অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী হামাসের সাথে যুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে ইসরায়েলে মুহুর্মুহু রকেট হামলা চালিয়েছে ইরান-সমর্থিত লেবাননের শক্তিশালী সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। রোববার ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলের মানারা এলাকায় হিজবুল্লাহর এই রকেট হামলায় ইসরায়েলি অন্তত সাত সৈন্য আহত হয়েছেন। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) হিজবুল্লাহর হামলায় সৈন্যদের আহত হওয়ার এই তথ্য জানিয়েছে।

ইসরায়েলের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লেবাননের দক্ষিণাঞ্চল থেকে থেকে মানারা এলাকায় রকেট হামলায় সাত সেনা সদস্য আহত হয়েছেন। আহত সব সেনা সদস্যকে চিকিৎসার জন্য স্থানীয় একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলেছে, এক ঘণ্টায় ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে টানা ১৫টি রকেট নিক্ষেপ করেছে লেবাননের হিজবুল্লাহ।

একই সময়ে লেবানন থেকে ছোড়া চারটি প্রজেক্টাইলকে আটকে দিয়েছে ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আয়রন ডোম। আরও কয়েকটি প্রজেক্টাইল উন্মুক্ত স্থানে পড়েছে। তবে এতে কোনো হতাহত কিংবা ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি। সৈন্যরা রকেট নিক্ষেপের উৎস লক্ষ্য করে লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে গোলাবারুদ ছুড়ছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ।

এদিকে, হামাসের বিদেশি শাখার সদস্যরা লেবানন থেকে ইসরায়েলের হাইফা, নাহারিয়া ও এর আশপাশের কয়েকটি শহরে মুহুর্মুহু রকেট হামলা চালানোর দাবি করেছে। একই দিনে হিজবুল্লাহর ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জবাবে দক্ষিণ লেবাননে যুদ্ধবিমান থেকে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) লেবাননে হিজবুল্লাহর অবস্থান লক্ষ্য করে যুদ্ধবিমান থেকে হামলা চালানোর দাবি করেছে।

এর আগে, উত্তর ইসরায়েলের দোভিভ শহরে হিজবুল্লাহর ছোড়া ট্যাংক-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে অন্তত সাত ইসরায়েলি আহত হন। তাদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী জানিয়েছে।

আইডিএফ বলেছে, লেবাননের দক্ষিণাঞ্চল থেকে হিজবুল্লাহর ছোড়া ট্যাংক-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে দোভিভে ৭ জন বেসামরিক আহত হয়েছেন। ক্ষেপণাস্ত্রটি সীমান্তের কাছের দোভিভের উত্তরে কয়েকটি বেসামরিক যানবাহনে আঘাত করেছে।

ইসরায়েলের জরুরি সেবা সংস্থা ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডম বলেছে, উত্তর লেবাননে ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে আহত বেসামরিকদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এছাড়া আরও তিন থেকে পাঁচজনের অবস্থা গুরুতর বলে স্থানীয় চ্যানেল-১২ টেলিভিশনকে জানিয়েছেন সংস্থাটির একজন মুখপাত্র।

চ্যানেল-১২ বলছে, আহতদের উদ্ধার করে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছে। সেখানে তাদের চিকিৎসা চলছে। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী ক্ষেপণাস্ত্রের উৎস লক্ষ্য করে লেবাননের দক্ষিণে কামানের গোলা ছুড়েছে বলে জানিয়েছে।

আইডিএফ বলেছে, উত্তর ইসরায়েলের মেনারা এবং ইরন শহরের পার্শ্ববর্তী এলাকায় লেবানন থেকে মর্টারের গোলা নিক্ষেপ করা হয়েছে। ইসরায়েলি বাহিনী এই হামলার জবাবে পাল্টা গোলাবর্ষণ করেছে বলে জানিয়েছে। তবে হিজবুল্লাহর এই হামলায় ইসরায়েলে কোনো হতাহত হয়েছে কি না তাৎক্ষণিকভাবে তা জানায়নি আইডিএফ।

টাইমস অব ইসরায়েল বলেছে, পৃথক এক ঘটনায় ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্তের একটি সামরিক চৌকিতে মর্টারের গোলাবর্ষণ করেছে হিজবুল্লাহ। ইসরায়েলি সৈন্যরা লেবাননের দক্ষিণে হিজবুল্লাহর অবস্থানে পাল্টা গোলা ছুড়েছে।

গত ৭ অক্টোবর হামাস-ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরুর পরদিন থেকেই প্রত্যেক দিন ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর সাথে হিজবুল্লাহর যোদ্ধাদের প্রাণঘাতী সংঘর্ষ চলছে। গাজা উপত্যকায় চলমান যুদ্ধ আঞ্চলিক সংঘাতে রূপ নিতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। ইসরায়েলের সাথে সংঘাতে এখন পর্যন্ত হিজবুল্লাহর ৭০ যোদ্ধা নিহত হয়েছেন। লেবাননের কয়েকজন বেসামরিক নাগরিকও ইসরায়েলি হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন।

তবে উভয়পক্ষের হামলা-পাল্টা হামলা অনেকাংশে সীমান্ত এলাকার মাঝে সীমিত রয়েছে। হিজবুল্লাহর চালানো হামলার বেশিরভাগেরই লক্ষ্যবস্তু ইসরায়েলের সামরিক চৌকি। যদিও শনিবার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী বলেছে, হিজবুল্লাহ সীমান্ত হামলা বন্ধ না করলে গাজার মতো ধ্বংসযজ্ঞের পরিণতি ভোগ করতে পারে বৈরুত।

সূত্র: টাইমস অব ইসরায়েল, রয়টার্স।

এসএস