গাজা শহরের আল-শিফা হাসপাতালে রোগী ও অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত মানুষদের আশ্রয় নিতে দেখা যাচ্ছে। গত ১০ নভেম্বরের ছবি

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি বিমান হামলায় আরও ১৩ জন নিহত হয়েছেন। উপত্যকাটির খান ইউনিসের একটি বাড়িতে হামলার পর প্রাণহানির এই ঘটনা ঘটে।

এছাড়া ইসরায়েলি হামলায় গাজার আল-শিফা হাসপাতালের কার্ডিয়াক ওয়ার্ড ধ্বংস হয়ে গেছে। এটি গাজার প্রধান ও বৃহত্তম হাসপাতাল। সোমবার (১৩ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

গাজার কর্মকর্তারা রোববার জানিয়েছেন, অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের খান ইউনিসের একটি বাড়িতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় কমপক্ষে ১৩ জন নিহত হয়েছেন।

এর আগের দিন গাজা শহরে জাতিসংঘের একটি কম্পাউন্ডে হামলায় অন্তত ‘বেশ কিছু মানুষ’ নিহত ও আহত হয়েছেন বলে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) জানায়। জাতিসংঘের ওই কম্পাউন্ডে শতাধিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন।

ইউএনডিপি এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘চলমান সংঘর্ষে বেসামরিক নাগরিকদের মৃত্যু ও আহত হওয়ার এসব ঘটনা অগ্রহণযোগ্য এবং এগুলো বন্ধ করা উচিত।’

এদিকে গাজার দুটি বৃহত্তম হাসপাতাল- আল-শিফা এবং আল-কুদস হাসপাতাল উভয়ই বন্ধ হয়ে গেছে। ইসরায়েলি স্নাইপাররা আল-শিফা হাসপাতালের কাছে কাউকে দেখতে পেলেই তাকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়ে যাচ্ছে। হাসপাতালটির ভেতরে হাজার হাজার মানুষকে আটকে রেখেছে ইসরায়েল।

স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলেছেন, ইসরায়েল গাজার প্রধান হাসপাতাল আল-শিফার কাছে আক্রমণ চালিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে সেই হামলা আরও জোরদার করেছে। হাজার হাজার ডাক্তার, রোগী এবং বাস্তুচ্যুত মানুষ এখানে আটকা পড়েছেন।

আল-শিফা হাসপাতালের পরিচালক মুহাম্মদ আবু সালমিয়া বলেন, বিদ্যুৎ ও অক্সিজেনের অভাবে নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে চিকিৎিসাধীন দুই রোগী মারা গেছেন। তিনি বলেন, হাসপাতালে জ্বালানি সংকট অব্যাহত থাকলে বাকিদেরও মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে।

আরব নিউজ চ্যানেলকে তিনি বলেছেন, ‘এই বিপর্যয়কর পরিস্থিতি চলতে থাকলে আইসিইউ-তে থাকা সকল রোগীই মারা যাবে।’

আল-শিফা হাসপাতালের অভ্যন্তরে থাকা প্রত্যক্ষদর্শীরা বার্তাসংস্থা এএফপিকে বলেছেন, গত শনিবার সারা রাত হাসপাতালের চারপাশে ‘ব্যাপক লড়াই’ হয়েছে। এমনকি বিমান হামলার ফলে হাসপাতালের কার্ডিয়াক ওয়ার্ড ধ্বংস হয়ে গেছে বলেও গাজার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হওয়ার পর হাসপাতালের নবজাতক ইউনিটে ইনকিউবেটর বন্ধ হয়ে গেছে। সেখানে প্রায় ৪০ টি শিশু এবং অন্যদের জরুরি যত্ন নেওয়ার জন্য ভেন্টিলেটর রয়েছে।

ডক্টরস উইদাউট বর্ডারের সার্জন মোহাম্মদ ওবেইদ সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা একটি অডিও বার্তায় বলেছেন, আল-শিফা হাসপাতালের নবজাতক ইউনিটে ইনকিউবেটরগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে দুটি শিশু মারা গেছে।

দক্ষিণ গাজা উপত্যকার খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালের ডাক্তার মোহাম্মদ কান্দিলের সঙ্গে আল-শিফা হাসপাতালের সহকর্মীদের যোগাযোগ রয়েছে। তিনি বলেছেন, ‘আল-শিফা হাসপাতালটি এখন আর চালু নেই, সেখানে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না, কাউকে বাইরে যেতেও দেওয়া হচ্ছে না।’

রয়টার্সকে তিনি আরও বলেন, কেউ যদি গাজা এলাকার আশপাশে আহত হন তবে তাকে আমাদের অ্যাম্বুলেন্সে করে আল-শিফা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া যাবে না, তাই আল-শিফা হাসপাতাল এখন পরিষেবার বাইরে।’

টিএম