ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ এনে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) মামলার আবেদন করেছেন ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার বাসিন্দাদের প্রতি সহানুভূতিশীল আইনজীবীদের একটি প্রতিনিধি দল। এই আইনজীবীদের প্রত্যেকই আইসিসিতে কর্মরত আছেন।

মঙ্গলবার প্রতিনিধি দলের পক্ষে আইসিসিতে আবেদন জমা দিয়েছেন গিলেস দেভার্স নামের এক আইনজীবী। দলের চারজন সদস্য এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন।

আবেদন জমা দেওয়ার পর এক সংবাদ সম্মেলনে দেভার্স বলেন, ‘আইসিসি বর্তমানে গাজা উপত্যকায় যুদ্ধাপরাধের তদন্ত করছে। আমরা মনে করি, এই তদন্তের সঙ্গে উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনী পরিচালিত গণহত্যারও তদন্ত করা যেতে পারে।’

‘কারণ, ইসরায়েলি বাহিনী কেবল নির্বিচারে বোমা বর্ষণেই থেমে নেই, বরং যুদ্ধের প্রথম দিন থেকেই তারা গাজায় বিদ্যুৎ-পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে, হাসপাতালে হামলা চালাচ্ছে, লোকজনকে তাদের ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য করছে এবং ত্রাণ ও জ্বালানি প্রবেশে বাধা দিচ্ছে। এসব কর্মকাণ্ড প্রমাণ করে যে ইসরায়েল আসলে গাজার আদি বাসিন্দাদের নির্মূল করতে চাইছে।’

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এই দলের অন্যতম সদস্য এবং বেলজিয়ামের সাবেক সিনেটর পিয়েরে গালান্ডও। বর্তমানে আইসিসির আইনজীবী গালান্ড বলেন, ‘আমরা এখানে মানবাধিকার রক্ষা ও ন্যায়বিচারের জন্য এসেছি।

প্রতিনিধি দলের অপর সদস্য এবং ব্রাসেলসভিত্তিক সংস্থা অ্যালায়েন্স ফর ফ্রিডম অ্যান্ড ডিগনিটির প্রধান আবদেলমাজিদ মারারি বলেন, ‘ইসরায়েল আসলে হামাস দমনের নামে ফিলিস্তিনিদের জাতিগতভাবে নির্মূলের প্রকল্প নিয়েছে। গাজায় যেসব অপরাধ চলছে, সেসব তদন্ত করার পূর্ণাঙ্গ এক্তিয়ার আইসিসির রয়েছে।’

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে যে যুদ্ধ চলছে, তাকে ১৯৫৩ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর ওই অঞ্চলের সবচেয়ে ভয়াবহ যুদ্ধ বলে বিবেচনা করছেন আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকরা। ৭ অক্টোবর গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের অতর্কিত হামলার মধ্যে দিয়ে এই যুদ্ধের সূত্রপাত।

ওই দিন ভোর বেলায় গাজার উত্তরাঞ্চলীয় ইরেজ সীমান্ত এলাকার বেড়া ভেঙে ইসরায়েলি ভূখণ্ডে প্রবেশ করে শত শত হামাস যোদ্ধা। তারপর সেখানে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে শত শত মানুষকে হত্যার পাশাপাশি ২৪২ জন ইসরায়েলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিকদের ধরে নিয়ে যায় যোদ্ধারা।

আকস্মিক এই হামলার জবাবে ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী। তার সাত দিন পর ১৪ অক্টোবর থেকে অভিযানে নামে স্থল বাহিনীও।

মাত্র ৩৬৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের গাজা উপত্যকায় বসবাস করেন প্রায় ২৩ লাখ ফিলিস্তিনি। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণায়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি বাহিনীর গত ৩৭ দিনের বিরতিহীন অভিযানে নিহত হয়েছেন মোট ১১ হাজার ১৮০ জন ফিলিস্তিনি এবং এই নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা ৭ হাজার ৭০০ জনেরও বেশি। এছাড়া ইসরায়েলি বোমার আঘাতে আহত হয়েছেন ২৮ হাজার ২০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি।

সূত্র : আনাদোলু এজেন্সি

এসএমডব্লিউ