অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে সংগ্রাম
মুড়িমুড়কির মতো ওষুধ খেলে হিতে বিপরীত হতে পারে। অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধে কাজ হয় না, এমন ব্যাকটেরিয়াও ঘনঘন দেখা যাচ্ছে। এই সমস্যার মোকাবিলা করতে সম্মিলিত আন্তর্জাতিক উদ্যোগের প্রস্তাব দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। বার্ন শহরের এক হাসপাতালের ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিটে দুই রোগীর চিকিৎসা চলছে। তারা অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্ট ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। অর্থাৎ প্রচলিত অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ সে ক্ষেত্রে কাজ করে না।
সেই ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ এড়াতে চিকিৎসাকর্মীরা নিজেদের সুরক্ষার জন্য বিশেষ পোশাক পরেছেন এবং আক্রান্ত রোগীদের আইসোলেশনে রেখেছেন। সংক্রামক রোগ বিভাগের প্রধান তার টিমের সঙ্গে চিকিৎসার বিভিন্ন বিকল্প সম্পর্কে আলোচনা করছেন।
বিজ্ঞাপন
বার্নের হাসপাতালের সংক্রামক রোগ বিভাগের প্রধান ক্রিস্টিনে টুয়র্নহেয়ার বলেন, এখনো পর্যন্ত আমরা রেজিস্টেন্ট প্যাথোজেন কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি। সাধারণত আমাদের ঝুলিতে এমন পদার্থ থাকে, যা কাজে লাগে। কিন্তু কোনো এক সময়ে হয়তো তাতেও কোনো কাজ হবে না। সেটা অবশ্যই ভয়ের বড় কারণ। কারণ তখন আমাদের আবার এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হবে, যখন অ্যান্টিবায়োটিক আদৌ ছিলই না। ফলে আমরা এক ধাক্কায় অনেকটা পিছিয়ে যাব। তখনও পর্যন্ত চিকিত্সাযোগ্য ব্যাকটিরিয়াল সংক্রমণেও রোগীরা আবার মারা যেতে পারেন।
বিশেষজ্ঞরা বিষয়টিকে নীরব মহামারি হিসেবে বর্ণনা করছেন। এমন এক মহামারি যা সবার অলক্ষ্যে বড় আকার ধারণ করছে।
অ্যান্টিবায়োটিক রাউন্ড টেবল নামের গোষ্ঠীর পরিচালকমণ্ডলীর সদস্যদের কাছে এমন প্রবণতা যথেষ্ট উদ্বেগের কারণ। বিজ্ঞান, অর্থনীতি ও রাজনীতি জগতের বিশেষজ্ঞদের এই বেসরকারি সংঘের প্রধানের কাছে একটি বিষয় স্পষ্ট। গোষ্ঠীর প্রধান বারবারা পোলেক বলেন, আমাদের ক্রমাগত নতুন অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কারের প্রয়োজন। সেটা অপরিহার্য। কারণ সমস্যার ধারাবাহিক অবনতি ঘটে চলেছে। সেটা মোটেই আচমকা উধাও হয়ে যাবে না।
কিন্তু নতুন অ্যান্টিবায়োটিকের আবির্ভাব বন্ধ হওয়ার উপক্রম দেখা যাচ্ছে। বেশিরভাগ বড় ওষুধ কোম্পানিই অনেক বছর আগে অ্যান্টিবায়োটিক সংক্রান্ত গবেষণা বন্ধ করে দিয়েছে। ইন্টারফার্মা কোম্পানির উপ-প্রধান হাইনার সান্ডমায়ার বলেন, গত কয়েক বছরে দেখা গেছে, যে সব কোম্পানি বাজারে নতুন অ্যান্টিবায়োটিক এনেছে, তারা সব দেউলিয়া হয়ে গেছে। কেন? কারণ বিক্রি বাবদ আয় খুবই কম। নতুন অ্যান্টিবায়োটিক রিজার্ভ হিসেবে প্রস্তুত রাখতে হয় বলেই এমন অবস্থা।
ইন্টারফার্মা বা অ্যান্টিবায়োটিক রাউন্ড টেবলের কাছে তথাকথিত ইনসেন্টিভ সিস্টেমের মাধ্যমে প্রণোদনাই হলো সমাধানসূত্র। বারবারা পোলেক বলেন, বিশাল ঝুঁকি নিয়ে বিপুল বিনিয়োগের আর্থিক সুফল পাওয়া যাবে, এমন সম্ভাবনা উজ্জ্বল হতে হবে। সেটা এই মুহূর্তে একেবারেই নেই।
এক ধরনের সাবস্ক্রিপশন মডেল এমন প্রণোদনা হতে পারে। প্রস্তুতকারী কোম্পানিকে গবেষণা ও উন্নতির ব্যয় বহন করতে হবে। কিন্তু নতুন অ্যান্টিবায়োটিক সফল হলে রাষ্ট্র নির্দিষ্ট সংখ্যার ওষুধের জন্য বাৎসরিক বোনাস দেবে। তবে কোম্পানিকে সেই অ্যান্টিবায়োটিক সরবরাহের গ্যারেন্টি দিতে হবে। অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্ট স্ট্র্যাটিজির সিমোন গটভাল্ট বলেন, ইনসেন্টিভ সিস্টেমের ক্ষেত্রে বাজারের চলমান প্রক্রিয়া ও প্রচলিত প্রণোদনায় হস্তক্ষেপ করতে হবে। সে কারণে খুব ভালো করে পরীক্ষা করা জরুরি। তাছাড়া নতুন অ্যান্টিবায়োটিক বিশ্ব বাজারের জন্য সৃষ্টি করা হয়। ডেভেলপমেন্টের কাজে বিশাল অংক ঢালতে হয়। সে কারণে অ্যান্টিবায়োটিক এবং ইনসেন্টিভ সিস্টেমের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক স্তরে সমন্বয়ের প্রয়োজন।
রাউন্ড টেবিলের বিশেষজ্ঞরা অন্যান্য দেশের সঙ্গেও সমন্বয় চান। সুইজারল্যান্ড এ কাজে এগিয়ে যাবে, সে বিষয়ে তাদের মনে সন্দেহ নেই। বারবারা পোলেক বলেন, সুইজারল্যান্ড না করলে করবে কে? আমাদের দেশে সেরা মানের গবেষণা হয়। বিশাল ওষুধ শিল্পক্ষেত্রও রয়েছে। অনেক ছোট ও মাঝারি মাপের কোম্পানি এ ক্ষেত্রে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। আমরা সব পূর্বশর্তই পূরণ করি। এবার আমাদের এগিয়ে যাওয়া উচিত।
বার্ন শহরের ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিটে চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মীরা জরুরি ভিত্তিতে মানুষের প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা করেন। ভবিষ্যতেও জীবনদায়ী অ্যান্টিবায়োটিকের ওপর নির্ভর করা যাবে, এটাই তাদের আশা।
এসএস