্থাপনাও।

এই পরিস্থিতিতে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আহ্বান জানিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। এমনকি গাজায় চলমান বর্বরতা বিশ্ব আর মোটেই বসে বসে দেখতে পারে না বলেও জানিয়েছে দেশটি।

সোমবার (২০ নভেম্বর) এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, আগামী ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করার জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার।

আফ্রিকার এই দেশটির প্রেসিডেন্সির মন্ত্রী খুম্বুদজো এনতশাভেনি বলেছেন, আইসিসি যদি এটি না করে তবে তা সংস্থাটির বৈশ্বিক শৃঙ্খলা রক্ষায় ‘সম্পূর্ণ ব্যর্থতার’ ইঙ্গিত দেবে।

তিনি বলেন, ‘(গাজায় যা হচ্ছে, তাতে) বিশ্ব কেবল দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতে পারে না।’

মূলত গত ৭ অক্টোবর থেকেই গাজায় বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। এছাড়া ইসরায়েলের এই বিমান হামলা থেকে বাদ যাচ্ছে না গাজার কোনও অবকাঠামো। তারা মসজিদ, গির্জা, স্কুল, হাসপাতাল ও বেসামরিক মানুষের বাড়ি-ঘর সব জায়গায় হামলা চালিয়ে আসছে।

ফিলিস্তিনি সরকারের মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি বর্বর হামলায় নিহতের সংখ্যা ইতোমধ্যেই ১৩ হাজার ৩০০ জনে পৌঁছেছে। নিহত এসব ফিলিস্তিনিদের মধ্যে শিশু ও অপ্রাপ্তবয়স্কদের সংখ্যাই সাড়ে ৫ হাজারের বেশি।

এছাড়া হামলায় নিহতদের মধ্যে তিন হাজারেরও বেশি নারী রয়েছেন। ইসরায়েলি হামলায় আহত হয়েছেন আরও ২৯ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি। ইসরায়েল বলেছে, গাজায় হামলার সময় তারা বেসামরিক হতাহতের সংখ্যা কমানোর চেষ্টা করছে।

তবে খুম্বুদজো এনতশাভেনি বলেছেন, ইসরায়েলি সরকার ‘অধিকাংশ ফিলিস্তিনিদের গাজা থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার এবং ভূখণ্ডটি দখল করার’ চেষ্টা করছে।

উল্লেখ্য, গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে কিনা তা তদন্ত করতে বাংলাদেশ, বলিভিয়া, কোমোরোস এবং জিবুতিসহ দক্ষিণ আফ্রিকা আইসিসির কাছে একটি আবেদন জমা দিয়েছে।

যদিও ইসরায়েল আইসিসির সদস্য নয়, তারা এই আদালতকে স্বীকৃতিও দেয়নি এখন পর্যন্ত। তবে ফিলিস্তিন আইসিসির সদস্য।

এছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকা দীর্ঘদিন ধরেই ফিলিস্তিনের পক্ষে সোচ্চার সমর্থক হিসেবে ভূমিকা রাখছে। দেশটি ইসরায়েল থেকে তার কূটনীতিকদের প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে এবং প্রিটোরিয়ায় ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূতের অবস্থান ‘অসমর্থনযোগ্য’ হয়ে উঠছে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছে।

চলতি মাসের মাঝামাঝিতে কাতার সফরের সময় দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা বলেন, ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনের মধ্যকার সংকট দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের মাধ্যমে নিরসন করা দরকার। যেখানে ফিলিস্তিন একটি পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হবে এবং ইসরায়েল রাষ্ট্রেরও অস্তিত্ব থাকবে।

সেসময় তিনি আরও বলেন, গাজায় গণহত্যা সংঘটিত হচ্ছে এবং আমরা আমাদের অবস্থানটি খুব স্পষ্টভাবে বলেছি যে, আমরা ইসরায়েলি বাহিনীর চলমান হামলার বিরোধিতা করছি। 

টিএম